ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্রলীগের কমিটিতে কী সেই ‘চমক’

প্রকাশিত : ১৪:৫৬, ১২ মে ২০১৮

ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে ‘ব্যতিক্রমী চমক’ আসছে। ওবায়দুল কাদেরসহ বহু নেতা বিষয়টি বলে আসছিলেন। বিষয়টিকে গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্য, যা দিয়ে পাঠক-শ্রোতার দৃষ্টি নিবন্ধ রাখার কৌশল বলে ধরে নিয়েছিল অনেকে। তবে ছাত্রলীগের সম্মেলনে শীর্ষ দুই পদে নেতৃত্ব ঘোষণার ক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে চমকের সত্যতা ততই প্রমাণ হচ্ছে। গোটা সম্মেলনস্থলজুড়ে এখন সবার মুখে মুখে কী সেই ‘চমক’। গতকাল দিনভরও সেই ‘চমক’ নিয়েই কাউন্সিলর বা ডেলিগেট নয়, বরং মাঠ পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদের আলোচনা করতে দেখা গেছে। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যখন জানালেন যে, ছাত্রলীগে তার পছন্দের প্রার্থী আছে। তার এ কথার পর ‘চমক’ আরও জোরালো হয়।

কী সেই চমক এমন প্রসঙ্গে আলাপ হয় জেলা পর্যায় থেকে সম্মেলনে আসা এক কাউন্সিলরের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রধান দুটি পদ থেকে একটি পদ সনাতন ধর্মাবলম্বী থেকে আসার সম্ভাবনা বেশী। নানা কারণে সেটাই মনে হচ্ছে। কে হতে পারেন তিনি, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করতে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি আদিত্য নন্দী এক্ষেত্রে একমাত্র আলোচিত মুখ।

এই কাউন্সিলরের সঙ্গে সুর মেলালেন আরক ডেলিগেট। তারাও মনে করছেন ধীরস্থির প্রকৃতির আদিত্য রায় নন্দী আসতে পারেন শীর্ষ দুই পদের কোনো একটিতে।

কেউ কেউ বলছেন, ছাত্রলীগ কমিটির এবারের চমক হচ্ছে, একজন নারী শীর্ষ দুই পদের একটিতে আসছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারনী বৈঠকেও এই দাবি উঠে। সেক্ষেত্রে চৈতালী হালদার চৈতী কিংবা কবি সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইসরাত জাহান এশার নাম রয়েছে জোরালো আলোচনায়। এশার সমর্থকরা বলছেন, এশাকে মূল নেতৃত্ব এনে প্রধানমন্ত্রী তার সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের পুরস্কার দিতে পারেন।

কাউন্সিলরদের কেউ কেউ বর্তমান কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রব্বানীর কথা বলছেন। গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে আসা নিয়ে তাদের যুক্তির শেষ নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে গোলাম রব্বানীকে নিয়ে নানা আলোচনা ছিল মাঠে। তবে সম্প্রতি গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর সেই আলোচনা মিইয়ে যায়। যদিও তার সমর্থকরা এখনও হাল ছাড়েননি।

এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা যিনি প্রতিটি কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বর্তমান কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন বিশেষ করে সহ সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদকদের কেউ মূল নেতৃত্বে আসবেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত। সেই হিসেবে আদিত্য নন্দী ও চৈতালী হালদার চৈতির নাম বাদ পড়ে যেতে পারে। তিনি এও যোগ করেন যে, এবার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী প্রথা ভেঙ্গে নেতৃত্ব নির্বাচন করার কথা বলেছেন তাই আদিত্য নন্দী বা চৈতালি হালদার চৈতি- এই দু`জনের মধ্যে যেকোনো একজনের কপাল খুলে যেতে পারে।

চমকের আলোচনায় আছেন আশিকুল পাঠান সেতু, জায়েদ বিন জলিলরাও। এদিকে জায়েদ বিন জলিল, আশিকুল পাঠান সেতু, আল নাহিয়ান খান জয়, তিলোত্তমা শিকদার- এরা প্রথম থেকেই আলোচনায় ছিলেন। তবে সেই আলোচনার গুরুত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এমন একজন সাবেক ছাত্রনেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল দায়িত্বে এসে গেলে তাকে আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা হয় না। আশির দশকে সুলতান মোহাম্মদ মনছুর এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তাছাড়া কেউ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি হয়ে গেলে পরবর্তীতে তাকেও কখনো মূল দায়িত্বে আনা হয়নি। সেক্ষেত্রে বাদ পড়ে যেতে পারেন আলোচনায় থাকা এমন অনেকে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্মরণকালের ইতিহাসে অসীম কুমার উকিল (বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক) ছাড়া আর কেউ সনাতন ধর্ম থেকে ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে আসেননি। সাবেক সহ সভাপতি বলরাম পোদ্দার পর পর দু`বার সহ সভাপতি থাকলেও সভাপতি হওয়ার ভাগ্য জোটেনি তার। সেই বিবেচনায় এবার কেউ সনাতন সম্প্রদায় থেকে আসবে কিনা তা নিয়ে চলছে নানা যোগ বিয়োগ।

ছাত্রলীগের আরেক সাবেক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে চলতি কমিটির সহ সম্পাদক, উপ সম্পাদক বা সদস্যদের মধ্য থেকে মূল নেতৃত্ব আসেন। এবারো তেমনটি মনে হলেও শেষ মুহুর্তে তারাও ছিটকে পড়বেন। কেউ বয়সের ফাঁদে পড়ে, কেউ ‘চমকের’ ফাঁদে পড়ে।

তাহলে, প্রধানমন্ত্রী আস্থা রাখবেন কার উপর? এমন প্রশ্নে সেই ছাত্রনেতা দাবি করেন, এমনও হতে পারে যারা শখ করে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বা নিজেরাই সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আশা রাখেন না, এমন কেউ হয়তো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক হয়ে যেতে পারেন। অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজের অধিকারী এমনও কেউ হতে পারেন যার নাম ইতোমধ্যে কোনো আলোচনায় আসেনি। বর্তমান কমিটির স্কুল ছাত্র বিষয়ক উপ সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত বা এমন দু`জন একেবারে অনালোচিত মুখও চলে আসতে পারে মূল নেতৃত্বে। বা শেষ সময়ে এরাই হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ।

তবে যে যাই বলুক না কেন অনালচিত মুখ থেকে নেতৃত্ব নির্ধারিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়, এমন কথাই ঘুর পাক খাচ্ছে বাতাসে। সেক্ষেত্রে ১৯৯২ সালের সম্মেলনে মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী ও ইকবালুর রহিমের উদাহরণ টানছেন অনেকে।

 সব কিছু ঠিক থাকলে কিছুক্ষণ পরেই সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মূল নেতৃত্ব নির্ধারণ নিয়ে বৈঠকে বসেছেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। হয়তো বৈঠক থেকে বের হয়েই সব প্রতীক্ষার অবসান ঘুচাবেন তারা।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি