জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন জরুরি
প্রকাশিত : ১৫:০২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ| অর্থাৎ এখনও ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন। টোব্যাকো অ্যাটলাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৭২ হাজারের বেশি। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়াও সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে মানুষের জীবনের অধিকার রক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এ স্বাক্ষর করেছে এবং সে অনুযায়ী একটি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছে। ২০৩০-টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি (এসডিজি)-এর লক্ষ্যমাত্রা ৩এ এফসিটিসি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার ঘোষণাও দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার আলোকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতা যেমন পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার সুযোগ থাকায় পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অধূমপায়ীদের রক্ষায় আইনটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কারণ ধূমপানমুক্ত স্থানে স্মোকিং জোন থাকলে অধূমপায়ীরা অন্যের ধূমপানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা পায় না। তাই এটি জনস্বাস্থ্যবিরোধী।
গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য মতে, ৪২.৭ শতাংশ (৮১ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কর্মক্ষেত্রে এবং প্রায় ৪৪ শতাংশ (২ কোটি ৫০ লক্ষ) মানুষ গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। এছাড়াও রেস্তোরাঁয় পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪৯.৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। অধূমপায়ীদের সুরক্ষা দিতে ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশ পূর্ণাঙ্গ ধূমপানমুক্ত আইন (‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বাতিলসহ) কার্যকর করেছে।
জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) যৌথভাবে ঢাকার ১১৮টি আবাসিক হোটেল ও ৩৫৫টি রেস্টুরেন্ট, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৫৩টি ট্রেনের ওপর একটি গবেষণা চালায়।
এ থেকে জানা যায়, মোট ৫২৬টি নমুনার মধ্যে মাত্র ৪১টিতে (৮ শতাংশ) ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা ডিএসএ পাওয়া গেছে, যার একটিও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে করা হয়নি। গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের ছোবল থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে না এবং এই বিধান চালু রেখে ধূমপানমুক্ত আইন বা নীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।
সুতরাং শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ডিএসএ বাতিল করা প্রয়োজন।
সুতরাং অধূমপায়ীদের রক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাডেজিগনেটেড স্মোকিং জোন বিলুপ্ত করা এখন সময়ের দাবি।
এএইচ