‘জার্মানির যত সূর্যকন্যা: হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন থেকে ফ্রেডেরিকে অটো’
প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ১৭ জুলাই ২০২৪ | আপডেট: ১৯:৩৭, ১৭ জুলাই ২০২৪
নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাপক অর্থে একজন নারীর স্বকীয়তা, নিজস্বতা সর্বোপরি স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিকাশকে বোঝায়। নারী-পুরুষের মধ্যকার অসমতা ও বৈষম্য দূর করে নারীকে পুরুষের সমকক্ষে প্রতিষ্ঠিত করাই হলো নারীর ক্ষমতায়ন। নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীকে ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং নারীদেরকে শিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। সমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর অবদান যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে এবং তাদের উপর নির্যাতন করা প্রতিরোধ করতে হবে, তবেই নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। অধুনা বিশ্বে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আজকে জার্মানি যে শিক্ষা, সংস্কৃতি আর বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে তার পেছনও আছে অনেক মহিয়সী নারীর অবদান। তাদের অনেকের কথা বাংলা ভাষীদের কাছে এখনও অজানা। জার্মানির এইসব মহিয়সী নারীকে নিয়ে ‘জার্মানির যত সূর্যকন্যা: হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন থেকে ফ্রেডেরিকে অটো’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি সম্পাদনা করেছেন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা পদার্থবিদ ড. গোলাম আবু জাকারিয়া। তিনি দীর্ঘদিন জার্মানিতে চিকিৎসা পদার্থবিদ্যায় অধ্যাপনা করেছেন এবং সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘ফেডারেল ক্রস অব মেরিট’প্রাপ্ত। বইটিতে মধ্যযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জন্মনেয়া মোট ১৫ জন নারী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারা হলেন, হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন, ক্লারা শুমান, বের্টা ফন জুটনার, বেরটা বেঞ্জ, ক্যাটে কলভিৎস, রোজা লুক্সেমবুর্গ, মারিয়া গ্যোপার্ট-মায়ার, সোফি শল, মারি ফাইট, কারোলা স্ট্যার্ন, আনে ফ্রাঙ্ক, ক্রিস্টিয়ানে নুসলাইন ফলহার্ড, অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল, য়ুলি ৎসে এবং ফ্রেডেরিকে অটো। মধ্যযুগের শেষ দিকে অর্থাৎ ১০৯৮ সালে জন্মনেয়া বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন। চার্চের একজন ধর্মযাজক হয়েও যে সমাজে চিকিৎসাবিজ্ঞান, সঙ্গীতসহ নানা বিষয়ে অবদান রাখা যায় সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন।
ক্লারা শুমান একজন বিখ্যাত সুরসাধক, ১৮১৯ সালে জন্ম নেয়া এই শিল্পি জার্মানির সঙ্গিত অঙ্গনকে করেছেন ঋদ্ধ। সে সময়ের কুখ্যাত নাৎসি শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে মানবতা ও সুবিচারের পক্ষে কথা বলে নিজের জীবন দিয়েছেন মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সোফি শল। জার্মানির সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে মূল্যবান অবদান রেখেছেন ফ্রেডেরিকে অটো। আনা ফ্রাঙ্ক: এক কিশোরির ডায়েরি নামে প্রবন্ধটি পড়লে তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি পড়েননি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। একজন বালিকা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে কী করে একজন বিদূষী মহিলা হয়ে উঠতে পারেন সেই চমকপ্রদ কাহিনী এই ডায়েরির কথাগুলো পড়লে অত্যন্ত সুন্দরভাবে অনুধাবন করা যাবে। মারিয়া গ্যোপার্ট-মায়ার এমন একজন মহিলা যিনি নিজের অদম্য ইচ্ছা, পরিবার ও স্বামীর সহায়তা নিয়ে অগ্রসর হয়ে সমস্ত কর্মজীবনে কোনো প্রফেসর পদ পাননি। তাই বলে হতাশ না হয়ে নিজের একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতাকে সামনে রেখে পদার্থবিদ্যায় প্রথম জার্মান নোবেল প্রাইজ অর্জন করেছেন সেই ঘটনা সকলের জানা দরকার।
একসময় অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলের নাম দেয়া হয়েছিল ইউরোপের রানি। জার্মানির এই ক্ষমতাধর চ্যান্সেলর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নেতৃত্বের পদে ছিলেন। জার্মানির পক্ষে তিনি প্রায় ১০০টি ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, মাঝে মাঝে তাকে বলা হতো, অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেলই সম্মেলন কক্ষের একমাত্র বয়স্ক ব্যক্তি। তিনি জার্মানির বহু সংকট পার হতে সহায়তা করেছেন। অভিবাসন সংকট, ইউরো সংকট, কোভিড-১৯, এমনকি কিছুটা ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রেও। এই ম্যার্কেলকে নিয়েই লেখা হয়েছে একটি দীর্ঘ আলোচনা। প্রবাসী বাঙালি আর জার্মানির নানা লেখক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক আর শিক্ষিত নাগরিকের প্রবন্ধে বইটি এক বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে। আলো ভুবন ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের সম্মিলিত প্রয়াসে এই বইটি জার্মান নারী-কীর্তির একটি অসাধারণ সংকলন হয়ে উঠেছে। বইটিতে সংকলিত সব প্রবন্ধের নারীর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের সংগ্রাম, সাহস, জ্ঞান, সমাজে অবদান ও সফলতা পাঠকদের মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে।
তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিভা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। আমাদের দেশেও নারী স্বাধীনতার কথা নতুন কোনোও সংলাপ নয়। সংকলিত এই সব প্রবন্ধের আলোকে এই সংলাপ যে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারবে, তাতে কোনোও সন্দেহ নেই। এই বইটি কেবলমাত্র জীবনীগ্রন্থ নয় বরং আমাদের দেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও জাগরণের একটি অনুপ্রেরণার উৎস। বইটি থেকে বিক্রয় পরবর্তী অর্জিত অর্থ ক্যান্সার সচেতনতা, প্রতিরোধ সংক্রান্ত কার্যাবলী, ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সহায়তার নিমিত্তে আলো ভুবন ট্রাস্টের ক্যান্সার কল্যাণ তহবিলে জমা করা হবে। বইটি প্রকাশ করেছে আলো ভূবন ট্রাস্ট, পরিবেশনার দায়িত্বে আছে কালের চিঠি প্রকাশনী। রকমারি ছাড়াও বইটি আলো ভূবন ট্রাস্টের কার্যালয় বি-৬৬, রোড-ই/৪, ইস্টার্ন হাউজিং মিরপুর থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া বিকাশ অথবা নগদে বইর মূল্য বাবদ ৫০০ টাকা এবং কুরিয়ার বাবদ ৫০সহ মোট ৫৫০ টাকা প্রেরণ করে যে কেউ সংগ্রহ করতে পারবেন। বিকাশ ও নগদ নাম্বার: +৮৮০১৭১১৮৪১০৬৩
কেআই//