জুলাই অভ্যুত্থানের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
প্রকাশিত : ০৯:০৭, ৩০ মার্চ ২০২৫ | আপডেট: ০৯:০৮, ৩০ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সাহসী নারী শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে সম্মানজনক ‘মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’। আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকা (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ—আইডব্লিউওসি) পুরস্কারের পাশাপাশি এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী ১ এপ্রিল ওয়াশিংটনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
এ অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
নারী শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনে একদল সাহসী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কঠিন পরিস্থিতির মুখেও তারা দৃঢ়ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর দমননীতি ও সহিংসতার ঝুঁকি উপেক্ষা করে তারা পুরুষ সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপের কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও এই নারী শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী উপায়ে আন্দোলনের সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন। তাদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
এই স্বীকৃতির জন্য ‘উইমেন স্টুডেন্ট প্রোটেস্ট লিডারস অব বাংলাদেশ’ নামে নারী শিক্ষার্থীদের একটি দলকে মনোনীত করা হয়েছে।
পুরস্কার প্রত্যাখ্যান উমামার
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, নারী আন্দোলনকারীদের সম্মানিত করা অবশ্যই গর্বের বিষয়। তবে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে তিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই পুরস্কার এমন এক রাষ্ট্র দিচ্ছে, যা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাসংগ্রামকে অস্বীকার করছে এবং ইসরায়েলের বর্বরোচিত আগ্রাসনকে বৈধতা দিচ্ছে। তাই আমি এই পুরস্কার গ্রহণ করতে পারছি না।”
মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ডের ইতিহাস
২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ‘মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান শুরু করে। এটি বিশেষভাবে দলগতভাবে সাহসিকতা প্রদর্শনকারী নারীদের সম্মানিত করতে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইটের নামে এই পুরস্কারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরানের সেই নারীরা, যারা মাসা আমিনির হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিলেন।
২০০৭ সাল থেকে আইডব্লিউওসি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা নারীদের এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
এবার আইডব্লিউওসি পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন বুরকিনা ফাসোর হেনরিয়েত্তে দা, ইসরায়েলের অমিত সৌসানা, পাপুয়া নিউগিনির মেজর ভেলেনা ইগা, ফিলিপাইনের অ্যাঞ্জেলিক সঙ্কো, রোমানিয়ার জিওর্জিয়ানা পাসু, দক্ষিণ সুদানের জাবিব মুসা লোরো বাখিত, শ্রীলঙ্কার সামিনি বিজেদাশা ও ইয়েমেনের আমাত আল সালাম আল হাজি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে নির্বাচিত করেছে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী সরকারের পতন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কারণে বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এসএস//
আরও পড়ুন