টিকার আওতায় আসছে ত্রিপুরা পাড়া
প্রকাশিত : ২০:১৫, ১৮ জুলাই ২০১৭
অবশেষে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পাড়ায় দুটি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র হচ্ছে। সম্প্রতি অজ্ঞাত রোগে নয় শিশুমৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ওই এলাকা টিকার বাইরে থাকার তথ্য বেরিয়ে আসার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল বুধবার থেকে টিকাদান কেন্দ্র দুটির কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি ত্রিপুরা পাড়ায় স্যাটেলাইট ক্লিনিকও স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।
আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘মধ্যম সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ায় বীরেন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে এবং দক্ষিণ সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার মগরাম ত্রিপুরার বাড়িতে অস্থায়ী টিকা কেন্দ্র হবে। নির্ধারিত দিনগুলোতে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে। যেহেতু অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের টিকা দিলে মারাত্মক ঝুঁকি থাকে, তাই সুস্থ শিশু চিহ্নিত করে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।’
তিনি আরো বলেন,‘ বুধবার আমরা সেখানে যাব। যদি একজনও সুস্থ শিশু পাই তার মাধ্যমেই টিকা কার্যক্রম শুরু করতে চাই।’
সম্প্রতি সীতাকুন্ডের বারআউলিয়ার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার শিশুদের মধ্যে জ্বর, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনির মত উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। অভিভাবকরা শিশুদের হাসপাতালে না নিয়ে স্থানীয়ভাবে ঝারফুঁক দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষাপটে চারদিনে নয় শিশুর মৃত্যু হয়। পরে ঘটনাটি জানতে পারে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন। পরে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আরো ৪৬ জনকে।
খবর পেয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষক দল ওই এলাকায় যায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘শিশুরা দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণে এক ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে’ বলে জানান আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
তবে শেষ পর্যন্ত শিশুমৃত্যুর পেছনে ‘হামকে’ চিহ্নিত করার কথা জানায় সরকার।
একইসঙ্গে ওই গোত্রের শিশুরা কখনোই টিকার আওতায় ছিল না বলেও সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জানান, সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় মোট নয়টি ত্রিপুরা পাড়া আছে। অন্য সাত পাহাড়ে বসবাসকারীরা মোটামুটি টিকা নিলেও এই দুই পাহাড়ের বাসিন্দারা নিত না। স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দিতে গেলে বাসিন্দারা তাদের তাড়া করত। তাদের মধ্যে ভুল ধারণা ছিল। এখন তারা কথা দিয়েছে টিকা নেবে।
তবে দুই পাহাড়ের বাসিন্দারা যে টিকা নিতো তা স্বাস্থ্যকর্মীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। এ প্রেক্ষাপেটে বিয়ষটিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলাতি মনে করে ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে মঙ্গলবার ওই এলাকায় বদলি করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
এরা হলেন- সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক খালেদ মো. হুমায়ন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক রেবা মহাজন, স্বাস্থ্য সহকারী নিলুফার আক্তার, বদরুন নাহার বেগম, তফুরা বেগম ও নুরুল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার পর্যন্ত ত্রিপুরা পাড়ার মোট ৯২ জন শিশু অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়।
মঙ্গলবারও বিআইটিআইডি হাসপাতাল থেকে পাঁচ শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৬৩ জন এবং বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২৯ জন শিশু চিকিৎসাধীন ছিল।
এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠে ২০ জন। পরে তাদের বিআইটিআইডি ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক এমএ হাসান চৌধুরী।
ডব্লিউএন
আরও পড়ুন