ঢাকা, শনিবার   ০৪ জানুয়ারি ২০২৫

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৫, ১ জানুয়ারি ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দিলেও এর খসড়া তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (১জানুয়ারি) জুলাই ঘোষণাপত্রের অবস্থা নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খসড়া তৈরির প্রক্রিয়ায় সব পক্ষকেই অন্তর্ভুক্ত করা হবে, ফলে এ নিয়ে মতভেদ হওয়ার কোনো শঙ্কা সরকার দেখছে না।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের ড্রাফট করিনি। ড্রাফটের প্রক্রিয়া শুরু হবে।”

এ বিষয়ে সকল দল ঐকমত্য হবে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব পক্ষগুলো মোটামুটিভাবে একমত যে একটা প্রোক্লেমেশন হতে হবে। সবপক্ষ, তাদের ওই সম্মতি থাকবে বলেই আমরা আশা করি। আর যেহেতু ড্রাফটিং এর প্রক্রিয়াতে সকলেরই অংশগ্রহণের সুযোগ সরকার করে দেবে, কাজেই মতানৈক্য হওয়ার কোনো কারণ নাই।

বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া ২০২৪ সালের শেষ দিন মঙ্গলবার ‘মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি’ ঘোষণা করে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। শহীদ মিনারের ওই কর্মসূচি থেকেই ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কথা ছিল।

সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

বলা হয়েছিল, এই ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ হবে ‘আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।

ঐকমত্য গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল ঘোষণাপত্রের খসড়া। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘আমরা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম জনগণ হিসেবে ঘোষণা করলাম।’

গতকাল মঙ্গলবারের এই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই।

কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে সোমবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

এক বিফ্রিংয়ে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে। আমরা আশা করছি, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।

এরপর সোমবার গভীর রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তারা তাতেই সমর্থন দেবে।

অর্থাৎ, ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে। তবে মঙ্গলবার শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিও বহাল থাকবে।

এরপর মঙ্গলবার শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দেন।

জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে জুলাই প্রোক্লেমেশন ঘোষণা না করলে ছাত্রজনতা আবারও ‘রাজপথে নামতে বাধ্য হবে’ বলে তারা হুঁশিয়ার করেন।

বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। তিনি দাবি করেন, সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে।

উপদ্ষ্টো বলেন, রাজনীতিবিদদের থেকে যে ভাইবটা পেয়েছি, যে বার্তাটা পেয়েছি যে, তারাও সংস্কার চায়। এবং তারাও বলছে, কেউ কেউ বলছে যে মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন, কেউ বলছে সংস্কার হোক, কেউ বলছে নির্বাচন প্রাধান্য পাবে। আর আমাদের তালিকায় সবটাই প্রাধান্য। নির্বাচনও প্রাধান্য; সংস্কারও প্রাধান্য।

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দাবি করে বিএনপি বলে আসছে সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকা উচিত। এ বিষয়েও উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, আসলে বিএনপির থেকেও আমাদের সাথে যখন কথা বলা হয়, তারা এ কথা বলেনি যে সংস্কারের প্রয়োজন নেই। তারা এ কথাটা বলে যে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। এবং তারা সংস্কারের ক্ষেত্রে নিজেরাও তো মতামত দিচ্ছে। তারাও লিখিত মতামত দিচ্ছে। তার মানে হচ্ছে যে, রাজনীতিবিদরাও চাচ্ছেন সংস্কার হোক। এখন সংস্কারের ব্যাপ্তি কতটুকু হবে, সংস্কার কোন কোন ক্ষেত্রে হবে, সেটা কার মাধ্যমে হবে, এইটা করার জন্য রাজনীতিবিদদেরও একটা অবস্থান আছে, সেটার ক্ষেত্রে কিন্তু আবার আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন যে ঐকমত্যের জন্য আলাদা কমিশন করবেন। এবং সেটার নেতৃত্ব দেবেন উনি নিজেই।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারত থেকে ফেরত আনার ব্যাপারে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে যে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। এবং ভারতে সাথে আমাদের একটা চুক্তি আছে, সেটাও আমরা বলেছি। সেখানে একটা ব্যতিক্রম আছে সেটাও বলেছি। এখন ভারত কী অবস্থান নেবে সে অবস্থান কতদিন… ধরেন একটা অবস্থান প্রাথমিকভাবে নেওয়া যায় আবার চূড়ান্ত অবস্থানের দিকেও দেশগুলো যেতে পারে। সেগুলো ভবিষ্যতের জন্যই আমাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে আমরা চাইব উপস্থিতিতে বিচার। যদি উপস্থিতিতে বিচার না হয় তাহলে যেভাবে করে বিচার প্রক্রিয়া করতে হয় সেভাবেই করব।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি-না, সেই প্রশ্নে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে কোন দল অংশগ্রহণ করবে আর কোন দল অংশগ্রহণ করবে না এটা তো আমরা বলে দেব না। যে দল অংশগ্রহণ করতে চায়, সে দল অংশগ্রহণ করবে। কোন দল কেমন করে অংশগ্রহণ করবে সেটা তো সেই দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে কী, এই সমস্ত কথাগুলো নির্বাচন কমিশন থেকেই আসলে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি আপনারা কোন অবস্থান দেখতেন যে সরকার এই দল নিষিদ্ধ করছে, তখন আপনারা সরকারকে প্রশ্ন করতে পারতেন। তাছাড়া কোন দল নির্বাচন করবে না করবে, এই প্রশ্নের উত্তর নির্বাচন কমিশনই দেবে। এখনো তো এ বিষয়ে সরকার কোনো মতামত জানায়নি। কোনো অবস্থান নেয়নি যে আওয়ামী লীগকে আমরা নিষিদ্ধ করব। এরকম কোনো অবস্থা তো নেয়নি।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি