ঢাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক
প্রকাশিত : ২৩:২৬, ২০ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১১:০৬, ২২ এপ্রিল ২০১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একটি ছাত্রী হল থেকে মধ্যরাতে তিনজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ঐ হলের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবশ্য বলছেন, ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে ওই ছাত্রীদের আপাতত হল থেকে সরিয়ে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। অনেকের অভিযোগ, কোটা বিরোধী বিক্ষোভের সময় এক ছাত্রলীগ নেত্রীর হেনস্থা হওয়ার ঘটনার জন্য প্রশাসনের রোষানলে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাতে সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার পর হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন নেতা হাসান আল মামুন বলছেন, তিনি ঘটনা শুনে মধ্যরাতেই ওই হলের সামনে গিয়েছিলেন। ওখানে যারা ছিলেন এবং এই ঘটনার যারা প্রত্যক্ষদর্শী, তারা বলেছেন, বিশ জনের মতো মেয়েকে বের করে দেওয়া হয়েছে।তাদের ফোনও জব্দ করে রাখা হয়েছিলো।
সুফিয়া কামাল হলটি আলোচনায় রয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এই হলে ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে ঘিরে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সে সময় কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীকে রোষের মুখে পড়েছিলেন ওই নেত্রী।শিক্ষার্থীদেরকে নির্যাতন করার অভিযোগে এই নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিলো, পরে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রলীগের এই নেত্রীকে জুতার মালা পরানোর ঘটনার কেন্দ্র করেই এখন হলে কোটা আন্দোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তবে হল প্রভোস্ট সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলছেন, সুনির্দিষ্ট কারণে তাদেরকে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিলো। তাদের মধ্যে দুজন আজই হলে ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, "অভিভাবকরা তাদেরকে কাউন্সেলিং-এর জন্য নিয়েছে।" তবে কী কারণে তাদের কাউন্সেলিং করতে হচ্ছে সেটি তিনি প্রকাশ করেননি।
হলের পরিস্থিতি নিয়ে জানতে বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করলে তারা কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজী হননি।
তবে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলছেন, ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগেই ওই তিন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকের হাতে তুলে প্রশংসনীয় কাজ করেছে হল প্রশাসন।
তিনি আরোও বলেন, "ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছিলো। এর আগেও গুজবের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ওদের অভিভাবকদের দেখানো হয়েছে মোবাইল খুলে। অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট।"
এদিকে ইফফাত জাহান এশাকে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্বহালের ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা রোষানলে পড়তে পারে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক। তাদেরই একজন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলছেন, সর্বশেষ ঘটনাতেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, "আন্দোলনকারীদের ধরে ধরে শাস্তি দেওয়ার যে চেষ্টা হচ্ছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। সুফিয়া কামাল হলই নয় অন্য হলেও আন্দোলনে জড়িতদের চোখে চোখে রাখা, ভয় ভীতি দেখানো হচ্ছে- এটা অনভিপ্রেত।"
ফাহমিদুল হক বলছেন, আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে চাপের মুখে না ফেলে ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্থা করার ঘটনার বিচারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদের যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোও বিবেচনায় নিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর যেকোনো ধরনের হয়রানি এখনই বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএইচ/টিকে
আরও পড়ুন