ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা কেন নয় (ভিডিও)

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১১:১৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৫:২৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ও ব্যবহারিক ভাষা করার প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কবে নাগাদ বাস্তবায়নের সুখবর মিলবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এদিকে, সাধারণ পরিষদে এ প্রস্তাব বাংলাদেশকেই উত্থাপন করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

১৯১৩ সালে বিশ্ব কবির বাংলা সাহিত্যে নোবেল অর্জন। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলিতে ভাষার জন্যে শাহাদাৎ বরণ। 

জাতিসংঘে ১৯৭৪-এর ২৫শে সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেন। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। 

বাংলাদেশ, ভারত, সিওরালিয়নসহ কমপক্ষে ১৫টি দেশের তিনশ’ মিলিয়ন বা ৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ভাষা বাংলা। সংখ্যার দিক থেকে ষষ্ঠ। সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার তার সাথে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সংগ্রামের ইতিহাস আছে বাংলার। তাই একে জাতিসংঘের সপ্তম দাপ্তরিক ও ব্যবহারিক ভাষা ঘোষণার প্রস্তাব বেশ পুরনো। 

যদিও সংস্থাটির দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা পেতে এখনও সুনিদিষ্ট কোন নিয়ম নেই। এমনকি, ১৯৪৫ সালে এইউএন চার্টারে গঠনতন্ত্রেও কোন নির্দেশনা ছিল না। শুরু থেকে এ পর্যন্ত আধুনিক স্ট্যান্ডার্ড আরবী, অক্সফোর্ড বানানে ব্রিটিশ ইংরেজী, ফরাসী, ফ্রেঞ্চ, সরলীকৃত চীনা বর্ণমালা চাইনিজ ম্যান্ডারিন, রাশিয়ান, স্প্যানিস- ছয়টি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। 

তবে, ওই ভাষাগুলো জনসংখ্যার ভিত্তিতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে না। ভাষা হিসেবে অন্তর্ভূক্তির এই দৌড়ে আছে পতুগীজ, জার্মান, ইতালীয়ান, জাপানিজ, হিন্দি, উর্দুর মত ভাষাগুলো। এখানে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও সবারই আছে নিজস্ব যুক্তি। 

পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। সরকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাকে সপ্তম দাপ্তরিক ভাষা করার আনুষ্ঠানিক দাবি একাধিকবার তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সংস্থাটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পেতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভায় এর সমর্থনে একই ধরণের প্রস্তাব পাস করা হয়। সমর্থন মিলেছে অন্যান্য ভাষাভাষি অঞ্চল থেকেও। 

জাতিসংঘের নথিপত্র সবকটি দাপ্তরিক ভাষায় অনুবাদ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোন নতুন ভাষা যুক্ত হলে আগের রেজুলেশনগুলোকে সেই ভাষায় নেয়া বিশাল খরচের বিষয়। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কয়েকশ’ কোটি টাকা দরকার। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো করতে বছরে দরকার দেড়শ’ কোটি টাকা। এরপর আমাদের আর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা চালু রয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু দাবি নিয়েই বসে থাকলে চলবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তুলতে হবে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘একেবারেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। কারণ জাতিসংঘ একটা ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা করবে এটার জন্য নিশ্চিত তদবির করতে হয়। বাংলা ভাষা এবং বাংলাভাষী জনগোষ্ঠী দুনিয়ার মাঝে ওই পরিমাণ গুরুত্ব পেলেই কেবল জাতিসংঘ এ ব্যাপারে আগ্রহী হতে পারে। ৩০ কোটি মানুষকে নিয়ে আমরা তো আসলেই ওই ধরনের পরিকল্পনা করতে পারিনি, যে জন্য বাংলা ভাষা পৃথিবীতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এক বিন্দুও নয়, এর ধারেকাছেই আমরা নেই।’

তবে, বাংলাদেশের বাড়তি যুক্তি হতে পারে ইউরোপের চারটি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হয়েছে। তেমনি আফ্রিকার অনেক দেশ আরবি ভাষায় কথা বলে। এখন শুধু এশিয়ার একটি ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা করা কেন নয়? 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি