ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

জীবন বদলের ৪০ দিন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:৩৩, ২৬ জুন ২০২৩

মানুষ সাফল্য চায়, বদলাতে চায় কিন্তু বারবার ছোটখাটো চেষ্টা ওয়াদা করে বদলাতে পারে না। ফলে জীবনে কাঙ্খিত সাফল্যও আসে না। প্রবৃত্তির টানে সে বারবার ভুল করে, পথ হারিয়ে চলে। একসময় ভাগ্যের বা অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চায়। মনে রাখতে হবে আমাদের ভালো-মন্দ সব কাজের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। অন্য কেউ কিছুই করতে পারে না যদি আপনি আপনার লক্ষ্য কাজের প্রতি একাগ্র থাকেন। সাফল্য আপনার মৌলিক অধিকার। আর সাফল্যের পথে প্রথম বাধা বা দেয়াল হচ্ছে সন্দেহ, সংশয় ও অবিশ্বাস। পারবো কি পারবো না, হবে কি হবেনা, যদি না হয় তাহলে কী হবে নানারকম নেতিবাচক প্রশ্ন, ভয় ও আশঙ্কা।

দার্শনিকদের বক্তব্য আসলে পঙ্গুত্ব মনের, দেহের নয়। সংশয়, ভয় মনকে পঙ্গু করে দেয়। মস্তিষ্ককে তার বিশাল শক্তি ভান্ডার নিয়ে লাগাতার কাজ করার পথে বাধা সৃষ্টি করে। তবুও এখানে আমরা জীবন বদল বা সাফল্য লাভের জন্য ৪০ দিনের একটা রুটিন করলাম। বলা হয়ে থাকে ৪০ দিন ধরে বেধে অভ্যেস করতে পারলে পরবর্তী সময়ে দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হবে। একবারে অনেক কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু শুরু করুন আজই। পথে নামলেই পথই পথ দেখাবে। প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন মহান স্রষ্টা আপনাকে অনেক কিছুই দিয়েছেন। এরপর আমরা জীবন বদল ও সাফল্যের অন্যান্য বিষয় আলোচনা করবো। 

এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ পাকের কাছ থেকে এসেছে অর্থাৎ তারই নির্দেশনা বা আদেশ-নিষেধ। মানুষ কি করবে, কি করবে না, কোথায় তার ভালো মন্দ সবকিছু এখানে ধারাবাহিকভাবে বলা হয়েছে। নবী করিম (সা.) সারা জীবন কোরআনের আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী চলেছেন এবং অন্যদের চলার জন্য পথ দেখিয়েছেন। সুতরাং আমাদেরকে কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী পথ চলতে হবে যা নবী করিম (সা.) করেছেন আর এসব মানতে হলে কোরান অনুধাবন, অনুসরণ করতে হবে গভীরভাবে নিজের ভাষায়। 

সাফল্য অর্জিত হয় অনেক শ্রমে, অনেক ত্যাগে। সাফল্যের পথে রয়েছে অজস্র বাধা, আছে মরীচিকা। পথ চলতে গিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন চোরাবালিতে। সফল ও ব্যর্থ মানুষের মাঝে বাহ্যিক বা শারীরিক কাঠামোয় কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু জীবনদৃষ্টিতে। সঠিক জীবনদৃষ্টি মানুষকে সফল করে আর ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি তাকে ব্যর্থ করে। অর্থাৎ ইতিবাচক বিশ্বাসী মানুষই পারে জীবন বদলাতে। 

প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তরের সামর্থ্যই সাফল্য। এটি একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। সাফল্যের ধরন অনেক। মানসিক সাফল্য হলো প্রশান্তি, শারীরিক সাফল্য সুস্বাস্থ্য আর আর্থিক সাফল্য হচ্ছে সচ্ছলতা। আত্মিক সাফল্য হচ্ছে আত্ম উপলব্ধি। অর্থবিত্ত, খ্যাতি-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি সাফল্যের একেকটি উপকরণ হলেও সাফল্য মানে অভাববোধের অনুপস্থিতি। 

সফল তিনি-ই যিনি আপাত ব্যর্থতার ছাই থেকে গড়ে নিতে পারেন নতুন প্রাসাদ। প্রতিটি অর্জনকেই মনে করেন নতুন শুরুর ভিত্তি। প্রতিটি অর্জন শেষেই শুরু করেন আরো বড় অর্জনের অভিযাত্রা।

১. নিয়মিত (জামায়াতে পড়তে পারলে ভালো) নামাজ পড়ার চেষ্টা করতে হবে সঙ্গে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভালো। প্রতিদিন নিয়মিত ন্যূনতম ১ ঘন্টা হলেও বাংলা অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। একই সঙ্গে নবী করিম (সা.) জীবনী অধ্যায়ন করতে হবে। সাথে প্রতিদিন মেডিটেশন বা ধ্যান চর্চা, প্রাণায়াম করুন। প্রতিদিন খুঁজে খুঁজে ভালো কাজ করুন।

২. মিথ্যা কথা, রাগ, হিংসা, পরচর্চা, লোভ, ক্রোধ, ঘৃণা, নেতিবাচক চিন্তা অর্থাৎ মনের আবর্জনা একেবারেই দূর করতে হবে। সংশয়, সন্দেহ, লালিত কু-অভ্যাস, আলস্য, ত্যাগ করতে হবে। সব সময় মনে করতে হবে অন্তরে আল্লাহ, পরম প্রভু আছেন অথবা আল্লাহ আমাকে দেখছেন। 

৩. সব সময় জিকিরে থাকার চেষ্টা বা পরম প্রভুর নাম স্মরণ রাখার চেষ্টা এবং তাওবা পড়ার বা খারাপ চিন্তা মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। শোকর বা কৃতজ্ঞতা, মনছবি বা সুন্দর স্বপ্ন, দান, সেবা, ধৈর্য্যধারণ ও সবর ও সংযমের সাথে ভালো কাজে অংশ নিতে হবে। সূরা বাকারার ১৮৬ নাম্বার আয়াতে আছে- আল্লাহ বলেন,  হে নবী! আমার বান্দারা যদি আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তখন তাদের বলো, আমি তো তাদের খুব কাছেই আছি। প্রার্থনায় আমাকে যে ডাকে, আমি তার ডাক শুনি, তার ডাকে সাড়া দেই। তাই আমাকে বিশ্বাস করা ও আমার ডাকে সাড়া দেয়া অর্থাৎ আমার দেয়া ধর্মবিধান অনুসরণ করা তাদের কর্তব্য। তাহলেই তারা সত্যপথে চলতে পারবে।

৪. সবসময় ভাবতে হবে মহান আল্লাহ আমার সাথে আছেন, আমাকে দেখছেন, আমার অন্তর দেখছেন, সাথে এও ভাবতে হবে মহান আল্লাহর অশেষ রহমত আমার উপর আছে, তিনি আমাকে রিজিক, ধন সম্পদ, টাকা-পয়সা, সংসার শান্তি সবকিছুই দিতে পারেন। তিনি সবকিছুর একমাত্র মালিক। তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তিনি দিতে ভালোবাসেন। আসমান জমিন ইহকাল পরকাল সব ক্ষেত্রেই তিনি আমাকে রক্ষা করবেন। অর্থাৎ সবকিছুতেই শোকর, সবর করে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আর তাকে খুশী করার জন্য সৎকর্ম বা ভালো কাজ, সেবা কাজ সংঘবদ্ধভাবে করতে হবে। মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন কিছুই হয় না বা সম্ভব না।

৫. সবসময় নিজের জীবনের স্বপ্ন-টার্গেট বা মনছবি ঠিক করে এগোতে হবে। স্বপ্ন-টার্গেট বা লক্ষ্য যত স্পষ্ট হবে কাজ তত সহজ হবে। ভাবনায় সুস্থতা থাকতে হবে। অসুস্থ নেতিবাচক ভাবনায় যাওয়া যাবে না। প্রতিদিন সুন্দর চিন্তা করতে হবে। সব সময় বলতে হবে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন। 

সব সময় ভাল কাজ করতে হবে। আমাদের যা আল্লাহ দিয়েছেন তার জন্য শোকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, যা দেন নাই তা চাইতে হবে, নিয়মিত মনছবি দেখতে হবে। মনছবি বাস্তবায়নের জন্য দান বা সাদাকা দিতে হবে। তবে পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আর মনছবি বাস্তবায়নের জন্য ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমি মানুষের কাছে দারিদ্র্য থাকে না, অসুস্থতা থাকে না। 

উত্তম ইবাদত সেবাঃ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎকর্ম বা সেবা কাজ করতে হবে বেশি বেশি। দান এবং সেবা কাজ হলো উত্তম ইবাদত। আল্লাহ প্রত্যেকটা ভালো কাজেই খুশি হন। আপনি যদি সালাম দিয়ে একটু হাসিমুখে কথা বলেন একজনের সাথে বন্ধুর সাথে, তিনি খুশি হন। মা বাবা,সন্তানের সাথে হাসিমুখে কথা বললে তিনি খুশি হন। উপাসনা-আরাধনা করলে আল্লাহ খুশি হন। পবিত্র কোরআনে সূরা আয়াত পড়লেও আল্লাহপাক খুশি হন। আমরা যেহেতু চাই যে, আল্লাহ খুশি হন এমন কাজগুলো করতে, তো কোন কাজ করলে আল্লাহ খুশি হবেন- সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে আমরা সেই কাজটাই বেশি বেশি করব। অর্থাৎ মহান আল্লাহপাক যেসব কাজে খুশি হন সেগুলি বেশি করবো। আর যেসব কাজে তিনি অপছন্দ করেন সেগুলো বন্ধ করবো। পবিত্র কোরআনে সূরা মূলক এর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে তোমাদের মধ্যে সৎকর্মে কে অগ্রগামী তা পরীক্ষার জন্যই তিনি জীবন সৃষ্টি ও মৃত্যুর ব্যবস্থা করেছেন। (সেই সাথে তোমরা যাতে অনুধাবন করতে পারো তিনিই পরাক্রমশালী ও সত্যিকারের ক্ষমাশীল।

আবু দাউদ এবং তিরমিজি শরীফে হাদীস, হযরত আবু দারদা (রা) বর্ণীত যে, নবীজী (স) বলেছেন, নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করার মধ্য দিয়ে তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করো। নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করার মধ্য দিয়ে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করো। এবং অবহেলিত বঞ্চিত তাদের কল্যাণ করা তাদের সেবা করা যে মর্যাদা নবীজী (সা.) দিয়েছেন সেটা যদি আমরা জানি তাহলে আমাদের আরও ভালো লাগবে।

হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী গ্রন্থের ৩১৪ নম্বর হাদীস, ‘সেবামূলক কাজে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা হচ্ছে আল্লাহর পথে জেহাদকারী ব্যক্তির সমান। কাজ থেকে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত এ মর্যাদা বহাল থাকে’।
বোখারী এবং মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস হচ্ছে, হযরত আবু হুরায়রা বর্ণিত, “বিধবা ও এতিম অসহায় মানুষের কল্যাণে নিরলস পরিশ্রমকারীর মর্যাদা আল্লাহর পথে জেহাদরত মুজাহিদের মতো। তার মর্যাদা সারারাত অবিরাম নামাজ আদায়কারী এবং সারাদিন রোজা পালনকারীর সমতুল্য।

মুসলিম শরীফের এই হাদীসে মহাবিচার দিবসের কথা বলা হয়েছে যে, মহাবিচার দিবসে মহামহিম আল্লাহ অনুযোগ করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে যাওনি।’
অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘প্রভু হে! তুমি তো মহাবিশ্বের প্রতিপালক। (তুমি কীভাবে অসুস্থ হতে পারো?) আমি কোথায় তোমাকে দেখতে যাব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, অমুক অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে দেখতে গেলে সেখানেই আমাকে পেতে?’ আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম। তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান অন্নদাতা! তুমি যেখানে সবার অন্নের ব্যবস্থা করো, সেখানে আমি কীভাবে তোমাকে খাওয়াব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তখন যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, তাহলে তার পুরস্কার আমার কাছ থেকে পেতে?’
আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদমসন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম। তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাও নি।’ অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান তৃষ্ণা নিবারণকারী! তুমি যেখানে মহাবিশ্বের সবার তৃষ্ণা নিবারণ করো, সেখানে আমি তোমাকে কীভাবে পানি পান করাব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তৃষ্ণার্ত তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি।

তুমি কি জানতে না যে, তখন তুমি তাকে পানি পান করালে এখন আমার কাছ থেকে এর পুরস্কার পেতে?” 
আমাদের সবচেয়ে বড় হাদীসবেত্তা পাঁচজন। পাঁচজন হাদীসবেত্তার একজন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস। তিনি ইবনে আব্বাস নামেই পরিচিত। তিনি বলেন, নবীজীকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে কোথাও যাবে, অর্থাৎ তার দুর্গতি দূর করার জন্যে, তার বিপদ মোচন করার জন্যে কোথাও যাবে তার জন্যে এই কাজটা ১০ বছরের এতেকাফের চেয়ে উত্তম! এই কথা যখন ইবনে আব্বাস বলছিলেন, তখন তার চোখ ছলছল করে উঠছিল।  যে কারণে নবীজী (সা.) বলেছেন যে, যিনি অর্থ দান করছেন যে দাতা যিনি সেই দান সংগ্রহের জন্যে শ্রম দিচ্ছেন সময় ব্যয় করছেন যোগাযোগ করছেন এবং যিনি সেই দানটাকে কাজে লাগাচ্ছেন অর্থাৎ যারা এই দান থেকে উপকৃত হওয়ার তাদের উপকার করছেন, অর্থাৎ বিতরণ করছেন যারা সেবা দিচ্ছেন- সবাই দাতার সমান সওয়াবের অধিকারী হবেন, পুণ্যের অধিকারী হবেন।

সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, আয়াত ২৭৪. নিশ্চয়ই যারা তাদের উপার্জন থেকে রাতে বা দিনে, প্রকাশ্যে বা গোপনে, সচ্ছল বা অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না। আয়াত ২৬১. যারা নিজেদের ধনসম্পত্তি আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের এই সৎদান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় সাতটি শিষ আর প্রতিটি শিষে থাকে শত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন। আল্লাহ অনন্ত প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

সূরা কাসাসের ৭৭ নম্বর আয়াত হচ্ছে, আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও মানুষের উপকার করো। দান যিনি যত বেশি করতে পারবেন আল্লাহর অনুগ্রহ তার প্রতি তত বাড়তে থাকবে। আর যিনি করতে পারবেন না যিনি শুধু সঞ্চয়ে মনোযোগী হবেন সবসময় চোখের সামনে অভাবের দৃশ্য, সব হারানোর ভয় তার সামনে মাথাচাড়া দিয়ে থাকবে। যখনই সে চিন্তা করবে সে অভাব এবং সব হারানোর ভয় তাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। 

সূরা আল ইমরানের ৯২ আয়াতে বলা হচ্ছে খুব পরিষ্কার, হে বিশ্বাসীগণ! তোমার প্রিয় ও পছন্দের জিনিস থেকে দান করতে না পারলে তুমি কখনো সত্যিকারের ধার্মিক হতে পারবে না। অন্যের জন্যে তুমি যা-কিছু ব্যয় বা দান করো আল্লাহ তা ভালোভাবেই জানেন।

বিশিষ্ট সাহাবী আবু তালহা যখন কোরআনের আয়াত নাজিল হওয়ার পরে শুনলেন, তখন তিনি তার সবচেয়ে পছন্দের যে খেজুর বাগান বিশাল খেজুর বাগান যেখানে ছয়শ খেজুর গাছ ছিল। তার অনেকগুলো বাগানের মধ্যে এই বাগানটাই ছিল তার সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে প্রিয় এই বাগানটি তিনি মদিনার দরিদ্রদের জন্যে দান করে দিলেন।
নবীজীর (সা.) কাছে এসে বললেন যে, মদিনাবাসীকে আমার সবচেয়ে প্রিয় বাগানটি এজন্যে দিচ্ছি যে এই দানের মাধ্যমে পরকালে তিনি যেন আল্লাহর কাছে সত্যিকারের ধার্মিকের মর্যাদা লাভ করেন।

সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াত- সৎদান এমন একটি শস্যবীজ, যাতে উৎপন্ন হয় সাতটি শিষ প্রতিটি শিষে থাকে শত শস্যদানা। অর্থাৎ দানের বরকত হচ্ছে যে অন্যান্য কাজের নেকি শুরু হয় ১০ থেকে আর দানের শুরুটাই হচ্ছে সাতশ থেকে। সাতশ গুণ থেকে। ১০ গুণ না সাতশ গুণ সাতশ নেকি থেকে শুরু হয় দান। যখন এটা সৎদান হয়।
সূরা বাকারার ২৭১ নম্বর আয়াত হচ্ছে, তোমরা প্রকাশ্যে দান করলে তাও ভালো। আর যদি গোপনে অভাবীকে দাও, তা আরো ভালো। দানের কারণে তোমাদের অনেক পাপমোচন হবে।

সূরা হাদিদের ৭ নম্বর আয়াত হচ্ছে, আল্লাহ ও তার রসুলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে অর্থবিত্তের অধিকারী করেছেন, তা থেকে অন্যের জন্যে ব্যয় করো। তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করবে ও অন্যের জন্যে ব্যয় করবে, তাদের জন্যে মহাপুরস্কার রয়েছে। আসলে সৎদান এটা দান কিন্তু এটাকে আপনি আরেক অর্থে বলতে পারেন এটা হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর সাথে বিনিয়োগ করা। যার মুনাফা তিনি ইচ্ছেমতো দুনিয়া এবং আখেরাতে দুই জায়গায় দেবেন।
দানের ক্ষেত্রে আমরা মনে রাখব যে শুধু অর্থ দানই কিন্তু দান নয়। যে-কোনো সেবা যে-কোনো ভালো কাজ অন্যের কল্যাণে করা যে-কোনো কাজ হচ্ছে দান বা সাদাকা।

হাদীস শরীফে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, দান দ্বারা সম্পদ কমে না। যখন কেউ দান করে তখন তা অভাবীর হাতে পড়ার আগে আল্লাহর হাতে পড়ে। আপনি যার জন্যে দান করছেন সে দান তার কাছে পৌঁছার আগে আল্লাহর হাতে পৌঁছে যায়। দান বিশ্বাসীর হায়াত বৃদ্ধি করে খারাপ মৃত্যু প্রতিহত করে। পানি যেমন আগুন নিভিয়ে দেয় দান তেমনি পাপ নিভায়। যখনই কোনো গুনাহ করে ফেলেন প্রতিদান হিসেবে দান করে দেবেন। 

সাদাকা বা দান এটা আসলে দয়া নয়। ধরুন সঙ্ঘ যে কাজটা করছে তো সঙ্ঘবদ্ধ দানে কল্যাণ এবং বরকত সবসময় অনেক বেশি। সৎদানের শুরু হচ্ছে সাতশ নেকি থেকে সাতশ গুণ। এটাকে রমজানে যে-কোনো কাজের সওয়াব আরো ৭০ গুণ! সাতশ পূরণ ৭০ হলো এবং সঙ্ঘবদ্ধভাবে কোনো কাজের সওয়াব হচ্ছে আরো ৭০ গুণ। তাহলে সাতশ পূরণ ৭০ পূরণ ৭০ অর্থাৎ নেকির পরিমাণ হচ্ছে ৩৪ লক্ষ ৩০ হাজার সওয়াব ৩০ হাজার নেকি।


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি