টার্কি চাষে সাবলম্বী আইয়ূবের গল্প
প্রকাশিত : ১৪:৫৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
টার্কি খামারী আবু আইয়ূব (২৬) বর্তমানে খুব স্বাচ্ছন্দেই চালাচ্ছেন তার সংসার। কিন্তু অল্প কিছু দিন আগেও দিনমজুরের কাজ করে তার যা আয় হতো তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলা সহজ ছিল না।
বাবা-মা ও স্ত্রীসহ এক ছেলে ও মেয়ে নিয়ে আইয়ূবের সংসার। দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য পিকেএসএফের সহায়তায় এবং স্থানীয় এনজিও জাকস ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্তাবধানে তিনি টার্কি শুরু চাষ করেন। আত্মপ্রত্যয়ী এ খামারি বর্তমানে অনেকটাই সাবলম্বী এবং অন্যকেও এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন।
আবু আইয়ূবের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দুরাইল অঞ্চলে । ২০১৬ সালের প্রথম দিকে নিজ বাসস্থানের পাশে ৪০ শতাংশ জমির উপরে টার্কি খামার গড়ে তোলেন তিনি।
বর্তমানে শুধু যে আবু আইয়ূব টার্কি চাষ করেন তা কিন্তু নয়। আবু আইয়ূবের দেখা দেখি দুরাইলে প্রায় ১০০ টি পরিবার টার্কি পালন শুরু করেছেন। তারাও তাদের ভাগ্যের চাকা বদলাতে চান।
আইয়ূবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি প্রথমে পিকেএসএফ ও জাকস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ২০টি বাচ্চা দিয়ে টার্কি পালন শুরু করেন। তাতে খরচ পড়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে পিকেএসএফ ও জাকস ফাউন্ডেশন থেকে তিনি পেয়েছিলেন ২০,০০০ হাজার টাকা।
আইয়ূব ২০১৬ সাল থেকে ২০টি টার্কি দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ টার্কি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার খামারে টার্কি রয়েছে ১০০ টি। খামারে ৫০ টি ডিম রয়েছে। এখন ডিম দেওয়ার উপযোগী প্রতি জোড়া টার্কি বিক্রি করছেন সাড়ে সাত হাজার টাকায়। প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা করে।
টার্কির লালন পালন নিয়ে খামারি আবু আইয়ূব বলেন, টার্কি পালন থেকে আমি প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার টাকা আয় করি। আমি আমার খামারে তার্কির পাশাপামি তিতির, জয়পুরী ও সিলকী পাথিও পালন করে থাকি।
অন্যান্য পাখি পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার্কি মুরগী চাষ করা থেকেই অন্যান্য পাখি পালনের প্রতি আমার আগ্রহ আসে। তাই তার্কি ছাড়াও অন্যান্য পাখি পালন করি। সবমিলিয়ে মাসিক আয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবমিলিয়ে আমার মাসিক আয় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা।
ডিম বিক্র ও ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চা বা ডিম বিক্রি নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা নেই । আশপাশের এলাকার লোকেরা বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। আমাদের এলাকায় ইনকিউবেটর রয়েছে সেখান থেকে আমরা সহজেই বাচ্চা ফুঁটাতে পারি। বাচ্চা ফুঁটাতে আমাদের ১০ থেকে ১২ টাকা খরচ হয়।
জানা গেছে, বড় আকারের গৃহপালিত এই টার্কির উৎপত্তি উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এটি পালন করা হয়। তুলনামূলকভাবে অনেক বড় এই পাখিগুলো দেখতে অনেকটা মুরগির মতো।
টার্কি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার ছয় মাসের মধ্যে ডিম দেয়। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষ টার্কি হয় প্রায় আট কেজির। ১ টি টার্কি মুরগি বছরে ২০০ থেকে ২৫০ টি ডিম দেয়। ডিম দেওয়া টার্কিকে মুরগিও বলা হয়।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টার্কির খাবার নিয়ে মুরগির চেয়ে দুর্ভাবনা কম। এরা ঠাণ্ডা-গরম সব সহ্য করতে পারে। দানাদার খাবারের চেয়ে কলমি শাক, বাঁধাকপি এবং সবুজ শাকসবজি বেশি পছন্দ করে।
পশ্চিমা দেশগুলোর টার্কির রোস্ট অভিজাত খাবার। আমাদের দেশে টার্কি মুরগির মাংসের মতো রান্না করা হয়। রোস্ট ও কাবাব হিসেবেও টার্কির মাংস খাওয়া যায়। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর ও কুমিল্লাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে টার্কির চাহিদা তুলনামূলক বেশি।
টার্কির লালনপালনও অনেকটা নিরাপদ-এমনটাই জানালেন জাকস ফাউন্ডেশনের পশু ডাক্তার ডা. আসাদ। তিনি বলেন, সাধারণত টার্কি মুরগির বড় ধরনের কোনো রোগ-বালাই দেখা দেয় না। তবে রাণীক্ষেত এবং সালমোনেলোসিস (পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসা) রোগ দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং সঠিকভাবে পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগ বালাই হয় না বললেই চলে।
টার্কির মাংস কতটা সুস্বাধু ও পুষ্টিকর। এ বিষয়ে জাকসের সহকারী পরিচালক ও কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে টার্কির মাংস বেশ জনপ্রিয়। ওইসব দেশে পাখির মাংসের মধ্যে হাঁস, মুরগি, কোয়েল এর পর টার্কির অবস্থান। টার্কি বর্তমানে মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছে। এছাড়া এ মাংসে প্রোটিন বেশি, চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।
এমএইচ/ এআর
আরও পড়ুন