ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে দরকার ১২০ কোটি ডলার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৮, ৩ আগস্ট ২০২৩

‘জলবায়ু অভিযোজন: কৃষিভিত্তিক শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশের সুযোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজন

‘জলবায়ু অভিযোজন: কৃষিভিত্তিক শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশের সুযোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ বিনিয়োগ করলে ১১.৬ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ২০৫০ সাল নাগাদ সুফল মিলবে ৫৯ বিলিয়ন ডলারের।

বুধবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে ‘জলবায়ু অভিযোজন: কৃষিভিত্তিক শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশের সুযোগ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে বৈঠকের আয়োজন করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট, ব্র্যান্ড এবং মার্কেটিং প্রধান বিটপি দাস চৌধুরী তাঁর গবেষণাপত্রে বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ুর ঝুঁকি বাড়ায় ফসলের উৎপাদনশীলতা হারাচ্ছেন কৃষক। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান দিন দিন কমে আসছে। কৃষি খাতে দেশে ৫২ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অবদান কমেছে ৪৮.৫ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৬০ শতাংশ। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি এসে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে। অথচ এখনও ৪১ শতাংশ কর্মসংস্থানই কৃষি খাতে।

গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইউএই, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশসহ ১০টি দেশে বিনিয়োগ প্রয়োজন ৩০.৪ বিলিয়ন ডলার। এর ফলে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ৩৭৬.৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে কৃষিতে। ১০ দেশে যে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুপারিশ করা হচ্ছে, তার মধ্যে ১৩ বিলিয়ন ডলারই কৃষি খাতে। এ ছাড়া শিল্প খাতে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা খাতে ৫.৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের তাগিদ দেওয়া হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে নীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ ভূমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করতে হলে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, উৎপাদন ব্যয় কমাতে হবে এবং প্রতিকূল পরিবেশে চাষ উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সহিষ্ণু স্থিতিস্থাপক কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রশমনে কৃষি এবং নবায়নযোগ্য শক্তির গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি ফল উৎপাদনকারী দেশের একটি। গত ১৮ বছরে ফল উৎপাদন বেড়েছে ১১.৫ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের জিডিপির ১-২ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

আইসিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. কে. আজাদ বলেন, প্রতিনিয়তই আমাদের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ভারতের কারখানার কোনো পানিই বাইরে আসে না, রিসাইক্লিং করা হয়। আমরা সেটা এখনও পুরোপুরি পারছি না। আমাদের দ্রুত এটা করতে হবে, কারণ সামনের দিনগুলোতে পানির বড় সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।

প্যানেল আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন তালুকদার। তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে শুধু উৎপাদন বাড়ালেই হবে না। উৎপাদনের বৈচিত্র্যও বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে হবে।

এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার প্রভাবের জন্য বাংলাদেশের কৃষি খাত বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু সংবেদনশীলতা শুধু ফসলই নয়, ফল, মসলা, বাগান, গবাদি পশু, দুগ্ধ, হাঁস-মুরগি এবং জলের মতো অন্যান্য কৃষিক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে থাকে।

আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘের খাদ্য কৃষি সংস্থার সিনিয়র ন্যাশনাল লিড অ্যাগ্রোনোমিস্ট ড. মো. আব্দুল কাদের, বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী এ এফ এম আসিফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক খরশেদ আলম, ইন্টারন্যাশনাল মেইজ অ্যান্ড হুইট ইমপ্রুভমেন্ট সেন্টারের কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. টি এম আমজাদ বাবু, বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ. ফ. এম আরিফ প্রমুখ।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি