ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

জাবিতে অনশনকারী ও প্রগতিশীল ছাত্রদের উপর হামলা

জাবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১১:৫৬, ৭ জুন ২০২৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে অনশনরত সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

মঙ্গলবার (৬ জুন) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে৷ 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, রাত ১১টায় লোডশেডিং চলাকালে অন্ধকারে গৌতম কুমার দাস, গোলাম রাব্বির (ইংরেজি ৪৫ ব্যাচ) নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন ছাত্র প্রত্যয়ের উপর হামলা চালায়৷ পরে প্রত্যয়ের বিছানা তুলে ফেলে দেয় হামলাকারীরা৷

এসময় অনশনরত প্রত্যয়কে সেখান থেকে তুলে দেয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে ফোন করে এম্বুলেন্স নিয়ে আসে গৌতম। জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে নাম্বারটি (০১৫৬৮১২০৮৬৩) গৌতমের বলে জানা যায়৷ 

পরে এম্বুলেন্স আসলে হামলাকারীরা ধস্তাধস্তি করে প্রত্যয়কে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়া হয়। এসময় এম্বুলেন্সে হামলা চালিয়ে পেছনের গ্লাস ভেঙে দেয়া হয়৷  

সেখানে উপস্থিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীর উপর হামলা চালায় গোলাম রাব্বি (ইংরেজি ৪৫ ব্যাচ), মুরাদ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ৪৬), মনোজ (গণিত ৪৬), তানভীর (৪৬ ব্যাচ), রায়হান (প্রাণরসায়ন ৪৬ ব্যাচ), রাহাত (জার্নালিজম ৪৭ ব্যাচ), তারেক মীর (৪৬ ব্যাচ), ফাহাত (রসায়ন ৪৭), নাফিস (অর্থনীতি ৪৬ ব্যাচ), সজীব (৪৫ ব্যাচ), সোহেল (ইংরেজি ৪৬ ব্যাচ), তুষার (ফার্মেসি ৪৫), ফেরদৌস (ফার্মেসি ৪৫) প্রমুখ। 

এসময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়। 

ভুক্তভোগী সৃষ্টি (মার্কেটিং ৪৭ ব্যাচ) বলেন, হলের সামনে আমরা যখন প্রত্যয়ের অনশনস্থলে গেলাম, সেখানে লোডশেডিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৫০-৬০ জন বিশাল মব সৃষ্টি করে হামলা চালায়। এসময় আমাকে হেনস্তা করা হয়। প্রশাসনের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। 

পরে রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎ আসলে প্রক্টর ও প্রভোস্ট সেখানে উপস্থিত হন। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, “আমি সবার বডিগার্ড না, সবার পাহারাদার না। আমাদের একজন এসিসট্যান্ট প্রক্টর এখানে দাঁড়ানো ছিলেন। কিন্তু একটা মবে আমাদের কি করার আছে৷ এটা একমাত্র এলিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়৷ এখানে কেউ নিয়ম মানে না।”

এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাত ১২ টায় উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় সেখানে উপস্থিত হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার,প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টররা৷ 

মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির বলেন, রাত ৮টায় আমরা ছাত্রদের রুম ছেড়ে দেয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করি৷ গণরুম থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নন এলোটেড শিক্ষার্থীদের রুমে তুলে দিচ্ছিলাম৷ এঘটনায় ছাত্ররা অসন্তুষ্ট হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে৷ 

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান শেষে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো- সূর্যোদয়ের পূর্বে মীর মশাররফ হলের সকল অবৈধ ছাত্রকে বের করা, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা, দায়িত্ব থেকে প্রক্টর ও প্রভোস্টকে অব্যাহতি দেয়া, গণরুম- গেস্টরুম বন্ধ করা এবং প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা।  

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভা বসবে৷ সভায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রক্টর ও প্রভোস্টের ব্যাপারে প্রশাসনিক ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

তবে বুধবার দুপুর একটার মধ্যে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। 

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, আমরা গত ছয় দিন যাবৎ একই দাবি নিয়ে বারবার তাদের সামনে হাজির হয়েছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কার্যকর কিছুই পাইনি৷ আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব। বুধবার দুপুর একটার মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি