ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

জাবি উপাচার্যকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিল আন্দোলনকারী

জাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ২২:৪৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে পদত্যাগের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষার হল পরিদর্শনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তারা।

বুধবার দীর্ঘ তিন ঘণ্টার ‘ব্যর্থ আলোচনা’ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের সামনে রাত ৮টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়ের উপস্থাপনায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ব্যানারের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন,‘টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনার বিচার না করা, নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দেওয়া, কমিশন কেলেঙ্কারি, চাঁদা দাবির ঘটনাকে পাঁচ মাস ধরে গোপন রাখা, ৮ ও ৯ আগস্টের বৈঠকের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা, টাকা ভাগ-বাটোয়ারার ঘটনায় সরাসরি যুক্তদের স্বীকারোক্তি এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি তার (উপাচার্য) নিজের পদে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। আমরা তাকে পদত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য স্বসম্মানে পদত্যাগ করার জন্য আমরা তাকে পহেলা অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব। এর মধ্যে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি থাকবে। আগামীকাল সাড়ে ১২টায় সুষ্ঠু তদন্ত ও পদত্যাগের দাবিতে  বিক্ষোভ মিছিল করবো।’

দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন আমি নৈতিক অবস্থানে আছি কি নেই! আমার কারণে রাব্বানী এবং শোভনের পতন হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আগেই জমা হয়ে গিয়েছিলো। আমার ঘটনাটি এখানে সংযোজিত হয়েছিলো। তারা আমাকে বলেছিলো আপনি কেন আগে বলেননি? কোন প্রশাসনই ভিতরের সব কথা সব সময় বলেন না ‘ 
বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিজের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করতে পারি না। আমি ইউজিসিকে জানিয়েছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী তো জানেনই। আমি আইন বিশেষজ্ঞেদের অভিমত নিয়েছি। সেই অভিমত অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের ১২ ধারা অনুযায়ী আমি বিভিন্ন তদন্ত কমিটি করতে পারি, চাইলে তদন্ত কমিটিতে হস্তক্ষেপও করতে পারি। কিন্তু আমি আমার নিজের সম্পর্কে কোন বিচার করতে পারি না। এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নাই। তাহলে আমাকে আচার্য কিংবা ইউজিসির কাছে যেতে হবে'

উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার তো শুধু তারাই নন। এর বাইরেও অনেকেই আছেন। যদি সবাই মনে করেন আমি নৈতিক অবস্থান হারিয়েছি তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। উপাচার্য হিসেবে আমার এটুকু সুযোগ আছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন করার। সেটা আমি ইউজিসিকে বলবো যেন তারা একটা তদন্ত করেন। তদন্ত চলাকালীন সময়ে আমাকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে কিনা! তা আমি বলতে পারিনা। সেটা বলবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।’
পদত্যাগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা পদত্যাগ দাবি করেছেন। কিন্তু আমি চাইলেই তো আর পদত্যাগ করতে পারি না। তাদের পদত্যাগের দাবিতেও যদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে এখানে থাকার নির্দেশ দেন তাহলে আমাকে গালমন্দ খেয়েও থাকতে হবে। আলোচনার দ্বার আর খোলা নাই। এই অর্থে, যে তারা আর আলোচনা চাইছেন না'
এদিকে প্রকল্পের টাকা উপাচার্য তার নিজ বাসভবনে বন্টনের তথ্য প্রকাশ করায় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে তিনিসহ তিন ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের মুঠোফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। 

তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন, উপাচার্য বিরোধী শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, চলমান আন্দোলনকারী ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক তারেক রেজা।
অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন,‘একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে মানুষের যোগাযোগকে রুদ্ধ করাটা অন্যায়। এটা রাষ্ট্র তখন করতে পারে যদি রাষ্ট্রবিরোধী কিছু করা হয়। কিন্তু যারা একটা অনিয়মের তদন্ত চাচ্ছে তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না।’
উপ-উপাচার্যের মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র কিভাবে চলছে, কি করছে, তা আমি জানি না। আমি তো কারও মুখ বন্ধ করে রাখিনি। আপনারা প্রশ্ন করছেন। আমি তো উত্তর দিচ্ছি।’
এমএস/কেআই
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি