তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৫তম প্রয়াণ দিবস আজ
প্রকাশিত : ০৯:০১, ১ জুন ২০২৪
বিশিষ্ট সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৫তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ৫৮ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। সাংবাদিকতার জগতে মানিক মিয়া এক প্রবাদপ্রতিম পুরুষ। তিনি মানুষের মুক্তির পক্ষেই নিজেকে সাংবাদিকতাকে নিয়োজিত করেছিলেন।
দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে আজীবন তিনি এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে থেকেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সেজন্য তিনি বাংলার মানুষের কাছে ‘নির্ভীক সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।
তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জন্ম ১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়ায়। তার বাবা মুসলেম উদ্দিন মিয়া। শৈশবেই মানিক মিয়ার মা মারা যান। গ্রামের পূর্ব ভাণ্ডারিয়া মডেল প্রাইমারি স্কুলে মানিক মিয়ার শিক্ষাজীবনের শুরু। পিরোজপুর জেলা সরকারি হাই স্কুল থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৩৫ সালে মানিক মিয়া ডিস্টিংশনসহ বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে কর্মজীবন শুরু করেন।
কিছু দিন পর বরিশাল জেলা জনসংযোগ অফিসার পদে নিয়োগ পান। পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে তাকে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অফিসের সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
মানিক মিয়া ১৯৪৬ সালে জননেতা সোহরাওয়ার্দীর প্রতিষ্ঠিত ও আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার পরিচালনা বোর্ডের সচিব পদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের শেষ দিকে কাগজটি বন্ধ হয়ে গেলে কলকাতা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের মুখপত্র সাপ্তাহিক ইত্তেফাকের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারি এবং ১৯৫৬ সাল থেকে দুই বছরকাল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের (পিআইএ) পরিচালক ছিলেন।
মানিক মিয়া ছিলেন স্পষ্টভাষী, নির্ভীক ও আপসহীন। গণমানুষের অধিকার আদায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সামরিক শাসনের অবসানে তার অবদান স্মরণীয়। ছয় দফা আন্দোলনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং দৈনিক ইত্তেফাকের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এর ছাপাখানা নিউ ন্যাশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
১৯৬৭ সালের ২৯ মার্চ তিনি মুক্তি লাভ করেন। এর আগেও রাজনৈতিক কারণে তাকে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে গ্রেফতার করা হয়। গণদাবির মুখে আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ইত্তেফাকের প্রকাশনা থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়।
‘রাজনৈতিক ধোঁকাবাজি’, ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ আর ‘রঙ্গমঞ্চ’ শিরোনামে কলাম লিখে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলেন মানিক মিয়া। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি আমৃত্যু নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
১৯৬৯ সালের ২৬ মে মানিক মিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা থেকে রাওয়ালপিন্ডি যান। সেখানে ৩১ মে রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পয়লা জুন তিনি ইন্তেকাল করেন।
দিনটি উপলক্ষ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার আজিমপুর মাজার প্রাঙ্গণে সকাল ৮টা থেকে কোরআনখানি এবং বেলা ১১টায় দোয়া ও তবারক বিতরণ করা হবে। মরহুমের কনিষ্ঠ পুত্র আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাসভবনে কোরআনখানি ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মরহুমের জ্যেষ্ঠ কন্যা মরহুমা আখতারুন্নাহার বেবীর নিজ বাসভবনে বাদ মাগরিব কোরআনখানি ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
এএইচ