ছাত্র সংসদ নির্বাচন: কী ভাবছেন ছাত্রনেতা-শিক্ষার্থীরা?
প্রকাশিত : ১৩:০০, ৯ অক্টোবর ২০১৮
১৯৯০ সালের পর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি৷ একে একে বন্ধ হয়ে গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনও৷ এ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রনেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা জেনে নিন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস মনে করেন, দীর্ঘ দিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় দেশে নেতৃত্বের সঙ্কট দেখা দিচ্ছে৷ বলছেন, ‘আমরা চাই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক এবং সেখান থেকে নেতা তৈরি হয়ে তারা দেশের কাজে লাগুক৷’ নির্বাচন না হওয়ার ব্যর্থতার দায় ছাত্র সংগঠনগুলোকেও দিতে চান তিনি৷ তবে তাড়াহুড়ো না করে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে তিনি৷
ঢাবির ছাত্রদল সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ এভিন। এই নেতার মতে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে৷ তবে ডাকসু নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের দাবি তার৷ তিনি বলছেন, ‘নির্বাচন করলে সেটা হবে একতরফা৷ তাই সরকারের ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার সদিচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব দলের ছাত্রদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷’
ঢাবির ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলছেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররা সিনেটে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে তাদের অংশগ্রহণ করার কথা৷ কিন্তু গত ২৭ বছর ধরে সিনেটে যে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা, তা নেই৷ ফলে আমরা মনে করি, এখনকার যে সিনেট, তা সম্পূর্ণ অবৈধ৷’
ঢাবির বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি উল্লাহ মনে করেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য মূলত ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন৷ এই যে ঢাবির ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, সেজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই৷ তবে তার আগে হলগুলোতে সকল দলের শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে৷’
ঢাবির সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় দেশে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকছে, তখন সেই দলের ছাত্র সংগঠনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে একটা দখলদারিত্বের পরিবেশ তৈরি করে রাখছে৷ এর মধ্য দিয়ে ছাত্রদের অধিকার আদায় কিংবা মত প্রকাশ করার কোনেও জায়গা থাকছে না৷ অন্যদিকে, প্রশাসন ছাত্রদের মতামত ছাড়াই অনেক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে, যেগুলো ছাত্রদের পক্ষে যাচ্ছে না৷’
ঢাবির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র রামীম খানের মতে, ছাত্র সংসদ মূলত ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কোনেও প্রতিনিধি থাকবে না, আমার হয়ে কথা বলার মতো কেউ থাকবে না৷ সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সেখানে খুবই অসহায়৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমার মৌলিক দাবি৷
ঢাবির আইন বিভাগের ছাত্র ফাহিম শিহাব রেওয়াজ মনে করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে৷ জাতীয় রাজনীতিতে যেমন সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট্ট একটি গণ্ডির ভেতরেও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নেই৷ সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্যও ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি৷
ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র সৈকত আরিফ মনে করেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনেও বিকল্প নেই৷ নেতৃত্ব তৈরির জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অতি জরুরি৷ এখন যারা দেশের শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু উঠে এসেছেন ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকেই৷ মাঝে দীর্ঘ সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল না বলে দেশে কিন্তু নেতৃত্বের অভাব শুরু হয়ে গেছে৷ তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আমরিন বলছেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় কলেজকে প্রাণহীন মনে হয়৷ এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কলেজ প্রশাসন থেকে আমরা আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলোও আদায় করতে পারি না৷ এতে করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের বিঘ্ন ঘটে৷ আমরা তাই চাই, শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠুভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক৷
সিলেট এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র অনিক চন্দ মনে করেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দাসত্বের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েছে৷ এছাড়া হলগুলোতেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র নেতাদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকে বলে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষুন্ন হয়৷
একে//
আরও পড়ুন