ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

পর্ব ২

ঠাঁই নেই, বাড়ছে কবরের উপর কবর

প্রকাশিত : ১৯:৪৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:৩৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মানুষের চাপে ঢাকা শহরের এমনিতেই ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। এরপরও কাজের সন্ধানে, জীবিকার তাগিদে শহরমুখী মানুষের স্রোত থেমে নেই। জনসংখ্যার চাপে পিস্ট এ শহর তার বুকে ঠিকানা করে দিচ্ছে আগন্তুকদের। কিন্তু শেষ ঠিকানার নিশ্চয়তাটা মেলে না এখানে। কারণ বছর দু’য়েক ধরে ডিসিসির কবরস্থানে কেউ চাইলেও স্থায়ীভাবে কবর কিনতে পারছেন না। স্থায়ী কবরে নতুন কবর করার সুযোগ থাকে না। তাই অস্থায়ী কবরস্থানে চাপ বাড়ছে। কারণ বছর দু‘য়েক পরপর অস্থায়ী কবরে নতুন মৃতকে ঠাঁই দেওয়া যায়। তাই বাড়ছে কবরের উপর কবর। 

রাজধানীর কবরস্থানগুলোয় একই কবরে একের অধিক মৃত ব্যক্তিকে সৎকার করা হচ্ছে। এক কবরে ব্যবহার হচ্ছে একাধিক নামফলক।

রাজধানীর আজিমপুর করবস্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, অসংখ্য কবর একটি আরেকটির গায়ে গায়ে লাগানো। কবরগুলোর উপর দেখা যায় একের অধিক সাইনবোর্ড লাগানো। অর্থাৎ একের অধিক মানুষের জায়গা হয়েছে একটি কবরেই। কখনও কখনও সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবার থেকে, ভিন্ন এলাকা থেকে তারা এসেছেন।

আজিজপুর করবস্থানে গিয়ে কথা হয় আছিয়ার সঙ্গে।তিনি একুশে টিভি অনলাইনকে জানান, কামরাঙ্গীরচর তার বাসা। পরিবারের সকলকে সংকার ব্যবস্থা করা হয়েছে এ  কবরস্থানে। তার ছেলের করবটি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশেন ঘোরাঘুরি করেও কোনো লাভ হয়নি।

তিনি আরও জানান, কিছু দিন পরে দেখি ছেলের কবরটির চিহৃ হারিয়ে গেছে। সেখানে আবার নতুন করে অন্য এক লোককে কবর দেওয়া হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখানে যারা কাজ করে তাদের কিছু টাকা দিলে কবর দেখভাল করে। কবরগুলো বছরের পর বছর থাকলে ভাঙ্গা হয় না। কিন্তু যারা টাকা না দেয় তাদের কবর সিটি করপোরেশন বেধে দেওয়া ২ বছর মেয়াদ থাকলে্ও ৬ মাস পরে ভেঙ্গে নতুন করে কবর দেওয়া হয়। এমনকি মৃতদেহের কঙ্কালও বিক্রি করে দেওয়া হয়।

আকবর নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, আমার বাবাকে দুই বছর আগে আজিজপুর কবরস্থানে সংকারের ব্যবস্থা করা হয়। একদিন এসে দেখি আমার বাবার কবরের উপর নতুন করে আরও একজনের কবর দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন পরে গিয়ে দেখতে পাই বাবার কবরের পাশে তিনটি ভিন্ন নামের প্লেট লাগানো আছে। স্থায়ী কবরের ব্যবস্থা না থাকায় নির্দিষ্ট সময় পর একই জায়গায় পুনরায় কবর দেওয়া হয়েছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে আপনজনের শেষ স্মৃতিটুকুও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিমপুর কবরস্থানের ‘মোহরার’(তত্ত্বাবধায়ক) মো. নুরুল হুদা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের মোট ৮টি কবরস্থান রয়েছে।

এর মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণের জুরাইন ও আজিমপুরে আর ২০১২ সাল থেকে ঢাকা উত্তরের ৬ টি কবরস্থানে স্থায়ীভাবে আর কোনো কবরের জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ বছর, এরকম নানা মেয়াদে সেখানে জায়গা বরাদ্দ আছে খুব অল্প কিছু কবরের। যার জন্য দেড় লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। কিন্তু সেটি যারা পারছেন না তাদের জন্যই অস্থায়ী কবর। আর সেই সংখ্যাটিই বেশি। দু’বছর পর পর সেসব কবরে যোগ করা হয় আরেকটি মরদেহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন কবরস্থান নির্মাণ করার মতো জায়গা নেই। এ জন্য আমরা আগের কবরস্থানগুলো সংস্কার শুরু করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাহিরে করবস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন কবরস্থান হলে কবরের জায়গা সংকটের কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি