ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

জীবনের জন্যে ঘরে থাকুন

গোলাম সারোয়ার

প্রকাশিত : ১৬:০৫, ৩ এপ্রিল ২০২০

গোলাম সারোয়ার

গোলাম সারোয়ার

Ekushey Television Ltd.

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ গত বুধবার হোয়াইট হাউসকে অবহিত করেছেন যে, করোনা ভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, এমনকি কথাবার্তার মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে! এর আগে বলা হয়েছিলো, এ ভাইরাস কেবলমাত্র হাঁচি বা কাশির দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ইদানিং নিজেদের কোন একক ধারণার উপর স্থির থাকতে পারছেন না। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা ইউরোপের যে অবস্থা যাচ্ছে, তাতে এখন স্থির থাকার উপায়ও নেই।

করোনা ভাইরাস যে যে পদ্ধতিতে ছড়াতে পারে এ পর্যন্ত বলা হয়েছে, তার পঞ্চাশভাগও যদি সত্যি হতো তবে এতদিনে আমাদের অবস্থা ইউরোপকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ আমাদের অবস্থা এখনো অস্থির নয়।

বাংলাদেশে বহুমতের বহুপক্ষ কাজ করেন। কিছু মানুষের চাওয়া যেন, লাখে লাখে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হোক, হাজার হাজার মানুষ মারা যাক! কিংবা নিদেন পক্ষে সে রকম খবর হোক। বহুজন বিশ্বাসও করেন, দেশে হাজার হাজার করোনা রোগী কিলবিল করতেছে আর সরকার সেসব খবর লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা সারাদিন মূলধারার নিউজগুলো মনিটর করি, সামাজিক মাধ্যমও মনিটর করি। আমরা যেটা দেখতে পাই, এখনো সে রকমের অবস্থা এদেশে বিরাজ করছে না। তবে মানুষের মাঝে ভীতি আছে। 

আবার এটিও সত্য যে, সরকার যে সংখ্যাটা বলছেন মূলসংখ্যা তার চেয়ে বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা। এটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশের জন্যে সত্য নয়। এটি খোদ ইতালি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বাকী বিশ্বের জন্যেও সত্য। যুক্তরাষ্ট্রেও আজ যে সংখ্যাটা বলা হচ্ছে মূলসংখ্যা তারচেয়েও অনেকগুণ বেশি হবে। 

সেখানেও এখনো যাদের টেস্ট করা সম্ভব হয়নি তাদের সংখ্যাটা আসছে না। কাল তাদের ভিতরে যাদের টেস্ট করা হবে তারা গণনাতে চলে আসবে। এটি হলো সক্ষমতার সত্যের ব্যাপার। বাস্তবতা হলো, পৃথিবীর সাতশ' আশি কোটি মানুষের করোনা টেস্ট পৃথিবীর সব দেশ মিলেও এত অল্প সময়ে করা সম্ভব নয়।

আমরা দেখতেছি, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা রকেটগতিতে এগুচ্ছে। সেখানে শুধু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে না, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে অসম্ভব দ্রুত গতিতে। তাদের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো স্বর্গ। কিন্তু এই স্বর্গ আমাদেরকে জারি রাখতে হবে। জারি রাখতে হলে আমাদেরকে সরকারের সুপারিশকৃত স্বাস্থ্য বিধিগুলো মেনে চলতে হবে।

আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, যত অংকের হিসাবই আসুক না কেন, আমাদের অবস্থা তাদের মতো হবে না। আমরা লক্ষ্য করেছি, জাতিসংঘ কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় আমদের ভৎসনা করে বলে থাকেন, আমাদের দেশে সামাজিক ব্যবস্থা দুর্বল, সামাজিক দূরত্ব মেনটেইনের ব্যাপারগুলোও আমাদের মানুষেরা জানেনা কিংবা সচেতন নয়। অথচ চীনের উহান থেকে ভাইরাসটি সাড়ে ছয় হাজার কিলোমিটার দূরের ইউরোপে গিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে আর বার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের আমেরিকায় গিয়ে কেয়ামত করছে অথচ আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশ সে তুলনায় এখনো প্রায় নিরাপদে! কিন্তু চায়না ছিলো আমাদের ইমপোর্ট হাব, ছিলো আমাদের সাথে বেপরোয়া যোগাযোগ। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, পৃথিবীর পাঁচটি মহাসাগরে হাজার হাজার জাহাজ থাকলেও করোনা ভাইরাস ঠিকই খুঁজে ধরলো প্রশান্ত মহাসাগরে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ‘থিউডর রুজবেল্ট’-কে!

তার মানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আমাদেরকে নিয়ে করা কমেন্টগুলো এখানে এখনো কাজ করছে না। কাজ করছে তাদের দৃষ্টিতে এ গ্রহের সবচেয়ে যোগ্য দেশগুলোতে। এগুলো হলো আমাদের এনালাইসিস এবং হাইপোথিসিসি। আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, এসব হাইপোথিসিস আমাদের পক্ষে কাজ করবে। তবে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, নগর পুড়লে দেবালয়ও এড়ায় না। আবার আশেপাশের বাড়িতে আগুন লাগলে তার তাপে আমাদেরও মুখ পোড়া যেতে পারে। তাই আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে। আমাদের আরো দুটো সপ্তাহ ধৈয্য ধরে ঘরে থাকতে হবে, বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে, সাবধানে থাকতে হবে এবং নিরাপদে থাকতে হবে।

অনেক বড় বিপদ এড়াতে হলে অনেক বেশি ত্যাগ করতে হয়। আমাদের অনেক ত্যাগ করতেও হচ্ছে না। শুধু কয়েকটি দিন কষ্ট করে ঘরে থাকতে হবে। আমরা হয়তো খাওয়ার কষ্টে আছি, আয়ের কষ্টে আছি, মেনে নেওয়ার কষ্টে আছি, কিন্তু জীবনের জন্যে এসব স্বপ্ন সময়ের তরে আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে।

লেখক-গবেষক ও কলামিস্ট।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি