ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকারের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী আজ

জানা অজানার শেক্সপিয়ার

প্রকাশিত : ১৬:৪৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৭:২১, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

রানি প্রথম এলিজাবেথ ও জ্যাকোবিনের যুগে ইংল্যান্ডে একজন ব্যাক্তির আবির্ভাব হয়েছিলো। বিশ্ব সাহিত্যের পাতায় আজও তিনি সোনার ন্যায় চকচক করছেন। যদিও তিনি বলেছিলেন, ‘চকচক করলেই সোনা হয় না।’ তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ও অগ্রণী নাট্যকার ‘উইলিয়াম শেক্সপিয়ার’। তাকে আরও বলা হয় ‘বার্ড অব এভন’।

আজ ২৩ এপ্রিল, এই মহান ব্যাক্তির ৪৫৫তম জন্মদিন ও ৪০২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল, এভন নদীর তীরে অবস্থিত স্টার্ডফোর্টের এক গির্জায় তার ব্যপ্তিস্ম হয়েছিলেন বলে জানা যায়। এর থেকে বলা যায়, তিনি ১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল স্টার্ডফোর্ট-এভনে জন্ম গ্রহন করেন। কারণ জন্মের তিনদিন পর ব্যপ্তিস্ম হয়। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন ইংল্যান্ডর এই জাতীয় কবি। তার বাবা ছিলেন জন শেক্সপিয়ার। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই অ্যানি হাথাওয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

যদিও তিনি একজন  বিখ্যাত সাহিত্যিক, কিন্তু তার জীবনি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। ধারণা করা হয় ১৫৮৯-১৬১৩ সালের মধ্যে তার অধিকাংশ রচনা রচিত হয়েছিলো। তিনি তার অধিকাংশ লেখাই লন্ডনে লিখেছিলেন।

তার রচনার মধ্যে পাওয়া গেছে ৩৮ টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, ২টি দীর্ঘ আখ্যানকবিতা এবং আরও অনেক কবিতা। তার প্রথম ও প্রথম হিস্টরি নাটক ‘হেনরি vi পার্ট ২’। এটি ১৫৯০-১৫৯১ সালের মধ্যে রচিত হয়েছিলো। তার রচিত নাটক গুলোর মধ্যে ট্র্যাজেডি ও কমেডি উভয় ধরনের নাটকই রয়েছে। তার প্রথম ট্র্যাজেডি ‘রিচার্ড iii’ ও প্রথম কমেডি ‘দ্য কমেডি অব ইরোর্স’। এগুলো ১৫৯২-১৫৯৩ সালে রচিত হয়েছিলো।

তার সৃষ্ট কয়েকটি ট্র্যাজেডি

হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, ওথেলো, কিং লেয়ার, জুলিয়াস সিজার, রোমিও এন্ড জুলিয়েট, রিচার্ড iii, কেরিওলেনাস, এন্টোনি এন্ড ক্লিওপেট্রো, টিটাস এন্ড এনড্রোনিকাস ইত্যাদি।

তার রচিত কয়েকটি কমেডি

দ্য টেমপেস্ট, দ্য কমেডি অব ইরোর্স, এজ ইউ লাইক ইট, মার্চেন্ট অব ভেনিস ইত্যাদি। তন্মধ্যে তার প্রথম চারটি ট্র্যাজেডিকে বলা হয় তার শ্রেষ্ঠ ট্র্যাজেডি। হ্যামলেট হলো তার সর্বশ্রেষ্ঠ।

শেক্সপিয়ার কবিও ছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি।  তিনি অনেক সনেট লিখেছেন। ‘হয়েন আই কনসিডার এভরি থিং দ্যাট গ্রৌজ, হৌল্ডস ইন পারফ্যাকশন বাট এ লিটল মোমেন্ট’- ‘সনেট ১৫’ এর দুটি লাইন। ভেনাস ও এডোনিস তার একটি অনন্য কবিতা। এডোনিস একজন সাহসী ও সুদর্শন যুবক, যার রূপে মুগ্ধ হয়ে দেবী ভেনাস মর্ত্যে এসেছিলেন। কিন্তু এডোনিস তাকে রেখে শিকারে যেতে চায়। প্রিয়তমের প্রানের আশংকায় ভেনাস হায়হায় করে ওঠে। ‘বন্য বরাহ যখন সে ক্রুদ্ধ  হয়,... উৎপাটিত বৃক্ষের মতই...’। কিন্তু তবুও সে শিকারে যায়। আর বরাহের থাবায় তার রক্তে মাটি লাল হয়ে যায়। এমনই ছিলো এই কবিতার কাহিনী। মূলত কবি হওয়ার কারণেই তার রচনা গুলো জীবন্ত মনে হয়।

কবি ও নাট্যকারের মিলনটা তার মধ্যে বিশেষভাবে ঘটেছে। তার মনের কাব্যরস ও নাট্যরস মিলে এক অন্যরকম সোন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে। তার নাটকের চরিত্রগুলো হয়ে ওঠেছে জীবন্ত। হ্যামলেট নাটকে কি দেখা যায়? পরকীয়া করে হ্যামলেটের মা আর চাচা তার বাবাকে হত্যা করে। অতঃপর তার বাবা আত্মা রূপে প্রকট হয় হ্যামলেটের সামনে। সবশেষে হ্যামলেট তার বাবার হত্যাকারীর বদলা নেয়। কিন্তু হ্যামলেটের করুণ মৃত্যু পাঠক হৃদয়কে কাদিয়ে তুলে। শেক্সপিয়ারের রচনায় জীবনের সত্য দিক গুলো ফুটে ওঠেছে। জীবনের সত্যকে নিয়ে তিনি সাহিত্যে এসেছেন। তার অনেক উদ্ধৃতি রয়েছে। সেসবে তা ফুটে ওঠেছে। যেমন-‘হেল ইজ এমটি এন্ড অল ডেভিলস্ আর হিয়ার।’ অর্থাৎ নরক নয় বরং পৃথিবীই শয়তানে পরিপূর্ণ।‘লুক লাইক দ্য ইনোসেন্ট ফ্লাওয়ার, বাট বি দ্য সারপেইন্ট আান্ডার`ট।’ অর্থাৎ দেখতে নিষ্পাপ ফুলের মত হলেও, অন্তরে বৈরীতা।

তার রচিত নাটক, কবিতাগুলো সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রায় শতাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। প্রায় অর্ধেক বিশ্বের শিক্ষার্থীদের দ্বারা তার রচনা সমূহ আজও পঠিত হচ্ছে। ‘শেক্সপিয়ার শুধু একটি সমকালের নয়, বরং তিনি সর্বকালের।’ এমনটিই বলেছিলেন তার সমসাময়িক নাট্যকার ‘বিন জনসন’।

হ্যাঁ, সত্যিই।  শুধু বিন জনসনই নয়, ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাকিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর, রোসেমারি হিলহস্ট, শেক্সপিয়ারের ৪০০তম মৃ্ত্যুবার্ষিকীতে এক বিবৃতিতে বলেন, তার মৃত্যুর চারশত বছর পরও, শেক্সপিয়ারের সৃষ্টিকর্ম গুলো শিক্ষা ও আনন্দ বিনোদনে গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রাখছে।,

১৬১৬ সালে শেক্সপিয়ারের মৃত্যু ঘটেছিলো ঠিকই, কিন্তু তিনি আজও বেচেঁ আছেন তার কর্মের মধ্য দিয়ে। তিনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

সূত্র: রয়টার্স, এন ইন্টুডাকশন টু পোয়েট্রি এন্ড পোয়েটিক্স (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদয্যালয়ের কোর্স বই)

লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি