ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জলচক্র এখানে শেষ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৩, ১০ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৭:০৮, ২১ আগস্ট ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

কালো কুয়াশার নিঃশ্বাসের ভাপে ঠাসা

​মহাগোধূলীর স্বীয় হাতে পাতা রাত

ঢেকে দিচ্ছে নদী, গুঞ্জরিত ভবতীর

আরশের ছায়াপাতে চমকে ওঠে জল।

শববাহিকা ঢেউয়ের ঝিম ধারাপাত

গুণে যায় কত লাশের পরের লাশ

কানকোর মতো খুলে যায় ক্ষতস্থান

বালিকা স্রোতেরা দোলাচ্ছে তাদের চুল।

ঝির ঝির কয়লাগুড়া থতমত এ সন্ধ্যায়

শোকবস্তু কোলে নিশি জাগো গো রসুল।

যেই জল ছায়া রাখে সেই জল স্মৃতিধর

বাতাসের গমনছাপও ধরে রাখে নদী

মাকড়জালের মতো হাওয়ার তন্তুরাশি

ক্ষণিক মুদ্রিত থাকে পানির পাতায়

কৃষির আহ্বানে উঠে আসে মৃত্তিকার কষ

কলঙ্ক লাঘব করাও সনাতন জলধর্ম।

চিতশোয়া নদীর পেটে গাল পেতে

এসব কথাও তো আমি বলেছি:

‘দুঃখভোগের শয়নভঙ্গিমা আর না সহে

বুকের কলস মোর ভ’রে দাও গো সাঁই

রক্ত নিরবধি বয়, নিদয়া তুমিই সহায়’!

৩.

সবই ভেবেছি দরিয়ায় নেমে যেতে যেতে

আর অপেক্ষায় থেকেছি কখন জলশয়ান ছেড়ে

চরের কিনার থেকে ব্রহ্মাণ্ডের ঢাল বেয়ে

আকাশের রণক্ষেত্রে ঢুকে পড়বে কালপুরুষ।

ঘড়ির কাঁটার মতো তার নভো প্রদক্ষিণ

সুবহে সাদিকের দিকে স্থির হবে পুবে,

ঘুরতে ঘুরতে তার তীরের নিশানা

এত এত বায়ুমহলের তলে স্থানু করে দিয়ে

নিমেষে নির্দেশ করে বসবে তিলার্ধ আমাকেই!

৪.

আশ্বিনী ঝড়ের মতো ঘোলা ঢেউ

জাগে যে নদীতে, সে নদী মেঘনা

আকাশের থিয়েটারে বিজলীর ছায়াছবি

বর্জ্র্যধ্বনিতে আসমানি কবিতার নাদ।

স্মৃতিপ্রেরিত বাতাসে নাই আর কেউ

একক নদীতে বহুবাচনিক কত ঢেউ

ঐশী রজ্জু ধরে নক্ষত্রেরা আছে গাঁথা,

কাটা হবে বলে দাগ দিয়ে রাখা গাছ

পলে পলে চালায় প্রশাখা বাড়ানোর কাজ।

আমিও কি ফিরবো না জলে— আদি সরোবরে?

৫.

মোহনায় দেখি তটস্থ তারার চোখ

ভীতিকর ভাবে স্থির; তেতে উঠছে নিশি,

আকাশের অন্ধকার ঝাঁঝরি দিয়ে ছুটে

রাশি রাশি সুতাশঙ্খ সাপ

রশ্মিফলা হয়ে বিঁধছে মেঘনায়,

জোয়ারে ফাঁপছে বঙ্গোপসাগর।

পারে পারে ঘাটপুঞ্জির আলো—

দূরের গ্রামগুলি মাছেদের মতো ঘুমে

মাঝিদের দাউ দাউ চুলা, লৌহ জলযান

ছলচ্ছল দুঃখে সব করছে টলমল।

৬.

ভাগ্যরেখা পেরিয়েও যায় কারো কারো বিধি

বিপৎসংকেত নিয়ে বয়ে চলে লোহার জাহাজ

কফ ওঠা বুড়ো স্টিমার

পুরাকালের ইঞ্জিন বুকে আমার

ধোঁয়ামেঘে চলছি পাড় ঘেঁষে

সুন্দরবনের খাঁড়িতে ছিলাম কিছুকাল

চাঁদপুরের ঘূর্ণিপাক বেয়ে উঠেছি এইমাত্র ।

এসবের কিছুই বলতে পারব না আমি রাতে

পৃথিবীকেও জানাব না অত্যাসন্ন প্লাবনের কথা

ভোরের আগেই কিছু ঘটে যাবে জানি

আকাশ উপচে যাবে এ নদীর জল

ভরে দেবে বিশ্বময় সব ব্ল্যাকহোল।

আবার আসবে আমার সময় ফিরে

কোনো এক নভোকূপে বসে

আবার বানাবো নতুন মানুষ আমি

পৃথিবীর শেষ পলিটুকু দিয়ে।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি