জোট ও ফ্রন্টে কে পাচ্ছে কত আসন?
প্রকাশিত : ১০:০৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৮
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর মধ্যে কে কত আসন পাচ্ছেন সে আলোচনা এখন তুঙ্গে। গতকাল রোববার দিনভর আলোচনায় দফায় দফায় বৈঠক করে দুই জোটের নেতা-কর্মীরা। দিনে আসন বণ্টন চূড়ান্ত না হওয়ায় একই দিন সন্ধ্যার পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও জোট-ফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে দেখা যায়। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দুই জোটের নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দলের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ২০-দলের শরিক দলগুলোরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এখন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রার্থী তালিকা তৈরির জন্য তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঐকমত্যে যাওয়া হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৮ নভেম্বর। এর আগেই সব প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে।
রোববারের বৈঠক শেষে ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টনে সমঝোতা হয়েছে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আজ সোমবার আবারও বৈঠক করে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করবে বিএনপি। রোববার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই জোটকে ৬০টি আসন ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। এর মধ্যে ২০-দলীয় জোটকে ৪২টি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ১৮টি আসন ছাড় দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে গণফোরামকে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০টি আসন ছাড়তে পারে বিএনপি।
এছাড়া নাগরিক ঐক্যকে ২-৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডিকে ৩টি এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকেও ৩টি আসন ছাড় দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, ২০-দলীয় জোটের শরিক জামায়াত শেষ পর্যন্ত ৩৫টি আসন পেতে দরকষাকষি করছে। তাদের সর্বোচ্চ ২৫টি আসন ছাড় দিতে রাজি হয়েছে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৮ আসনে নির্বাচন করা জামায়াত ৩৩টিতে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল। পাঁচটি আসনে বিএনপি ও জামায়াত দুই দলেরই প্রার্থী ছিল। গতবারের ৩৩টির ২৭টিতে এবারও জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত।
গতবারের উন্মুক্ত পাঁচটি আসনের তিনটিতে জামায়াত দ্বিতীয় হয়েছিল। বিএনপির অবস্থান ছিল তৃতীয়। এগুলোতেও এবার জোটের মনোনয়ন চায় জামায়াত। ওই ৩০টি ছাড়াও জামায়াত নতুন করে রাজশাহী-১, বগুড়া-৪, ঢাকা-১৫, সাতক্ষীরা-১ ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মনোনয়ন চায়। তবে বিএনপি গত রাত পর্যন্ত জামায়াতকে ২৫টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। সব ছেড়ে জামায়াতের দাবি ছিল ২৭টি আসনে। বাকি দুটিতে তারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারে বলে জানা গেছে।
জামায়াতকে যেসব আসন ছাড়ছে বিএনপি: এগুলো হলো : ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম-৪ নুরুল আলম মুকুল, গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৪ ডা. আবদুর রহীম সরকার, বগুড়া-৪ মাও. তায়েব আলী, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-১ আবদুল বাসেত, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আবদুল আলীম; খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার; খুলনা-৬ আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-২ শামীম সাঈদী, সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের মধ্যে এলডিপির কর্নেল (অব.) অলি আহমদ চান ৬টি আসন। বিএনপি চারটি আসনে তাদের ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। বাকি দুটিও পাওয়া যাবে বলে এলডিপির আশা। তাদের আসনগুলো হলো- কর্নেল অলি আহমদ (চট্টগ্রাম-১৪), দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আবদুল করিম আব্বাসী (নেত্রকোনা-২), এম ইয়াকুব আলী (চট্টগ্রাম-১২) এবং অ্যাডভোকেট মঞ্জুর মোর্শেদ (ময়মনসিংহ-১০) অন্যতম।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপির) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ভোলা-১), কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (চট্টগ্রাম-৫), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান (পঞ্চগড়-২), মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান (নীলফামারী-১), জমিয়তে ওলামায়ের মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের জন্য (যশোর-৫), জমিয়তে ওলামায়ের শাহীনুর পাশা চৌধুরী (সুনামগঞ্জ-৩), বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার (যশোর-৪)। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের (হবিগঞ্জ-৪), এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২)। জাপা (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), দলের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১)। এই দলের পক্ষ থেকে আরও দুটি আসনের জন্য জোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আহসান হাবিব লিঙ্কন (কুষ্টিয়া-২) অন্যতম। তবে রাজনৈতিক দল ছাড়াও সাম্যবাদী দল সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ (নারায়ণগঞ্জ-৫), বাংলাদেশ লেবার পার্টি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান (পিরোজপুর-১) আসনে মনোনয়ন চাইছেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু (ঢাকা-৭), অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ (মৌলভীবাজার-২), গণফোরামে যোগদানকারী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রীর শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে শাহ রেজা কিবরিয়া (হবিগঞ্জ-১), মফিজুল ইসলাম খান কামাল (মানিকগঞ্জ-৩) ও জানে আলম (চট্টগ্রাম-১০) আসন ছাড় দিতে পারে বিএনপি। গণফোরাম আরও তিনটি আসন চায় বলে জানা গেছে।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব (লক্ষ্মীপুর-৪), তানিয়া রব (ঢাকা-১৮), আবদুল মালেক রতন (কুমিল্লা-৪)। জেএসডি আরও দু-একটি আসনের জন্য দরকষাকষি করছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নাম (টাঙ্গাইল-৪) ও (টাঙ্গাইল-৮)- এই দুই আসনের একটির জন্য থাকছে। এর বাইরে ইকবাল সিদ্দিকীর জন্য (গাজীপুর-৩) আসন চাচ্ছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে (বগুড়া-২) আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে বিএনপি। এ ছাড়াও তিনি এস এম আকরাম হোসেন (নারায়ণগঞ্জ-২) আসনসহ আরও একটি আসন বিএনপির কাছে দাবি করেছেন বলে জানা গেছে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ‘আমরা চাই সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পাক। সেক্ষেত্রে কাকে কয়টি আসন দেওয়া হচ্ছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা শিগগিরই চূড়ান্ত হবে বলে আশা রাখছি। আমরা ৩৫ আসনে দলীয় প্রার্থীর তালিকা দিয়েছি। এখন বিএনপি যদি যৌক্তিকভাবে পাঁচটি আসনও দেয় তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আরকে//
আরও পড়ুন