ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

ছুলি মেছতার চিকিৎসায় আকন্দ গাছ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০০, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

আকন্দ একটি ওষুধী গাছ। এর রয়েছে অনেক গুণ। এই গাছ ব্যবহার করে নানাবিধ অসুখ থেকে আরোগ্য লাভ করার সুয়োগ রয়েছে। এই গাছের গুনাবলি তুলে ধরেছেন ড. তপন কুমার দে তার ‘বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় গাছ-গাছড়ার’ বইয়ে। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

 

ছুলি, মেছতা, একজিমা ও চর্মরোগ, ফোলাতে, বিছের কামড়ে, কানের যন্ত্রণায়, রক্ত আমাশয়ে, গেঁটে বাত হলে, ঠাণ্ডা, কাশি ও অজীর্ণ, গোদ রোগে, মশা ও ইঁদুরের উৎপাতে, হাঁপানি রোগের চিকিৎসায়, অজীর্ণ ও অম্লরোগে, অর্শ রোগে, পুঁজ সৃষ্টি বন্ধ করতে, দংশিত স্থানেও ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়।

 

ওষুধী ব্যবহার-

১. ছুলি ও মেছতা- বর্ষায় অনেকের সারা গা ছুলিতে ভরে যায়। আবার বয়সকালে গালে ব্রণ হলে তা থেকে প্রথমে কালো দাগ পড়ে, পরবর্তীতে বিরাট অংশ জুড়ে কালো ছাপ পড়ে যায়। কুমরী মেয়েদের এ দাগ দেখা দিলে মুখের শ্রী ও লাবন্য নষ্ট হয়ে যায় এবং বিয়ের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে । তিন গ্রাম হলুদের গুঁড়ো এবং আকন্দের পাঁচ থেকে ছয় ফোঁটা আঠা মিশিয়ে গোসলের এক ঘণ্টা আগে লাগালে দু’টো রোগের উপকার হবে।

একজিমা ও চর্মরোগ- ১৬ ফোঁটা আকন্দের আঠা, সমপরিমাণ তিল-তেল এবং এক ফোটা হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে মলম তৈরি করে রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র একবার লাগালে নিশ্চিত সেরে যাবে।

ফোলাতে- যেকোন কারণে দেহের কোনো অংগ ফুলে গেলে সে স্থানে প্রথমে আকন্দ পাতা দিয়ে ঢেকে তারপর কাপড়ে জড়িয়ে বেঁধে রাখলে ফোলা কমে যায়।

 

বিছের কামড়ে- প্রথমে ধারালো ব্লেড বা ছুরি দ্বারা বিছের হুল বের করে নিতে হবে। এর পর সে জায়গায় আকন্দের আঠার প্রলেপ দিলে নিশ্চিত উপশম হবে।

কানের যন্ত্রণায়- আকন্দ পাতায় পুরনো গাওয়া ঘি মাখিয়ে সে পাতাকে আগুনে ভালোভাবে সেঁকে নিতে হয়। এর পর পাতাকে নিংড়ে কানে দিয়ে তুলো দ্বারা কান বন্ধ করা দরকার। মাত্র দুদিন প্রয়োগ করলেই যন্ত্রণার উপশম হবে।

রক্ত আমাশয়ে- ৫ গ্রাম আকন্দ গাছের শেকড়ের ছাল, পরিস্কার পানি দিয়ে বেটে, তার পুরো রসটা একটা কাঁচের গ্লাসে রাখতে হবে। এর পর ওই রসে সরষে দানার পরিমাণে আফিম মিশিয়ে সকালে একবার এবং সন্ধ্যায় আরেকবার খেলে রোগী অবশ্যই ভাল হবে। তবে রোগীর সামান্য তন্দ্রাভাব দেখা দিতে পারে এত দুঃচিন্তার কিছু নেই।

গেঁটে বাত হলে- আকন্দ গাছের আঠায় সামান্য সরষে তেল মিশিয়ে মালিশ করলে বা রাতে ঘুমানোর সময় আক্রান্ত অঙ্গের অংশটি আকন্দ পাতা দিয়ে ঢেকে তারপর কাপড়ের ফালি দিয়ে বেঁধে রাখলে রাতের ফুলো এবং যন্ত্রণা দুঠোই কমে যাবে।

ঠাণ্ডা, কাশি ও অজীর্ণ- আকন্দের ফুলকে রোদে ভালভাবে শুকিয়ে তারপর গুঁড়ো করে অজীর্ণে প্রত্যহ দুপুরে ভাত খাওয়ার পর এক চামচ পরিমাণ খেতে হবে। ঠাণ্ডা কাশিতে এক চামচ করে সকাল– সন্ধ্যায় মোট দুবার খাওয়া দরকার।

গোদ রোগে- আকন্দ গাছের মূল ছালকে ভালভাবে বেটে প্রলেপ দিলে গোদ রোগী আরাম বোধ করে।

মশা ও ইঁদুরের উৎপাতে- মশা তাড়াতে ও ইঁদুরের উৎপাত কমাতে শুকনো আকন্দ পাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া দিলে মশা ও ইঁদুরের উপদ্রব দূর হয়।

আকন্দ মূলত হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্যই পরিচিত। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টচার্যের মতে ১৪টি আকন্দ ফুলের মাঝখানের চারনোণা অংশের সঙ্গে ২১টি গোল মরিচ দিয়ে এক সঙ্গে বেটে ২১টি বড়ি করে শুকিয়ে নিয়ে প্রতিদিন সকালে একটি করে খেলে ২১ দিনে অনেকের হাঁপানি রোগের উপশম হয়।

অজীর্ণ, অগ্নি মন্দ্য ও অম্লরোগে সতেজ আকন্দ পাতার সঙ্গে এর আট ভাগের এক ভাগ ওজনের খাঁটি সৈন্ধব লবন হাঁড়ির মধ্যে পুরে মুখ বন্ধ করে আগুনে পোড়াতে হবে (অন্তর্ধুমে পোড়ানো)। তারপর ভিতরের পোড়া কালো মিশ্রনটি গুঁড়া করে আধা গ্রাম করে খাওয়ার পরে পানি দিয়ে খেতে হবে।

আকন্দের মূলের ছাল শুকিয়ে চূর্ণ করে আকন্দের আঠা দিয়ে মুড়িয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। পরে এটিকে বিড়ির পাতায় ঢেকে বিড়ি তৈরি করে বিড়ির মত টানলে হাঁপানি টান লাঘব হয়।

চরক সংহিতার মতে যাদের অর্শের বলি বাইরে বেরিয়ে রয়েছে, তারা ওই পাতার চূর্ণ আগুনে দিয়ে সেই ধুম লাগালে কয়েক দিনের মধ্যেই তা চুপসে যায়।

একটি আকন্দ পাতা পানিতে সিদ্ধ করে ওই পানি দিয়ে দুষিত ক্ষত ধুলে পুঁজ সৃষ্টি বন্ধ হয়।

বুকে সর্দি বসায় হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে এরুপ ক্ষেত্রে বুকে পুরনো ঘি মালিশ করে আকন্দ পাতা গরম করে সেই পাতা দিয়ে সেক দিলে সর্দি উঠে আসে।

দংশিত স্থানে আকন্দের আঠা বা পাতা বেটে লাগালেও যন্ত্রণা কমে যায়।

সাধারণ ব্যবহার- আকন্দের তুলা বালিশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আকন্দের গাছ, ডালপালা গ্রামে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে ।

 

পরিচিতি- আকন্দ একটি মাঝারী অকৃতির গুল্মজাতীয় গাছ। গাছটি ঝোঁপ জাতীয় দুই থেকে তিন মিটার উচুঁ হয়। কাণ্ড কিছুটা শক্ত, কচি ডাল পশমময়, লম্বাকৃতি অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো দেখায়। পাতার আকারের চেয়ে বোঁটা খুবই ছোট হয়। পুষ্পদণ্ড বহু শাখাবিশিষ্ট এবং থোকার আকারে বহু ফুল ফোটে। ফুলের রং ফিকে বেগুনী। ফল ডিম্বাকৃতি এবং পশমময়।

 

এসএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি