ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রিয় লন্ডনে অপ্রিয় অভিজ্ঞতা: (পর্ব-২)

ছারপোকা

প্রকাশিত : ১৯:২০, ২৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২১, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

কিছু বাংলাদেশি ব্রিটেন থেকে দেশে আসার সময় এক ধরনের লোশনের ডিব্বা আনে। এই লোশন মাখলে নাকি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়। বিমান থেকে নামার আগেই কারও কারও দেখা যায় সেই লোশন গায়ে মাখতে। কারণ আর একটু পরেই তো দেশের মশার কবলে পড়তে হবে। বছর বিশেক আগে যে পৈত্রিক ভিটায় মশার কামড়ে ঘুম হতো না। এখন সেখানেও সেই লোশন ছাড়া এই সব বাংলাদেশিরা ঘুমাতে পারে না। এমনকি লোশন মেখে বাবা মায়ের কবরও নাকি জিয়ারত করতে দেখা যায়।

অথচ ব্রিটেনে ছারপোকা যে একটি বড় সমস্যা-সেটি কেউ মুখেই আনে না। ব্রিটেনে হয়তো মশা নেই। কিন্তু তাদের আছে ছারপোকা। সেখানে অসংখ্য বাঙালি পরিবার বছর ভর ছারপোকার অসহ্য যন্ত্রনা ভোগ করেই রাতে ঘুমাতে যায়। তাও কি যে সে ছারপোকা? দেখলে মনে হবে যেনো আমাদের দেশের একেকটি সাদা খরগোশের বাচ্চা।

এমনিতেই কাউন্সিলের যে সব বাসাগুলোয় দু’জন থাকার কথা, সেখানে গাদাগাদি করে বাস করে আট দশজন। তারপরও দেখা যায় টয়লেটের ভেতর ফাঁকা জায়গাটিতেও একটা বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে সারা বছর একটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে বাসার ভেতর। বছরের পর বছর কম্বল বালিশ ধোয়া দূরের কথা, সামান্য রোদ্রে দেওয়ার ব্যবস্থা সেখানে নেই। একবার কারও বাসায় ছারপোকার দৌরাত্ম্য বাড়লে বাসার সমস্ত আসবাবপত্র ফেলে দিয়ে, ধুয়ে মুছে নতুন করে সাজানো ছাড়া বিকল্প থাকে না।

আর এই ছারপোকা নিধনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলগুলোর একটা জমজমাট ব্যবসা রয়েছে। তারা যদি কোনভাবে জানতে পারে, উমুকের বাসায় ছারপোকার পয়দা হয়েছে তারা নোটিশ দিয়ে ঠিকই একদিন বাসায় হাজির হয়ে যাবে। আর ওইদিন নাওয়া খাওয়া বন্ধ। দিনভর চলবে ছারপোকা উচ্ছেদের ধূমধাম সব আয়োজন। মনে করছেন সেটি বিনামুল্যে? নারে বাপু, কাজ শেষে কাউন্সিল প্রতিনিধির কাছে গুণে গুণে পরিশোধ করতে হবে ২০০ থেকে ৪০০ পাউন্ড। যা কারও কারও সারা মাসের সঞ্চয়ের চেয়েও বেশি।

পুনশ্চ: মশা কিন্তু অধিকতর ভদ্র এবং সহজে দমনীয়। মশা যা করে চোখের সামনেই করে। ছারপোকার তুলনায় মশা কম মুনাফেক। ছারপোকা যেমন চরম অভদ্র তেমন চালাক। দিনের বেলা এদের দেখবেন না। দিনে মনে হবে ওরা নেই। কিন্তু রাতে ঠিকই নানা দিক থেকে হানা দিতে শুরু করবে। তাই কথায় কথায় নিজ দেশকে হেয় করে ব্রিটিশ ব্রিটিশ করার আগে, ছারপোকার কু্টুস কুটুস আচরণের কথা বাংলাদেশিরা একটু হলেও যেনো মনে রাখে।

লেখক: সিইও এন্ড লিড কনসালট্যান্ট, গ্লোবাল গ্লোবাল স্টাডি কনসালটেন্সি 

(লন্ডন অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত)


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি