ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘তাদের অত্যাচার এতই নির্মম যে মনে পড়লে ঘুমাতে পারি না’

প্রকাশিত : ২২:৫০, ২৬ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১১:০৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৭

‘‘বার্মাতে বিগত সময় আমার বয়সে অনেক নির্যাতন নিপীড়ন দেখেছি। কিন্তু এখন বার্মার সেনাবাহিনীসহ সাধারণ মগরা যেভাবে নির্মম নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ আর বাড়িঘর জ্বালিয়েছে তা কখনো ভোলার মত না। এসব কষ্ট সহ্য করতে না পারায় আমরা আশ্রয়ের খোঁজে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আর থাকতে না পেরে এই বয়সে মেয়ে, নাতি নিয়ে চলে আসলাম।’’

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে চোখের সামনে নাতি, ছেলে ও মেয়ের জামাইকে খুন হতে দেখে বেঁচে থাকা মেয়ে, ছোট নাতি নিয়ে কিছুদিন আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন বানু বিবি (৬৫)। তিনি রাখাইনের মংডুর নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার দুপুরে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ এলাকা থেকে ফিরছিলেন এই বয়ো:বৃদ্ধ নারী।

তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,  ‘‘বার্মার (মিয়ানমার) সেনা ও মগরা আমাদের গ্রামে এসে আমার সামনে ছেলে মো. আলী (২৮) কে গুলি করে হত্যা করে। এরপর মেয়ে সখিনার বাড়িতে গিয়ে সেনা ও পাড়ার মগরা মিলে জামাই ছৈয়দ হোসেন (৩০) ও নাতি সৈকত উল্লাহ (৮) কে প্রথমে লম্বা কিরিছ দিয়ে কোপায়, পরে গুলি করে তাদের হত্যা করে। তাদের অত্যাচার এতই নির্মম যে তা মনে পড়লে রাত্রে ঘুমাতে পারিনা।’’

বানু বিবি বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের সব মানুষ পালিয়ে এসেছে এখন কেউ নাই। পুরো গ্রাম সেনারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। আসার পথে দেখলাম অনেক মানুষ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে আছে। নিজের কষ্ট আর বেদনা নিয়ে মনে যেমন আঘাত পাচ্ছি, আসার সময় পাহাড়ে পথে লুকিয়ে থাকা মানুষের অসহায়ত্ব দেখে আরো কষ্ট পাচ্ছি। নিজের চোখের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি।’’

বাংলাদেশে প্রবেশ করে প্রথমে শাহপরী দ্বীপ পরিচিত এক বাড়িতে কয়েকদিন অবস্থান করেন বানু বিবি। এরপর তিনি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যান।

তিনি বলেন, এই দেশে প্রবেশ করতে না পারলে হয়তো আমরাও মারা যেতাম। এখনও অনেক মানুষ পালিয়ে আসার জন্য অপক্ষোয় আছে।

নুর বাহার (৪০) নামের আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘‘আমি মংডু পতেঙ্গা গ্রামে থাকতাম। আরকান রাজ্যে সেনা ও মগরা  মিলে এতো নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে যে তার ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না। যখন সেনারা এলাকাতে মারধর, খুন, অত্যাচার চালায় তা দেখে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর কোনো উপায় না দেখে আমি আমার স্বামী নুর সালাম (৫০)কে রেখে বাচ্চাদের নিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছি। স্বামীর সাথে এখনও যোগাযোগ হয়নি।’’

নুর বাহার  আরো বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে দেড়-দুইশত ঘরবাড়ি ছিল। সবার উপর নির্যাতন চালিয়ে টাকা, দামি জিনিসপত্রসহ গরু, ছাগল পর্যন্ত নিয়ে গেছে সেনা ও মগরা। মংডু শহরে কিছু বড়লোক আছে তারা সেনাবাহিনীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কোনোরকম রয়েছে। একটু উল্টা পাল্টা হলে তাদেরকেও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাদের অনেকে বাংলাদেশে এসেছে, এখনও আসছে।’’

গত ২৪ আগস্ট রাতে সেনা ও পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগে নৃসংশ অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তাদের নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গত ২৫ আগস্টের পর এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

জেডএ/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি