টক স্বাদের কাউফল
প্রকাশিত : ১১:১৬, ২০ জুন ২০১৯
আমাদের দেশ থেকে অনেক ফল হারিয়ে যেতে বসেছে। এর মধ্যে কাউফল হলো একটি। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এই ফলের পরিচয় তেমন নেই। টেনিস বলের মতো গোলাকার আকৃতির। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রংয়ের এবং পাকলে হলুদ বা কমলা রং ধারণ করে। স্বাদে টক জাতীয়। বনে-জঙ্গলে এর গাছ বেশি দেখা যায়। তাই কাউফলকে অনেকে বুনো ফল হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
ইংরেজি নাম Cowa (mangosteen), বৈজ্ঞানিক নাম Garcinia cowa Roxb, এক ধরনের অপ্রচলিত টক স্বাদের ফল। এর অন্যান্য নাম হলো- কাউয়া, কাগলিচু, তাহগালা, ক্যাফল, কাউ-গোলা ইত্যাদি। এর গাছ মাঝারি আকৃতির , ডালপালা কম, উপরের দিকে ঝোপালো। গাছের রঙ কালচে । সাধারণত জঙ্গলে এই গাছ দেখা যায়। ফলের আকার লিচুর সমান বা সামান্য বড় হয়।
আমাদের দেশ ছাড়া ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ চীন, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশে কাউ গাছ দেখা যায়। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও কাউ দিয়ে জ্যাম তৈরি করা হয়।
সারাদেশে অল্পবিস্তর কাউফলের দেখা মেলে। তবে সিলেট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে কাউফলের দেখা মেলে বেশি। পিরোজপুর ও বাগেরহাট অঞ্চলেও এ ফল জন্মে। অনেক গৃহস্থ বাড়ির লোকজন শখ করেও দুই একটি গাছ লাগায়। প্রাকৃতিকভাবে বীজ থেকে এর চারা হয়ে থাকে। তবে এর বাণিজ্যিক আবাদ নেই।
গাছে ফুল ধরে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে। আর ফল পাকে জুন-জুলাই মাসে। ফল গোলাকার, অনেকটা টেবিল টেনিস আকৃতির কিন্তু খাঁজযুক্ত। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এ ফল পাকলে হলুদ বা কমলা বর্ণ ধারণ করে। ফলের ভিতরে চার-পাঁচটি দানা থাকে। ফল পাকার পর এই দানা চুষে খেতে হয়। বীজযুক্ত এসব দানা রসালো ও মুখরোচক। ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়া ছাড়াও জ্যাম-জেলি করেও সংরক্ষণ করা যায়।
কাউফলে আছে প্রচুর ভিটামিন সি যা ত্বকের জন্য অধিক উপকারী। এছাড়া কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেশিয়াম যা শরীরের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এতে আছে খনিজ ও পটাসিয়াম যা হৃদস্পন্দনে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হার্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা করে। সর্দিজ্বর ও ঠাণ্ডা প্রশমনে বিশেষ কার্যকর। এ ফল অরুচিও দূর করে।
কাউ গাছের ছাল খিচুনি রোগের জন্য এবং ফল আমাশয় ও মাথা ব্যথার জন্য ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই গাছের কষ রং ও বার্নিশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
তথ্যসূত্র : এটিএম নাছিমুজ্জামানের ফল পরিচিতি গ্রন্থ এবং ইন্টারনেট।
এএইচ/