প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন কাল
ঢামেকে গড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন ইনস্টিটিউট
প্রকাশিত : ১৪:৩৪, ২৩ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১১:১১, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতালে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচশ’ বেডের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি এটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট।
এর নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিট’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতালের পাশে রাজধানীর চানখারপুলে প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলা বিশিষ্ট সুসজ্জিত ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হবে নতুন এই ভবনের। আগামীকাল বুধবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাসপাতালটিতে একদিকে যেমন পুড়ে যাওয়া রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে তেমনি চিকিৎসক ও নার্সদের রোগ পেশাগত দক্ষতা সৃষ্টি ও গবেষণা উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে চিকিৎসা খাতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে এটা তার মধ্যে বড় সংযোজন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসাসেবার উন্নয়নের প্রতি আন্তরিকতার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ইনস্টিটিউটের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা গেছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিসংবলিত এই ইউনিটটিতে থাকছে ৫০০ শয্যা, ৫০টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার থাকছে। পোস্ট অপারেটিভ থিয়েটারও থাকছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগুনে পোড়ার চিকিৎসার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট থেকে রোগীদের সর্বোত্তম সেবা দেওয়া হবে। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, এখানকার প্লাস্টিক সার্জনরা দেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন।
তিনি আরো বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের পাশে অবস্থিত ১২ তলা এই ইনস্টিটিউটে পোড়া রোগীরা যেমন উন্নততর সেবা পাবেন, তেমনি চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ পাবেন।
৫ শয্যার বার্ন ইউনিট ৫০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসায় পথিকৃৎ এই চিকিৎসক বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘৩৫ বি’ বলে একটা ওয়ার্ড ছিল। সেখানেই পাঁচটা বেড বার্ন রোগীদের জন্য আলাদা করে চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। একটা আলমিরা আর একটা চেয়ার-টেবিল ছিল। সেই আলমিরা এখনও আমার কাছে রয়েছে। আর এখন আমরা যাচ্ছি ৫০০ শয্যার ইনস্টিটিউটে। এই পাঁচ থেকে ৫০০ বেডে যাওয়ার পথচলা একটা যুদ্ধ, একটা গল্প।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালটি নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরেকটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, ৯১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলাবিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউটটিতে প্রথমে ৫২২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হলেও পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯১২ কোটিতে দাঁড়ায়।
২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ ইনস্টিটিউটটি নির্মাণের অনুমোদন পায়। জানা গেছে, বহুতল বিশিষ্ট এ ইনস্টিটিউটটির মাটির নিচে তিনতলা বেজমেন্ট। সেখানে গাড়ি পার্কিং ও রেডিওলজিসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ রাখা হচ্ছে।
আকাশছোঁয়া এ ভবনটি তিনটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে থাকবে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আর অন্য ব্লকটিতে করা হবে অ্যাকাডেমিক ভবন। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁনখারপুলে ইনস্টিটিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একই বছরের ২৭ এপ্রিল বাংলদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
অা অা/ এআর