জাবিতে সাংবাদিককে মারধোর
প্রকাশিত : ১০:৪৫, ২২ আগস্ট ২০২৩
শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিককে মারধোর এবং লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় সোমবার বিকেলে হল প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সংবাদিক। এর আগে রোববার দিবাগত রাত ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল মাঠে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ আল মামুন সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। সে বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশে (ইউএনবি) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী আসিফ হলের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। এরমধ্যে হলগেটে কয়েকজন ছেলে হঠাৎ চোর চোর বলে কাউকে ধাওয়া করে। তারা হল মাঠের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সেখানে দৌড়ে যান। এসময় ধাওয়াকারীরা অন্ধকারে তাকে বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
সে নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও তাকে মারধোর করা হয়। এক পর্যায়ে তার শার্ট এবং জুতা ছিড়ে ফেলা হয়। এসময়, তারা ‘সাংবাদিককে মারতে পেরেছে’ বলে নিজেদের মধ্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্বলন প্রোগ্রাম শেষে হলে ছাত্রলীগের 'গেস্টরুম' চলছিল। ৪৭ ব্যাচের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে ৪৮ এবং ৪৯ ব্যাচের 'গেস্টরুম' চলাকালীন 'বাইরে থেকে কেউ ভিডিও করছে' এমন সন্দেহে নেতাকর্মীরা একজনকে ধাওয়া করে।
এসময় তারা ঐ সন্দেহজনক ব্যক্তিকে 'চোর চোর' বলে ধাওয়া করায় হলের মধ্যে উৎসুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক আসিফ হল মাঠে নেমে এলে তাকে মারধোর করা হয়। যা একটি ভিডিও হতে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভিডিওতে ছাত্রলীগকর্মী নাইমকে (বোটানি-৪৮) বলতে শোনা যায়, “এই আপনি সাংবাদিক না, আপনি গেস্টরুমে কি করেন?”
আকস্মিক এ ঘটনায় আহত সাংবাদিক আসিফ আল মামুন জানান, “ঘটনার সময় আমি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হলে মাঝেমধ্যেই সাইকেল বা বিভিন্ন জিনিস চুরির ঘটনা ঘটে। তাই হট্টগোল শুনে কৌতুহলবশত মাঠে যাই। তারা এই সুযোগে আমাকে মারধোর করে। প্রথমেই আমার চশমা খুলে যায়। ফলে অন্ধকারে আমি কাউকে সেভাবে চিনতে পারিনি। মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি দুইহাত দিয়ে মাথা সেইফ করছিলাম। এখন হাতের আঙুল নাড়াতে পারছি না।”
প্রত্যক্ষদর্শী অমর্ত্য রায় বলেন, আমি আর আসিফ ভাই ঘটনার একঘন্টা আগে থেকেই একসাথে ছিলাম। আমরা বটতলা থেকে একসাথে হলে ফিরে চা খাচ্ছিলাম। এর মধ্যে হট্টগোলের শব্দ শুনে ভাই নিচে নামলে তাকে উপর্যুপরি মারধোর করা হয়।
রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ওয়ার্ডেন ও ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. এজহারুল ইসলাম এবং হাউস টিউটর প্রভাষক এ জেড এম ওমর ফারুক সিদ্দিকী হলে উপস্থিত হন। অধ্যাপক এজহারুল বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমরা দেখেছি, একসাথে অনেকগুলো ছাত্র গেস্টরুম থেকে বের হয়েছে, কাউকে ধাওয়া করেছে। তবে স্পটের (হলের মাঠে) কোন ভিডিও নেই। সাংবাদিক আসিফের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা সেটার উপর ভিত্তি করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এদিকে সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী সংবাদিক হল প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেখানে মোহাম্মদ নাঈম হোসেন (বোটানি ৪৮), আমিনুর সুমন (বোটানি ৪৮ ), হৃদয় রায় (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব ৪৮), শাফায়েত হোসেন তোহা (বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি ৪৮), মোহাম্মদ ইয়াছির আমিনকে (ইউআরপি ৪৯), মেহেদী হাসান (ফাইন আর্টস ৪৭) মূল অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মেহেদী হাসান শাখা ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক, বাকিরা শাখা ছাত্রলীগকর্মী। এদের সাথে অজ্ঞাত আরও ৫-৭ জন সরাসরি মারধরে অংশ নেয়।
এছাড়াও মারধরের সময় ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সারোয়ার শাকিল (ইতিহাস), উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা সম্পাদক জাহিদ হাসান (প্রাণিবিদ্যা), উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম নিরব (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং), কর্মী আলী আক্কাস আকাশ (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব), সহ-সম্পাদক সৌরভ পাল (জিওলজিক্যাল সায়েন্সেস), কর্মী মীর তাওহীদুল ইসলাম (পরিসংখ্যান), সহ-সম্পাদক রিজওয়ান রাশেদ সোয়ান (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব) কর্মী মাহীদ (প্রত্নতত্ত্ব) ও সীমান্ত চৌধুরি (প্রত্নতত্ত্ব) উপস্থিত ছিল। এই ৯ জনসহ ৪৮ ও ৪৯ ব্যাচের আরও কয়েকজনের প্রত্যক্ষ মদদে মারধরের এ ঘটনা ঘটে এবং এদের সবাইকে একসাথে গেস্টরুম থেকে উগ্রভাবে দৌঁড়ে বের হতে দেখা গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ধাওয়াকারীদের অগ্রভাগে থাকা একজন কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই মাথায় আঘাত করে বসে। এরপর অপর ধাওয়াকারীরাও বেধড়ক মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এসময় আমি নিজেকে হলের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর আমিনুর সুমনের (বোটানি ৪৮ ) নেতৃত্বে আরেক দফা মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমার চশমা ভেঙ্গে যায় এবং শার্ট ও জুতা ছিঁড়ে যায়।
এএইচ
আরও পড়ুন