জাতির পিতার কখনো মৃত্যু হয়না
প্রকাশিত : ২৩:৩৫, ১৪ আগস্ট ২০২৩
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলেও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত দুই হাজার দুই শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দু'টি ভূখন্ড এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা-ভাষীদের নিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং ওই রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির জাতিগত বৈষম্য, শোষণ-শাসন, দমন-পীড়ন ও প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিরুদ্ধে বাংলার কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতা, মুটে- মুজুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে তীব্র গনআন্দোলন গড়ে তোলে।
১৯৫২ সালে মাতৃভাষার আন্দোলন, ৫৪' সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬২' এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪' এর স্বাধিকার আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফার আন্দোলন ও ৬৯' এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১' এর মুক্তিযুদ্ধ তথা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বে প্রতিটি আন্দোলনের অভিন্ন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক পটভূমি এবং উদ্দেশ্য এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠির কাছে দৃশ্যমান ছিল। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইস্পাত কঠিন মনোবল এবং সুদৃঢ় রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম স্বাধীনতা যুদ্ধে রুপান্তরিত হয়। যে কারণে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিতা হিসাবে নবরূপে আবির্ভূত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন যার প্রেক্ষিত রচনা ও সম্পূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বজ্রকণ্ঠে কালজয়ী ভাষণের দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন উৎসর্গ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পাকিস্তানের শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে ভৌগলিক স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও মহান নেতা কারাবন্দি থাকায় স্বাধীনতার স্বাদ অপূর্ণ থেকে যায়। অবশেষে মুক্তিকামী মানুষের আশির্বাদে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা কারাজীবন শেষ করে দেশে ফিরে এলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসার পর বাংলার নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত গণমানুষের আর্থসামাজিক মুক্তি ও আশা আকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তিনি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি শপথ গ্রহন করেন। শোষনহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। “১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনা” সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ ও পাশ হয়। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর মাত্র ১০ মাসের মধ্যে জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগনকে একটি পুর্নাঙ্গ শাসনতন্ত্র উপহার দেন। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান কার্যকর করার পর গণপরিষদ বাতিল করা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এই চার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে সংবিধান রচিত হয়। সংবিধানের চার মূলনীতি ঘোষণা কেবল মাত্র ঘোষণাই ছিল না, ঐ সংবিধানেই বলা হয়েছে যে, সংবিধানের মৌলিক নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলনীতি হবে। আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তা প্রয়োগ করবে, সংবিধান বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে নির্দেশক হিসাবে কাজ করবে এবং উহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের জীবন ও কার্য্যের মূল ভিত্তি হবে। আইন পদ্ধতির মৌলিক বিধি উপেক্ষা করে কোন ব্যক্তিকে তার জান-মাল ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ বা আইন পরিষদের যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ প্রতিরোধকল্পে সংবিধানে ন্যায়বিচারের বিধান করা হয়। জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। “আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্যে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।” যা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের শাসনের মূল দর্শন হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। জাতির পিতা ৭২ এর সংবিধানে দেশের আপামর জনসাধারনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। মানবাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা প্রণীত সংবিধানের নির্দেশনা অনুস্বরণের বিকল্প নেই। চার মূলনীতির মধ্যেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা রয়েছে। ৫০ এর দশক থেকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন ঘটেছিল আমাদের সংবিধানে। ৭২-এর সংবিধান ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাঠামোগত রূপ। এরপর সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতি ও বাঙালি জাতির ইতিহাস বিশ্বের গণতন্ত্রকামী মানুষের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে প্রথম বাঙালি নেতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে সমগ্র বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্টই করেননি, তিনি বিশ্ববাসীর কাছে নন্দিত হয়েছিলেন।
সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি বাংলাদেশকে লুটে পুটে খেতে চেয়েছিল, পাকিস্তানী শত্রুদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। দেশপ্রেম, নীতি ও নৈতিকতার কারনে স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্ষুশূলে পরিণত হন বঙ্গবন্ধু। শত বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাতক দেশকে পুনর্গঠন করে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। অনুরূপ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাক ক্ষমতার লোভে পাকিস্তানী পরাজিত শত্রুদের সাথে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাদের গভীর ষড়যন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হয়। ওরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে চিরতরে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালোরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের নিজ বাসভবনে স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর বিপথগামী উচ্চাবিলাসী কিছু সেনা অফিসার ও সৈনিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মীনি শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত এবং আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই আবদুল নঈম খান রিন্টুসহ মোট ১৮ জনকে হত্যা করেছিল। খুনিরা ক্ষমতায় বসালো তাদের ফরমায়েশি সরকারের প্রধান করে বিশ্বাস ঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদকে। জাতির পিতার খুনিদের বাঁচানোর জন্য মোশতাক ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারী করে। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক মোশতাকের ক্ষমতা বেশি দিন টেকেনি। একই বছর ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিরা খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচুত্য করে ওরা নিজেরাই ক্ষমতা দখল করে নেয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে বিদেশের বিভিন্ন মিশনে চাকুরী দিয়ে বঙ্গবন্ধু খুনিদের পুরস্কৃত করে। অন্যদিকে ইনডেমনিটি বিল সংসদে পাশ করিয়ে জাতির পিতার হত্যাকান্ডের বিচার স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়। একইসাথে রাজাকার আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা ওদের গাড়ী ও বাড়িতে উত্তোলন করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করেছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
বিচার বিভাগ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ। তিনি বিচারপ্রার্থী জনগনের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ভুখন্ডে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দক্ষ বিচার বিভাগ গঠনের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও স্বাধীন বিচার বিভাগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। সুপ্রীম কোর্ট সহ আমাদের বিচার বিভাগ বঙ্গবন্ধুর হাতেই সৃষ্টি হয়েছে। জাতির পিতার নির্দেশিত পথ ধরেই তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার কাজে ব্রত আছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের বিচার বিভাগ হবে গণমুখি, দেশপ্রেমের সাথে মানুষের সুখ-দুঃখ উপলব্ধির মাধ্যমে আইনানুগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। বিচারের মর্মবানী যেন বাংলার সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষের বুঝতে কষ্ট না হয়। বিচারকের রায় বিচার প্রার্থী প্রতিটি মানুষ যাতে সহজে বুঝতে পারে যে, আদালতের রায়ে বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পেয়েছে, এটা প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। এ অনুভূতি থেকে ১৯৭১ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী বাংলা একডেমির একুশের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “আমি ঘোষনা করছি, আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হবে। বাংলা ভাষার পন্ডিতেরা পরিভাষা তৈরি করবেন তারপরে বাংলাভাষা চালু হবে তা হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুশি গবেষণা করুন, আমরা ক্ষমতা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাভাষা চালু করে দেব সেই বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে, পরে তা সংশোধন করা হবে।”
স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন বদ্ধ পরিকর। ১৯৭২ সালে রচিত আমাদের সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ অনুচ্ছেদে আইনের শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমেই কেবলমাত্র কোন রাষ্ট্রে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আইনের শাসন ছাড়া গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা করা দূরুহ। সেকারণ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য্য। বঙ্গবন্ধুর চেতনা থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শই বিচারকদের মাতৃভাষায় রায় লিখতে উদাত্ত আহবান জানিয়ে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন, কর্ম এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস এক ও অভিন্ন। তাঁর কর্মময় জীবনের ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই মহান মানুষটি জীবনে যা করেছেন সবই ছিল দেশের মানুষের কল্যানের জন্য। তার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ ছিল দেশের নিপীড়িত, নির্যাতিত ও অবহেলিত মানুষের স্বার্থে। স্ত্রী, কন্যা, পুত্র ও পরিবারের জন্য তাঁর কোন সময় বরাদ্দ ছিল না। অপরিসীম ত্যাগের মহিমায় তাঁর জীবন মহিমান্বিত। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ সৃষ্টি হতো না। জাতির পিতা আজ স্বশরীরে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর আদর্শ, বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে চিরজাগ্রত আছে। তিনি অম্লান, তিনি অমর, তিনি বেঁচে থাকবেন হাজার বছর। সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় তিনি কালের বিবর্তনে ক্রমান্বয়ে অধিক সম্মানের আসনে উদ্ভাসিত হবেন। মানবতাবাদী বিশ্ব নেতার লক্ষ-কোটি সন্তান অনুস্বরণ করবে জাতির পিতার আদর্শকে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অনন্তকাল এক ও অভিন্ন হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে পৃথিবীর মানচিত্রে। তাঁর আদর্শে গড়ে উঠবে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক এটিই জাতির প্রত্যাশা।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। আগস্ট মাস আসলেই বাংলার আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতি অশ্রুসিক্ত হয়। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তাঁর মৃত্যু নেই, তিনি চিরঞ্জীব। জাতির পিতার কখনো মৃত্যু হয় না। তাঁর আদর্শ ধারন করে এক মুজিব থেকে লক্ষ মুজিব সৃষ্টি হয়েছে বাংলার মাটিতে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি। বঙ্গবন্ধু বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি কেবলমাত্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের বঞ্চিত নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় গড়ে তুলেছেন।
বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম, যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠি। (অসমাপ্ত)
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সরকারি কৌশুলী।
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।