ঢাবি`র রোকেয়া হলে ২১ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
প্রকাশিত : ২২:৩৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২২:৩৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলে হল প্রাধ্যক্ষের মদতে হল সংসদ ও হল ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনেছেন হলের কিছু আবাসিক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা হলেন— রোকেয়া হলের সায়েদা আফরিন শাফি, জয়ন্তী রেজা ও শ্রবণা শফিক দীপ্তি।
অভিযোগকারীরা বলেন, হলের অফিস সহায়ক, মালী ও প্রহরী পদে নিয়োগে ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ইসরাত জাহান তন্বী, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সায়মা আক্তার প্রমি এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আখতার ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা এসব টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা এই নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে অবহিত এবং তিনিও এই নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, হলের কর্মচারী কামাল উদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামানকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আট লাখ টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান তন্বী। অন্যদিকে হলের মালী বাবুল চৌহানের ছেলে পলাশ চৌহানকে বাগান মালী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন হল সংসদের জিএস সায়মা আক্তার প্রমি। আর আলমগীর নামের একজনকে প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আট লাখ টাকা নিয়েছেন রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ডাকসুর কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আখতার এবং সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী দিশা।
তবে হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনী তন্বী কোনো ভাগ না পাওয়ায় তার মাধ্যমেই এই তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেন অভিযোগকারীরা। হলের এক কর্মচারী ও এজিএস ফাল্গুনীর মধ্যেকার কয়েকটি অডিও কল রেকর্ডের ক্লিপস অভিযোগকারীদের কাছে রয়েছে। এসব অডিও ক্লিপের মধ্যে টাকা লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হল সংসদের ভিপি, জিএস ও হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদক।
অভিযোগের বিষয়ে ডাকসুর ক্যাফেটরিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আখতার বলেন, ‘দীপ্তি সবসময় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কথা বলে, এটা সবাই জানে। সে আমার বিরুদ্ধে, আমার হলের সেক্রেটারির, হল সংসদের ভিপি-জিএসের বিরুদ্ধে এবং প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল। এজন্য আজকে মিটিং ডেকে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সে বলেছে, চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী তাকে এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। কোন কর্মচারী নাম জানতে চাইলে সে নাম বলেনি।’
এর আগে, গত ৩১ আগস্ট শ্রবণী শফিক দীপ্তি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হলের নিয়োগে লেনদেন বাণিজ্যের অভিযোগ এনে একটি পোস্ট করেন। ওই পোস্টটি আলোড়ন তৈরি করে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হল কর্তৃপক্ষ।
দীপ্তির অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ডেকে নিয়ে অভিযুক্তরা তাকে হেনস্তা করেন এবং এর ভিডিও ধারণ করেন। অভিযুক্তরা দীপ্তিকে বিভিন্ন কটু কথা বলে মৌখিকভাবে লাঞ্চিত করেন এবং বিভিন্ন হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে একটি প্রতিবাদ মিছিল করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেগম রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন,‘শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ এনেছেন হলের কর্মচারী কামাল উদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামানকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, আমাদের হলে কামাল উদ্দিন নামে কোনো কর্মচারীই নেই। আর সে ফেইসবুকে যে পোস্টটি দিয়েছে তাতে প্রচুর বানান ভুল। আমি দীপ্তিসহ অভিযুক্তদের আজ (৩ সেপ্টেম্বর) ডেকেছিলাম। দীপ্তির কাছে জানতে চেয়েছি সে কোথায় এ তথ্য পেল? সে কিছুই বলবে না, বলেনি, বলে আমাকে নাকি সে ঘৃণা করে। তাই আমার কাছে কিছু বলবে না। সাংবাদিকদের কাছে বলবে। আমি বলেছি ধন্যবাদ তাহলে তো ভালোই হয়, বিষয়টি আরও খোলোসা হবে।’
দীপ্তিকে লাঞ্চিত এবং হুমকি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট বলেন,‘দীপ্তিকে এবং অভিযুক্তদের সবাইকে ডেকেছিলাম। সবার সামনে লাঞ্চিত করা বা হুমকি দেয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’
এসি
আরও পড়ুন