ডাকসু নির্বাচন প্রতি বছরই করতে হবে
প্রকাশিত : ১০:৪২, ১১ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ১০:৪৩, ১১ মার্চ ২০১৯
নির্বাচন না দিয়ে গত ২৮ বছর ধরে চরম একটা অপরাধ করা হয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার। শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি প্রকৃত একজন দেশপ্রেমিক ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাটাও শিক্ষার উদ্দেশ্য। কিন্তু বছরের পর বছর ডাকসু নির্বাচন না দিয়ে সেই উদ্দেশ্যকে অনেকটা কুঠারাঘাত করা হয়েছে পেছন দিক থেকে।
তবে এখন ২৮ বছর পর একটা ডাকসু নির্বাচন করলেই এই দোষ স্খলন করা যাবে না। এটা প্রতি বছর নিয়মিত করতে হবে। কেননা ২৮ বছরের এই অপরাধের কারণে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস ও শ্বাসরুদ্ধকর দুর্গে পরিণত হয়েছে। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শ্বেত ব্যারিকেড রচনা করেছে শাসকরা। ভাঙতে হবে এই শ্বেত ব্যারিকেড। এর জন্যই ডাকসু নির্বাচন জরুরি।
ছাত্রদের শুধু বইয়ের পোকা বানালেই হবে না। তাদের দেশপ্রেমিক, সচেতন, মানবিক, প্রগতিবাদী, উদারচিন্তা ও নিয়মতান্ত্রিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নির্বাচিত ছাত্র সংসদের নিয়মিত কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। সেই প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন হতেই হবে।
ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র-জনতার দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নিয়ে তাদের অপরাধ মোচনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচন যেন দখলদারিত্বের অভিযানে পরিণত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। ক্ষমতাসীনরা হলগুলো দখলে রেখে যে দুর্গ বানিয়েছে, তা যেন ডাকসু নির্বাচনে কাজে লাগাতে না পারে। আবাসিক দখলদারদের খবরদারিমুক্ত নির্বাচন যেন হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। মোট কথা, ডাকসু নির্বাচন সত্যিকার অর্থেই সুষ্ঠু হতে হবে।
আবার সারাদেশের জনগণের ভোটাধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে আজ। পাকিস্তান আমলে সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানও সে রকমই করেছিলেন। কিন্তু দেশ নিয়ন্ত্রণে নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনোদিনই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি আইয়ুব-মোনায়েমরা। সাধারণ ছাত্রসমাজই সেটাকে প্রতিরোধ করেছে। আমাদের জাতীয় নির্বাচনেও জনসমর্থন ছাড়াই সরকার প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা পুনর্দখল করতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রহসনের ধারাকে প্রতিরোধ করতেই হবে। আইয়ুব আমলে ছাত্ররাই এটা করেছে, এখনও ছাত্রদেরই করতে হবে। এটাই এবারের ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ ছাত্রদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাধারণ ছাত্ররা এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হোক- এটাই তাদের কাছে আন্তরিকভাবে কামনা। এটা করতে পারলে তা ছাত্রদের তো বটেই, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই আমি মনে করি।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এবং স্বাধীনতাউত্তর (১৯৭২ সাল) ডাকসু`র প্রথম নির্বাচিত ভিপি।
আরও পড়ুন