উন্নয়নের বাংলাদেশ
টেকসই উন্নয়নে পরিবেশের সুরক্ষা
প্রকাশিত : ২১:২৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৫৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অফ দ্যা আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্ল্যান অব ২০০৯’ শিরোনামে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে। বর্তমান সরকার পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে আর্টিকেল ১৮(ক) সংযোজন করেছে। এরই স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ‘The Global Green Award-2014’।
গাজীপুরে প্রায় ৪ হাজার একর এলাকা জুড়ে প্রায় ৩২৫.৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।
বৃক্ষরোপনে গুরুত্ব আরোপের ফলে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৮ সালের ৯.৫ শতাংশের স্থলে ২০১৭ সালে ১৩.২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘শেখ রাসেল এভিয়ারি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১২ সালে রিও ডি জেনারিওতে অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত রিও+২০ সম্মেলনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। ৩১৮.৪৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশের ২০১৭টি ইটিপি স্থাপনযোগ্য শিল্পকারখানার মধ্যে ১৬১৯ টি শিল্প-প্রতিষ্ঠানে ইটিপি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে, যা বেপরোয়া দূষণ প্রশমন সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
শিল্পবর্জ্য হতে পানি পরিবেশ দূষণের দায়ে ৩৯৮৪ শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে ২৬৩.০২ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৯.৪৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে, বাকিগুলো আদায়ের প্রক্রিয়াধীন। পলিথিন শপিং ব্যাগের অবাধ ব্যবহার বন্ধ এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া নিঃসরণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যথাক্রমে ৮ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে ও ৮৭৬.২১ টন পলিথিন জব্দ করা হয়েছে এবং ৪৭ টি অবৈধ পলিথিন কারখানা উচ্ছেদ করা হয়েছে। জ্বালানি কাঠের ব্যবহার হ্রাসকরণের জন্য ৭ হাজার ৮ শত বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন; এবং ৯ লক্ষ ৭৩ হাজার উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ১২ হাজার ৮ শত ৭২টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশসম্মতভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার ৩জ (Reduce, Reuse & Recycle) স্ট্র্যাটেজি এবং কঠিন আবর্জনা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০১১ প্রণয়ন করেছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর:
সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ, অবস্থান, তীব্রতা, স্থলভাগ অতিক্রমের স্থান ও জলোচ্ছাসের সঠিক পূর্বাভাস প্রদানের নিমিত্ত কক্সবাজার ও খেপুপাড়ায় ডিসেম্বর ২০১০ সালে জাপান সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় জাইকা (JICA) এর তত্বাবধানে ২ টি অত্যাধুনিক সিসমোমিটার স্থাপন করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ করে পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা ও কক্সবাজার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে আরও ৬ (ছয়) টি অত্যাধুনিক ব্রডব্যান্ড সিসমোমিটার স্থাপন করে কেন্দ্রীয় সিসমিক সার্ভারের সঙ্গে একই নেটওয়ার্ক সংযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সর্বমোট ১০ টি সিসমিক পর্যবেক্ষণাগার থেকে ভূমিকম্পের তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের ৩২টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। নৌ-দুর্ঘটনা প্রশমনকল্পে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল পূর্বভাসকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
মৌলভীবাজারে Meteorological Radar System স্থাপন. পাঁচটি স্থানে ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন প্রকল্প। পঞ্চগড়, কিশোরগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার এবং বান্দরবান। অ্যাগ্রোমোটিওরোলজিক্যাল সার্ভিসেসের উন্নয়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ১৪টি নদী বন্দরে ১ম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালী করা হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস জনগণের নিকট সহজলভ্য করার লক্ষ্যে ‘বিএমডি ওয়েদার অ্যাপ’ (BMD Weather Apps) উদ্বোধন। স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ‘বিএমডি ওয়েদার অ্যাপ’ এর ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে এলাকভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ভূমিকম্প, সুনামি, আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি লাঘবের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে Regional Integrated Multi-Hayard Early Warning System (RIMES)-এর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে।
জাইকা এর কারিগরি সহায়তায় জুলাই ২০১০ হতে ডিসেম্বর ২০১৩ মেয়াদ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। নরওয়ে জিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট এর কারিগরি সহায়তায় ডায়না মডেল ব্যবহার করে আবহাওয়া অধিদপ্তর সঠিক পূর্বাভাস প্রদানে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান স্পারসোর ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রসমূহ হালনাগাদ করার পরিপ্রেক্ষিতে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের সংখ্যা ৩টিতে উন্নীত হয়। এই ৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে মোট ৭টি স্যাটেলাইট (আমেরিকা ভিত্তিক-৩টি, চীন ভিত্তিক-৩টি এবং জাপান ভিত্তিক-১টি) থেকে ডাটা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।
স্পারসোর ভৌত ও অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন সম্পন্ন করা হচ্ছে।
আরকে//