চোখের জলে `বীর`কে বিদায় সহকর্মীদের
প্রকাশিত : ১৫:০৬, ৯ এপ্রিল ২০১৯
ফায়ারম্যান সোহেল রানার মরদেহ তার কর্মস্থল সিদ্দিক বাজারে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে আনা হয়। কিছুক্ষণের জন্য সহকর্মীদের সোহেলের মুখখানি শেষবারের মতো দেখানো হয়। এসময় সহকর্মীদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরে সোহেলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাড়ি পর্যন্ত তার বিদায় যাত্রায় পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনরা সঙ্গী হয়েছেন।
সোহেল রানার জানাজাসোহেলের জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খান, এনটিএমসির ডিজি জিয়াউল আহসান উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সোহেলের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছি। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন সোহেল রানা। এই স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বজলুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলেটার মুখের দিকে আমি তাকাতে পারছি না। আমরা সঙ্গে সে কাজ করতো। ঘটনার দিন আমার সঙ্গেই এফআর টাওয়ারে গিয়েছিল।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি সোহেলের বাবা, মা ও ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।’
ফায়ারম্যান হাসান বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে অনেকদিন কাজ করেছি। কখনও ভাবতে পারিনি সোহেল এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। সোহেল খুব ভালো ছিল, কম কথা বলতো, কিন্তু সবার সঙ্গে মিশতো।’
সোহেল রানার ছোট ভাই উজ্জল মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তিনি ছোট বেলা থেকেই মানুষের জন্য কাজ করতো, পরোপকারী ছিল। ভাই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে এজন্য আমরা গর্বিত। আমরা চাই সবাই যেন তার মতো দেশের জন্য কাজ করতে পারি। আমার ভাইয়ের যদি কোনও ভুল-ত্রুটি থাকে তাহলে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। দোয়া করবেন সে যেন জান্নাতবাসী হয়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে আমরা পথে বসে গেছি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী যাতে আমাদের পরিবারের প্রতি সুদৃষ্টি দেন।’
বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আটকে পড়া লোকজনকে লেডার নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলেন সোহেল। লেডারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক ওঠায় সোহেল লেডারের দাঁড়ানো জায়গা থেকে সরে সিঁড়িতে চলে আসে। চালক যখন ছোট করে নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে আসছিলেন, তখন তিনি লেডারে চাপে পড়েন। এতে তার পা ও পেটে আঘাত পায়। তাকে প্রথমে কুর্মিটোলা, পরে সিএমএইচে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন