ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছোট্ট নাওয়ারের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভালোবাসা

প্রকাশিত : ২২:০২, ২ মে ২০১৯ | আপডেট: ২২:০৭, ২ মে ২০১৯

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বেড়াতে গিয়েছিল ছোট্ট আবনাওয়ার আল হেলালি। সঙ্গে ছিল মা, নানি ও মামা। বুধবার ১লা মে বালিতে ঘুরতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে প্রাণ হারায় ফুটফুটে নাওয়ার। তার মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়ে সবাই।

এরপরের ঘটনা আরও কষ্টের। সন্তানের মৃত্যুতে যখন সবাই দিশেহারা তখন নাওয়ারকে দেশে আনার জন্য ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোন করে। কিন্তু সেই ফোন আর কেউ ধরে না। একের পর এক ফোন দেয়ার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। রিং বাজে কিন্তু সারাদিনে একবারও কেউ ফোনটি ধরে নি। পরিশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 

সেখানকার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবনাওয়ার আল হেলালির লাশ শুক্রবার দেশে এসে পৌঁছাবে।

জানা গেছে, আমেরিকা প্রবাসী নোমান হেলালী ও আজিজা বেগমের একমাত্র ছেলে আবনাওয়ার বিন হেলালি। তাদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায়।

পানি থেকে উদ্ধারের পর স্বজনরা প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে নাওয়ারের লাশ সেখানকার একটি সরকারি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়। এরপর তারা দূতাবাসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাউকে না পেলে পরে বাংলাদেশ থেকে নাওয়ারের নানা শহীদ উল্লাহও জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে অসংখ্যাবার ফোন দেন, তবে কেউ ফোন ধরেননি।

উপায়ান্তর না দেখে শহীদ উল্লাহ বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজের ফেসবুকে নাওয়ারের ছবিসহ একটি পোস্ট দেন।

তিনি লিখেন, ‘আমার এই ছোট্ট নাতি ইন্দোনেশিয়া বেড়াতে গিয়ে বালি দ্বীপে পানিতে তলিয়ে ইন্তেকাল করে। বর্তমানে তার মরদেহ ওখানকার একটি সরকারি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। ওখানে অবস্থানরত শিশুটির মা, নানি ও মামা শোকে কাতর। তারা চেষ্টা করছে জাকার্তায় বাংলাদেশ এম্বাসির সহযোগিতা নিতে। কিন্তু ওয়েবসাইটে (বাংলাদেশ দূতাবাসের) দেয়া ফোন ও মোবাইল উভয় নাম্বারে (+৬২২১৫২৬২১৭৩, +৬২২১২৯০৩৫৭৮৭) বারবার কল করেও তাদের পাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে আমিও ব্যক্তিগতভাবে অনেকবার কল করেছি, ফোন ধরে না, রিং হয়। নিরুপায় হয়ে ইমেইলও পাঠিয়েছি। কোনো খবর নেই।’

তার এ পোস্টটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস এমদাদুল হকের দৃষ্টিতে আসে। তাৎক্ষণিক তিনি শহীদ উল্লাহের কাছে বিস্তারিত সব শুনে বিষয়টি যুক্তরাজ্যে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে অবহিত করেন। নাওয়ারের মৃত্যুর খবরে ব্যথিত হন আবদুল মোমেন। একইসাথে জাকার্তাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ফোন না ধরার খবরে তিনি ক্ষুব্দ হন।

ড. আব্দুল মোমেন সঙ্গে সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোন করেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে দ্রুততার সঙ্গে নাওয়ারের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে নড়েচড়ে বসেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা যোগাযোগ করেন নাওয়ারের পরিবারের সাথে। তার লাশ দেশে আনতে কথা বলেন ইন্দোনেশিয়া কর্তৃপক্ষের সাথেও। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে নাওয়ারের লাশ দেশে আনার অনুমতি মেলে।

এরপর নাওয়ারের নানা শহীদ উল্লাহ ফেসবুকে জানান, শুক্রবার নাওয়ারের লাশ নিয়ে স্বজনরা দেশে আসবেন। দেশে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১টা বেজে যেতে পারে। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি