ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জিততে জিততে হেরে যাওয়ার প্রবণতা কবে বন্ধ হবে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:১৪, ৩ নভেম্বর ২০২২

টিম-মেটদের সঙ্গে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান

টিম-মেটদের সঙ্গে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান

Ekushey Television Ltd.

একটি ম্যাচ জিতলে আরো দশটি ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ক্রিকেটে এমনটাই দেখা যায় শক্তিশালী দলগুলোর ক্ষেত্রে। তারা প্রতিটি জয়ে খুঁজে পায় স্বস্তিও। আর ক্রিকেটে এমন রোমাঞ্চকর মহূর্তগুলো তো থাকবেই। রোমাঞ্চকর মহূর্ত না থাকলে খেলার আনন্দই যে উপভোগ করা যায় না। 

কিন্তু বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি উল্টো। টাইগারদের ম্যাচে এতো অতিরিক্ত রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তা জন্ম নেয়, যা বিষাদে পরিণত হয়। 

এ পর্যন্ত যতগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ জিতছে, ঠিক ততোগুলো ম্যাচেই দর্শক এবং বিসিবির সকল কর্মকর্তাসহ সবাইকেই আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। 

এই তো, অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে বিসিবির সভাপতি তো বলেই দিলেন যে, তার জ্ঞান হারা হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। 

এদিকে দর্শকদের নাকি হার্ট অ্যাটাক করারও অবস্থা চলে আসছিলো। কেনো এমনটা হয়? একটা জয় পেতে কি এতোটা রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তার প্রয়োজন আছে? 

এ যেনো বর্ষাকালের বৃষ্টির মতো অবস্থা হয়ে যায় বাংলাদেশের ম্যাচে। যেসব ম্যাচে খুব সহজে জেতার সম্ভাবনা থাকে, সেগুলোতে পুরো ম্যাচজুড়ে লড়াই করে জিততে জিততে এসে শেষ দিকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়। এই যেনো তীরে এসে তরী ডুবানো।

এমন কিছু ম্যাচ ইতিহাস হয়ে থাকবে, যেগুলো তীরে এসে তরী ডুবালো বাংলাদেশ। যেমন-

নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ২০১৮:
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে শেষ বলে ভারতের দরকার ছিলো ৫ রানের। কার্তিক শেষ বলে ছক্কা মেরে ভারতকে জিতিয়ে দেন শিরোপা।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টি, নাগপুর-২০১৯:
১৭৫ রানের টার্গেট দেয় ভারত। জবাবে বাংলাদেশের শেষ ৩০ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫০ রান। কিন্তু দীপক চাহারের বোলিং তোপে বাংলাদেশ শেষ ৮ উইকেট হারায় মাত্র ৩৪ রানে। 

আর, বুধবার (২ নভেম্বর) অ্যাডিলেডে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বৃষ্টির জন্য শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানের টার্গেটে খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। শেষ বলে এসে ৫ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। 

এছাড়াও, ২০১৬ সালেও টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারের অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় মাত্র ১ রানে হেরে যেতে হয় টাইগারদের। 

২০১০ সালে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭২ রান তাড়া করতে নেমে জয়ের আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। 

২০১২ সালে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯১ রানের তাড়া করতে নেমে জিততে জিততে ১৩২ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। একই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭৫ রান করেও বোলিং দুর্বলতায় হারতে হলো।

২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টিতে হংকংয়ের বিপক্ষে ১০৮ রান করে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২ বল হাতে রেখে হংকং জিতে যায়। 

২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানের হারে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত একই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করেও দুর্বল বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে হারতে হলো বাংলাদেশকে। 

এভাবে একের পর এক জিততে জিততে হারের ঘটনা কবে বন্ধ হবে বাংলাদেশের? কোনোভাবে এই নাটকীয় হার থেকে বের হতে পারছে না টাইগাররা। এসব ম্যাচগুলো শেষ পর্যন্ত যখন নাটকীয়তার জেরে হেরে যায়, তখন পুরো ম্যাচের আনন্দ যেন বিষাদে পরিণত হয়। দিন শেষে দর্শক-সমর্থকদের শুধু মন খারাপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

অথচ শুধু খেলোয়াড়দের নয়, দর্শকদেরও হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার অবস্থাও সৃষ্টি হয় এসব ম্যাচ দেখে। বাস্তবে এসব নাটকীয় ম্যাচ হারে কোনো অভিজ্ঞতা কি হচ্ছে সাকিবদের? আদৌ নয়। শুধু দিনের পর দিন এভাবে হারের বৃত্তেই আটকে আছে তারা।

আর দিন শেষে খেলোয়াড় বা অধিনায়কের সেই গদবাঁধা বক্তব্য- 'আমাদের এখনো শেখার অনেক কিছু বাকি আছে, আমাদের আরো স্মার্ট হতে হবে, আজকে ব্যাটিং আর একটু ভালো হলে স্কোর আরো বড় হতে পারত, আমাদের লক্ষ্য এই বিশ্বকাপ নয়, পরবর্তী বিশ্বকাপ টার্গেট, এই সিরিজের অগ্নি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করা হবে' ইত্যাদি নানা রকম লুকোচুরি বক্তব্য দিয়ে শুধু হারটাকে লুকিয়ে রাখা।

প্রতিটি ম্যাচে বুকের হার্টবিট বাড়িয়ে জিততে জিততে হেরে যাওয়া ম্যাচগুলো থেকে অনুশোচনা এবং বিশ্লেষণ করবে নিজেদের ব্যর্থতা খুঁজে নতুনত্ব কিছু শেখার অভিজ্ঞতা আজও দেখা যায়নি। কারণ, একই ভুল প্রতিটি খেলোয়াড় প্রতিটি ম্যাচেই করে যাচ্ছেন। পরিবর্তন হয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো ভাবনা নেই কারও। 

(লেখনী কৃতজ্ঞতা- মাজহারুল ইসলাম শামীম। শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।)

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি