জীবনের বিপরীতে জীবিকাকে দাঁড় করানোর প্রয়োজন নেই
প্রকাশিত : ০০:৫৮, ১২ মে ২০২০
ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা হয়েছে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে। আমেরিকার কিছু কিছু রাজ্য এবং ইউরোপের কিছু কিছু দেশ তাদের চরম পরিস্থিতি কেটে গেছে মনে করে লকডাউন কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করেছে যার তাৎক্ষণিক সমালোচনা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জার্মানী এবং দঃ কোরিয়ায় করোনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হতে পারে বলে এখন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এ পর্যন্ত যত দেশ লকডাউন শিথিল করেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্যভাবে করেছে ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, চীন, দঃ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। তাদের দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে যখন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে শূণ্যের কাছাকাছি এসেছে তখন তারা ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নিতে শুরু করেছে।
জীবন আর জীবিকাকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে এই করোনাকালীন পৃথিবীতে। অনেক দেশ এই বিতর্কে জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়েছে; অনেকে দিয়েছে জীবনকে। আমাদের সমাজে এই বিতর্ক উস্কে দিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সে চাপের কাছে নত হয়ে সরকার লকডাউন শিথিল করতে শুরু করে যখন মাত্র আক্রান্তের সংখ্যা এদেশে বাড়তে শুরু করেছিল। লকডাউন থাকলে অর্থনীতি অচল হয়ে থাকে; নিম্ন আয়ের মানুষদের আয়ের পথ থাকে না, সময়মত সরবরাহ করা না গেলে আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রফতানির বাজার হারাতে হবে ইত্যাদি যুক্তিতে এখানে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা শূণ্যের কাছে পৌঁছানো দূরে থাক চূড়ায় পৌঁছানোরও বহু আগে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। গার্মেন্টসগুলো খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। এখনো তা বেড়েই চলছে; বাড়ার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনকে দিন।
করোনার ফলে বাংলাদেশ অর্থনীতি চলতি অর্থ বছরে ২%-৩% হবে বলে প্রাক্কলন করেছে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংক। যদিও তা মনে করেন না এখানকার অর্থনীতিবিদেরা। তারা মনে করেন চলতি বছরে জিডিপি ৬% এর মত হবে। করোনার কারণে সারা দুনিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে। বৃটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে তাদের দেশে এ বছর জিডিপি কমবে ১৪%। এতবড় অর্থনৈতিক ধ্বস সে দেশে বিগত তিনশ বছরে হয়নি। অনেকই ধারণা করছেন করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ত্রিশের দশকের মহামন্দার মত দশকব্যাপী চলতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক অর্থনীতি বাংলাদেশে আশা করা যায় না। এই বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বেই।
২০০৮-০৯ সালের ধনী দেশ সমূহের আর্থিক সঙ্কটের সময় তাদের অর্থনীতি ২%-৩% ক্ষতি হয়েছিল। সে সঙ্কটের প্রভাব আমাদের তৈরি পোশাকের এবং রেমিটেন্সের উপর এতই কম পড়েছিল যে তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। আমাদের তখন অর্থনৈতিক সংকোচন হয়নি বরং জিডিপি প্রবৃদ্ধি তার আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছিল। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক বেশি হবে। একেকটি দেশে কমপক্ষে ৫/৭% করে উৎপাদন কমবে বলে ধারণা দিয়েছে আইএমএফ এবং বিশ্ব ব্যাংক। আমাদের উপর তার কিছু প্রভাব পড়বে। তবে সেটা কতখানী তা এই মুহুর্তে পরিমাপ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আমাদের দেশ ইউরোপ বা আমেরিকার মত অন্য দেশের উপর অনেক বেশি নির্ভর্শীল নয়। তাদের তুলনায় এখানকার অর্থনীতি অনেক বেশি স্বয়ম্ভর। আমাদের অর্থনীতি করোনা পূর্ববর্তী ধারায় ফিরতেও কম সময় নেবে। বাংলাদেশে করোনার কারণে যে ক্ষতিটা তা হবে মূলত হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন শিল্প, তৈরি পোশাক এবং রেমিটেন্সে। সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের এখানে চলতি এবং আগামী অর্থবছরে মোট ৫% এর মত অর্থনৈতিক ক্ষতি ধরে নেয়া যায়।দুই অর্থ বছরে ৫% অর্থনৈতিক ক্ষতি কি খুব বড় কিছু? এর জন্য কি লক্ষ মানুষের প্রাণের ঝুঁকি নিতে হবে?
করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের ঘোষণা করা ৯৫ হাজার কোটি টাকার অধিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রধানত চার ভাগে ভাগ করাঃ ১) বৃহৎ ও রফতানি শিল্প, ২) ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প, ৩) কৃষি এবং ৪) দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষ। দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের জন্য রয়েছে ২,০০০ কোটি টাকার নগদ সহায়তা এবং ১ কোটি রেশন কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজির চাল। কৃষির জন্য ৩% সুদে ঋণের ব্যবস্থা। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ৪.৫% সুদে ঋণ সুবিধা এবং বৃহৎ ও রফতানি শিল্পের জন্যঃ ক) ৪.৫% সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকার নগদ ঋণ সুবিধা, খ) রফতানি ও আমদানিকারকদের জন্য ফাইন্যান্সিং সুবিধা, এবং গ) ২% সুদে রফতানিকারকদের শ্রমিকদের জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার বেতন সুবিধা। সকল ঋণের জন্য এক বছর সময় ধরে কর্তিত হারে সুদ সুবিধা প্রদান করবে। এর বাইরেও রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত পুরনো ঋণকে খেলাফি ঘোষণা না করা এবং দুই মাসের সুদ প্রদান থেকে করোনাকালে বিরত রাখা। আরও কিছু প্রণোদনা আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এসব প্রণোদনা ঘোষণার সপ্তাখানেকের মধ্যে ঋণ সমূহের বিস্তারিত নিয়মনীতি প্রকাশ করে ব্যাবসা বাণিজ্য চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মাবলীর কঠোরতার কারণে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে তার সুযোগ বাস্তবে ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা নিতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ঋণ অনুমোদনের এখতিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এবং ঋণ দেয়া যাবে বিগত বছরের অডিট রিপোর্ট বা ব্যাংকের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন বিক্রয় প্রমাণের সাপেক্ষে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের বিপরীতে বন্ধকের বিষয়ে কিছু বলেনি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বন্ধকী ছাড়া ঋণ দেয় না। আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রমাণাদী (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ইনভয়েস, মানি রিসিট, ক্রয় চালান, ইত্যাদি) সংরক্ষণের প্রচলন নেই; বেশির ভাগ কেনাবেচা হয় নগদ টাকায়। অডিট রিপোর্টতো বহু দূরের কথা। বাস্তবতা হচ্ছে ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা এই ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না। ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এখনি ঋণের শর্তগুলো বাস্তব সম্মত করা দরকার। মনে রাখতে হবে এরা সবার চেয়ে অনেক বেশি মানুষের কর্ম সংস্থান করে থাকেন। তৈরি পোশাক শিল্প যেখানে মাত্র ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায় সেখানে দেশের মোট কর্মক্ষম মানুষের ৪০ শতাংশ বা প্রায় ৪ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে।
করোনার কারণে ৫ থেকে ৬ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে। এদের সঙ্গে আছে তাদের উপর নির্ভরশীল মানুষ। তাছাড়া রয়েছে হতদরিদ্র এবং দুঃস্থ ও বয়স্ক মানুষ যারা সকলেই করোনার কারণে আয় হারিয়ে সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বিভিন্ন দেশ করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্র এবং হতদরিদ্র মানুষদের হাতে সরাসরি নগদ অর্থ পৌঁছে দিচ্ছে। আমেরিকা দিচ্ছে ৯০% মানুষকে, দক্ষিণ কোরিয়া দিচ্ছে ৭০% মানুষকে। ৬০% নাগরিকদের নগদ সহায়তা দেবার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যাণার্জি। বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের মতই। এখানে সাড়ে ষোল কোটি মানুষের৬০% হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি মানুষ বা ২.৫ কোটি পরিবার।
ঈদের আগে পরিবার প্রতি ২,৪০০ টাকা নগদ সহায়তা দেবার জন্য সরকার এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে তৈরি করা ৫০ লক্ষ পরিবারের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছে।এই টাকা কি একবারই দেয়া হবে না-কি করোনার কারণে যতদিন অর্থনীতি বন্ধ থাকবে ততদিন প্রতি মাসে দেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। হতদরিদ্র, দুঃস্থ ও বয়স্ক মানুষদের জন্য করোনাকালের আগে থেকেই ৫০ লক্ষ রেশন কার্ডের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ত্রিশ কেজি চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। তাছাড়া তারা সকলে করোনার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ নয় এবং তাদের নিজস্ব একটা আয়ের ব্যবস্থা আছে। এ তালিকা বৃদ্ধি করে ১ কোটি পরিবারের জন্য করা হলে বেঁচে যাবে হতদরিদ্র, দুঃস্থ ও বয়স্ক মানুষেরা। রক্ষা পাবেনা করোনায় কর্মহীন অন্য ১.৫ কোটি পরিবার। ইতোমধ্যে দুই মাসের মত সময় পার হয়ে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার তাদের জন্য কিছুই করেনি। ঈদের আগে ২,৪০০ টাকা দেয়ার যে পরিকল্পনা রয়েছে তাইযথেষ্ট নয়, ঈদের পরে কি হবে? ২,৪০০ টাকায় একটা ৪ সদস্যের পরিবারের এক মাসের খাদ্য খরচই মেটে না। বাকিটা সে পাবে কোথায়? অন্যের কাছে হাত পাতবে? বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশীরা আর ভিক্ষুকের জাতি নয়। দুর্দিনে রাষ্ট্র তাদের সহায়তা দেবে। করোনায় কর্মহীন ১.৫ কোটি পরিবারের কাছে পরিবার প্রতি মাসে অন্তত ৫,০০০ টাকা করে পৌঁছাতে হবে।এই মানুষদের কাছে টাকা পৌঁছাতে পারলে তার সুবিধা কৃষকও পাবে। এরা খরচ করতে পারলে শাক, সবজি, ফলমূলের দাম এতটা কমে আসত না। এরা খরচ করলেচালু থাকবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে উৎপাদনকারী শিল্প কারখানা। তাদের নিয়ে সরকারকে ভাবতে হত না।
দেশে এখনো মোট কর্মক্ষম মানুষের প্রায় ৪০% বা ৪ কোটি মানুষ কাজ করে কৃষি খাতে। মাঠে দূরে দূরে থেকে কৃষি কাজ করা যায় বলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নীতি মেনেই এগিয়ে চলছে কৃষিকাজ। করোনাভাইরাস কৃষকের জন্য কাজের অভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। বোরো ধান টাকার সময় বরং বরাবরের মত কৃষকের সঙ্কট দেখা গিয়েছে। করোনায় কর্মহীন কিছু শ্রমিক সেখানে যুক্ত হয়ে কিছু আয় করার সুযোগ পেয়েছে। করোনাকালে তাদের আয় কমে যাওয়ার কোন কারণ নেই। ৩% সুদে কৃষি খাতের জন্য যে ৫,০০০ কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে এর কতটা বিতরণ করা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে বিভিন্ন কারণে প্রান্তিক কৃষক কৃষি ঋণ সুবিধা পায় না। এর সুবিধা পায় অবস্থাপন্ন সচ্ছল কৃষকেরা। দরিদ্র কৃষক এখানেও বঞ্চিত হবে।
সরকারের প্রণোদনার প্রায় পুরোটার সুফল ভোগ করবে মাঝারি এবং বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাঝারি আকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে শর্তাবলী দিয়েছে তাতে তারা তাদের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার একটা ছোট অংশ নিতে পারবে; বৃহৎ অংশের সুবিধা পাবে রফতানীকারক এবং অন্যান্য বৃহৎ ব্যবসায়ের মালিকেরা। বড় ব্যবসাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে নইলে করোনা পরবর্তী সময়ে দেশ আবারপূর্ণোদ্যমে চালু করা যাবে না। তা না করা গেলে অনেক অনেক পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এই করোনাকালে বৃহৎ শিল্প বাংলাদেশকে শুধু কোটি কোটি মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকিতেই ফেলছে না, অর্থনীতিতেও যোগ করতে পারছে না তেমন কিছু।তারা না পারছে পুর্ণশক্তিতে উৎপাদন করতে; না পারছে উল্লেখ করার মত কিছু পণ্য রফতানি করতে। আমাদের ক্রেতাদের বাজার এখন মন্দা। তারা জীবন বাঁচাতে ব্যাস্ত। জামাকাপড় কেনার কথা ভাবারও সুযোগ তাদের নেই। আন্তর্জাতিক বাজার হারানো এত সহজ নয়। আমাদের মত দক্ষতা এবং উৎপাদন সক্ষমতা রাতারাতি কোন দেশ অর্জন করতে পারবে না যে তারা আমাদের বাজার নিয়ে যাবে।আভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য তারা কিছু উৎপাদন করতে পারলেও করোনাকালে চাহিদা কমে যাওয়ায় তাদের বিক্রি কমে গেছে অনেক। করোনা ঝুঁকি এড়িয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ চালু রেখে এখন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখছে কৃষি আর ক্ষুদ্র, ছোট, এবং মাঝারি শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় রফতানিকারক এবং অন্যান্য বৃহৎ শিল্পের ভূমিকা এখন সামান্য।
প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কোটি কোটি মানুষকে করোনায় আক্রান্ত করার ঝুঁকি নিয়ে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য বৃহৎ শিল্প চালু রাখার মানে হয় না। করোনা পরবর্তী সময়ে যাতে তারা দ্রুত অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞে ফিরতে পারে তা নিশ্চিত করাই যথেষ্ট। নিম্ন আয়ের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব সরকার যথাযথ ভাবে পালন করার যোগ্যতা রাখে। দেশে রয়েছে একটা শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ১ কোটি রেশন কার্ডের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে চাল বণ্টন করতে পারলে আর ১.৫ কোটি কর্মহীন পরিবারের হাতে মাসে ৫,০০০ করে টাকা পৌঁছাতে পারলে তারা তা খরচ করে চাঙ্গা রাখবে ব্যাসিক অর্থনীতি। কম প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ছেঁটে দিয়ে, বিলাসদ্রব্যের উপর বাড়তি কর বসিয়ে এবং দুর্নীতি কমাতে পারলে মানুষ বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবেনা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে যথেষ্ট। রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ধার করার অনেক সুযোগ।আমাদের কৃষি আর নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা ও শিল্পই করোনাকালে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে পারে। জীবনকে জীবিকার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে তাদের মধ্যে ভারসাম্য আনার কিছু নেই। জীবন বাঁচলে অর্থনীতি। অর্থনীতির জন্য জীবন নয়।
লেখকঃ চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড।
এসি
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।