ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

জেনে নিন মনের অসুখের দাওয়াইগুলো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫২, ১৪ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১২:২১, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবনযাপন। কাজে-অকাজে নানা কারণে সবাই দৌড়াচ্ছি। আর এর ফলে বাড়ছে শরীর ও মনের চাপ। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু জেনে রাখা ভালো, মনের অসুখ হলে লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসা করানো দরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-র এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে বয়ঃসন্ধির কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মনের অসুখ বাড়ছে। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো ২০ শতাংশ ছেলে-মেয়েদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা যায়। ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ৫০ শতাংশের এবং ২৪ বছর বয়সে ৭৫ শতাংশের মনের অসুখ ধরা পড়ে।

দেখা গেছে, সত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে ছোটরা ১৮ বছরের মধ্যে কোনও না কোনও সময় মানসিক সমস্যার শিকার হয়। বড়রা তা বুঝতে না পেরে বকাবকি আর মারধর করলে সমস্যা বেড়ে গিয়ে আত্মহনন পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। বিভিন্ন মনের অসুখের মধ্যে আছে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, ইটিং ডিসর্ডার, পারসোনালিটি ডিসর্ডার, বাইপোলার ডিসর্ডার, স্ক্রিজোফেনিয়া ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনের অসুখের উপসর্গ হিসেবে চুপচাপ বসে থাকা, চিৎকার চেঁচামেচি, জিনিসপত্র ভাঙচুর, মারধর আত্মহত্যার কথা বলা ও চেষ্টা করা ইত্যাদি দেখা যায়। এ রকম হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

মনের সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেট

বাবা-মা দু‘জনেই ব্যস্ত, অন্যদিকে ছোট পরিবার বাড়িয়ে দিচ্ছে শিশুদের একাকিত্ব। তাই বাচ্চাদের সময় কাটে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। বাচ্চা থেকে বড় সবার মনের অসুখের এটি এক অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে বাস্তবকে মেলাতে না পারায় সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে বের করার দায়িত্ব অবশ্যই বাবা-মাসহ কাছের মানুষদের। একই সঙ্গে স্কুলেরও একটা দায়িত্ব আছে। তবে সবার আগে সচেতন হতে হবে বাড়ির মানুষদের। বাবা-মা নিজেরাই যদি ইন্টারনেটে আসক্ত হন, বাচ্চাকে সময় দেবেন কিভাবে! কাছের মানুষদের সঙ্গ না পেলে বাচ্চাদের সমস্যা হবেই। শিশু থেকে বয়স্ক সবারই মনের অসুখের পেছনে একাকীত্ব একটা বড় কারণ।

আপনি আচরি ধর্ম

ছোটদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা ক্রমশ বাড়ছে। তাই প্রতি দিনই বাবা-মা-বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলা, এমনকি সহপাঠীদের মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে। এর জন্য কিন্তু বড়দের ভুমিকা নেহাত কম নয়। বিশেষ করে ছোট থেকে বাবা-মাকে যেমন আচরণ করতে দেখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের আচরণে তার ছাপ পড়ে। বেশির ভাগ মা তাদের বাচ্চাকে টিফিনের ভাগ দিতে বারণ করেন। অথচ বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার মধ্যে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলার সূত্রপাত। এমনকি, কোনও সহপাঠী যদি তার থেকে এক-দু‘নম্বর বেশি পায় তাই নিয়েও অনেক মা-বাবা তুলনা করে বাচ্চাটিকে হেয় করেন। এর থেকে বাচ্চাদের মনে হিংসার সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে ক্লাসে কিন্তু সবাই ফার্স্ট হয় না। আর পড়াশোনা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দিলে পড়ার প্রতি বাচ্চার অনীহা তৈরি হবে, এ কথাও বোঝা উচিত। বাচ্চাকে ভাল ব্যবহার শেখাতে হলে নিজেদেরও সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা দরকার। ছোটদের সামনে কখনও সহকর্মী বা বসের নিন্দা অথবা আত্মীয়দের নিন্দা ও সমালোচনা করবেন না। সব থেকে বড় কথা ছোটদের সব সময় একটা নিয়মের মধ্যে বড় করে তোলা উচিত। যা চাইবে তাই করতে দিলে মনের সমস্যা বাড়বে বই কমবে না।

মানসিক সমস্যায় সহযোগিতা করুক কর্মপ্রতিষ্ঠানও

মনের অসুখ নিয়ে আগের থেকে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু কাজের জায়গায় এই সাহায্য পাওয়া যায় না। আজকের যুগেও মানসিক সমস্যার কথা শুনলে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। বিশেষ করে করপোরেট সংস্থার অনেক কর্মীকে বলতে শুন, জ্বর হলে বা পা ভেঙে গেলে ছুটি নিতে পারি, কিন্তু কাউন্সেলিংয়ের জন্যে ছুটি পাওয়ার আবেদন বলাই যায় না। এই ধারণা বদলাতে না পারলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। একই ভুমিকা নিতে হবে স্কুলগুলোকেও। বাচ্চাদের কোনও মনের সমস্যা হলে বকাবকি বা শাস্তি না দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে।

মন ভাল রাখার কিছু উপায়

১. মনের ভাব সব সময় প্রকাশ করা উচিত। কাছের মানুষদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিলে যেমন আনন্দ বহু গুণ বেড়ে যায়, তেমনই দুঃখ ভাগ করে নিলে দুঃখ অনেক কমে যায়।

২. কম ঘুম হলে মনের উপর চাপ বাড়ে, ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমনো উচিত।

৩. সঠিক ডায়েট মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। তাই সুষম খাবার খেতে হবে।

৪. মা, বাবা, ভাই, বোন আর ভাল বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটালে মন ভাল থাকবে। মোবাইলে চ্যাট না করে সামনাসামনি কথা বললে মনের অসুখ পালিয়ে যায়।

৫. সপ্তাহে এক দিন কিছুক্ষণ সময় ছুটি উপভোগ করা দরকার। ভাল লাগার জিনিস তা গান শোনাই হোক বা বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া- যা ভাল লাগে তা-ই করতে হবে।

৬. নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন ঠিক রাখা দরকার। ওজন বাড়লে ডিপ্রেশন বাড়ে।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি