জরিমানা করেও কোম্পানির অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না
প্রকাশিত : ১৯:৩৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
জরিমানা করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনিয়ম ও কারসাজি। কোম্পানির বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ৬৭৬তম সভায় এই জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম. খায়রুল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক শেষে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত বছরে সংগঠিত আট কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় এই জরিমানা করা হয়েছে। ২০১০ সালে ধসের পর এবারের বৈঠকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সতর্ক করা হলো।
বাজারে অস্বাভাবিক লেনদেন ও কারসাজি শনাক্ত করার লক্ষ্যে কমিশন কর্তৃক দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। একটি তদন্ত কমিটি কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. এ সংঘটিত অনিয়ম/কারসাজি ও অন্যটি মুন্নু জুট স্টাফলার লি., মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি., কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস লি., ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেনে অনিয়ম/কারসাজির বিষয়টি তদন্ত করে।
এরমধ্যে কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. এ পরিচালিত তদন্তে মুন্নু জুট স্টাফলার্স, মুন্নু সিরামিক, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, বাংলাদেশ অটোকারস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের শেয়ার লেনদেন ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে ব্রোকারেজটি। এজন্য কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের তত্কালীন এভিপি সাইফুল ইসলামকে ৫০ লাখ টাকা, মো. আলী মনসুরকে ১০ লাখ টাকা, ইয়াকুত জাহানকে সতর্কপত্র ইস্যু করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মুকুল কুমার সাহাকে ১ লাখ টাকা, লিপিকা সাহাকে ২ লাখ টাকা, মো. আব্দুল হালিমকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ভিপি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে ২৫ লাখ টাকা, পদ্মা গ্লাস লি. কে ৫ লাখ টাকা, রহমত মেটাল ইন্ডা. লি. কে ২ লাখ টাকা, আব্দুল কাউয়ুমকে ৫ লাখ টাকা, মরিয়ম নেছাকে ৫ লাখ টাকা, মেসার্স কাউয়ুম অ্যান্ড সন্সকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি পদ্মা ক্যানস অ্যান্ড কালার্স লিমিটেড ইউনিট-২ কে সতর্কপত্র ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
কমিশনের তদন্ত কমিটি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে অনিয়মের বিষয়টি তদন্তকালে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয়দের নিজ কোম্পানির পাশাপাশি মুন্নু সিরামিকের শেয়ার লেনদেনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়। এ কারণে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব মোস্তফা হেলাল কবীরকে ১০ লাখ টাকা, তার স্ত্রী ফউজিয়া ইয়াসমিনকে ১০ লাখ টাকা ও বিনিয়োগকারী কাজি মো. শাহাদাত হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই ইস্যুতে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক ইমাদ উদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, সহকারী মহাব্যবস্থাপক তাইজুদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার সৈয়দ মো. আকবরসহ তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী হাফেজা খাতুন, মবিউর রহমান সরকার ও প্রতিষ্ঠান অহনা কন্সট্রাকশনকে সতর্কপত্র ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
স্টাইল ক্র্যাফটের শেয়ার লেনদেনে অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব ইডমন গুডাকে ২ লাখ ও বিনিয়োগকারী মো. মাহামুদুজ্জামানকে ২ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। একই ইস্যুতে স্টাইল ক্র্যাফটের পরিচালক মাহিন রাব্বানী ও তাহমিনা রাব্বানী, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাক হোসেনসহ সামসুল আলম, অসীম কুমার নাগ, সাবা নাগ ও সোমা নাগকে সতর্কপত্র ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার লেনদেনে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজার আতাউর রহমানকে সতর্ক করার পাশাপাশি সাইফ উল্লাহকে ১০ লাখ টাকা, মো. আব্দুস সেলিমকে ৫ লাখ ও মো. জিয়াউল করিমকে ৫ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
তাছাড়া রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি) লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে অনিয়মের দায়ে বিনিয়োগকারী এএস শহিদুল হক, মো. মিজানুর রহমান ও মো. আব্দুল ওহাব ভুঁইয়াকে সতর্কপত্র ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরকে//
আরও পড়ুন