ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

তারকাদের রহস্যময় মৃত্যু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৩, ২২ মার্চ ২০১৮

প্রকৃতির এক স্বাভাবিক রীতি মৃত্যু। যে মৃত্যুর সঙ্গে সব প্রাণীকুলেরেই পরিচয় ঘটবে। এই একটি কঠিন সত্য। কিন্তু সব মৃত্যুই স্বাভাবিক হয় না। মাঝে মাঝে এই মৃত্যুও হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। বিভিন্ন সময়ে সারা বিশ্বে বেশ কয়েকজন তারকার অস্বভাবিক মৃত্যু হয়েছে। যাদের মৃত্যুর কারণ বা রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। সেই সব রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আজকের প্রতিবেদন-  

এলভিস প্রিসলি

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়কদের একজন এলভিস প্রিসলি। তার গাওয়া প্রথম একক গান ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি পায়। আর তা আমেরিকান টপচার্টের শীর্ষে স্থান দখল করে। এরপর তিনি টেলিভিশনে গান শুরু করেন। কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতাও ছিলেন। তার ব্যান্ডদলের নাম ছিল ‘দ্য ব্লু মুন বয়েজ’। ১৯৫৮ সালে তিনি বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২ বছর পর তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে আবারও সংগীত জগতে ফিরে আসেন। জীবনের শেষদিকে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এ শিল্পী। ১৯৭৭ সালের ১৬ আগস্ট হঠাৎ করেই মৃত্যু ঘটে এলভিস প্রিসলির। তার রহস্যজনক মৃত্যুর পর অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তবে মাদকদ্রব্যকেই এই মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

দিব্যা ভারতী

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী। যিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তামিল সিনেমা ববি রাজায় কাজ করেন। পরবর্তীতে শোলা অর শাবনাম, দিল আসান হে, দিওয়ানার মতো সুপারহিট সিনেমার মাধ্যমে সফলতা পেয়েছেন। কিন্তু মাত্র ১৯ বছর বয়সে রহস্যময়ভাবে তার মৃত্যু হয়। ৫ এপ্রিল, ১৯৯৩ দিব্যার মৃত্যু হয় মুম্বাইয়ের বারসোভার পাঁচতলা বিল্ডিং থেকে পড়ে যাওয়ার ফলে। কেউ কেউ মনে করেন এটা আত্মহত্যা। আবার অনেকের মতে ষড়যন্ত্র করে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে মুম্বাই পুলিশ এই ক্ষেত্রে প্রমাণ সংগ্রহ করতে সফল হননি।

মাইকেল জ্যাকসন

মার্কিন পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তখন জ্যাকসন ফাইভ নামের সংগীত দলে গাইতেন। ১৯৭১ সাল থেকে শুরু। তার গাওয়া পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। তাকে পপসংগীতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে মাইকেল সংগীতশিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। মাইকেল দুইবার রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেইমে নির্বাচিত হন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী। ২০০৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী মার্কিন চিকিৎসক ড. কনরাড কারারুদ্ধ হন। এই চিকিৎসকই দাবি করেছেন, জ্যাকসনের মৃত্যুর জন্য তার প্যারামেডিকরাই দায়ী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার লেখা নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে মুরে। আর সে বইয়ে এমনটাই দাবি করেছেন জ্যাকসনের চিকিৎসক।

রবিন উইলিয়ামস

মার্কিন অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য চালানো হয় বিশদ তদন্ত। অবশেষে ঘোষণা আসে আত্মহত্যাই করেছিলেন তিনি। এমনকি মৃত্যুর সময় তার শরীরে কোনো মাদক বা মদের আলামত পাওয়া যায়নি। ক্যালিফোর্নিয়া তদন্ত কমিটি এই খবরটি নিশ্চিত করে। ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজ বাসায় উইলিয়ামসের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। সে সময়ই সন্দেহ করা হয়েছিল এটি আত্মহত্যা। শ্বাসরোধে অক্সিজেনের অভাবেই মৃত্যু ঘটে উইলিয়ামসের, এমনটাই জানা গেছে।

রবিন উইলিয়ামস ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন হতাশাগ্রস্ত— এমনটা মানতে নরাজ অনেকেই। গণমাধ্যমে সর্বশেষ তাকে দেখা যায় তার মৃত্যুর আগের দিন। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী সুজান স্নাইডার।

সিল্ক স্মিতা

এক সময় অভাবের তাড়নায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়াশোনা। অন্ন সংস্থানের জন্যই সিনেমাতে শরীর প্রদর্শন। জনপ্রিয়তা পেয়েছেন কৌলীন্য পাননি। সমাধান হয়নি মৃত্যুরহস্যের। তিনি সিল্ক স্মিতা। ১৯৯৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সিল্ক স্মিতার ফোন পান বান্ধবী অনুরাধা। তাকে ডেকেছিলেন স্মিতা। কিন্তু নৃত্যশিল্পী অনুরাধা যেতে পারেননি। আর দেখা হয়নি। পরের দিন চেন্নাইয়ে নিজের বাড়িতে পাওয়া যায় নিথর সিল্ক স্মিতাকে। কেউ কেউ বলেন চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে গিয়ে ঋণের জালে পড়েছিলেন সিল্ক স্মিতা। এই থেকে তিনি দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সেই হতাশা থেকেই আত্মঘাতী হন তিনি। অনেকের সন্দেহ ৩৬ বছর বয়সে সিল্ক স্মিতার মৃত্যু আত্মহত্যা নয়। এই রহস্যের সমাধান হয়নি।

কুনাল সিংহ

‘দিল হি দিল মে’ সিনেমাতে যে লম্বা চুলের অভিনেতাকে দেখা যায়, তিনি কুনাল সিংহ। ২০০৮ সালে ঝুলন্ত অবস্থায় তার দেহ উদ্ধার হয়। কুনালের বাবার দাবি ছিল তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।

মেরিলিন মনরো

এযাবৎকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অভিনেত্রী মনে করা হয় মেরিলিন মনরোকে। চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এই মহাতারকার। ১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই মারা যান তিনি।

কারও কারও ধারণা তিনি খুন হয়েছেন। তবে, অধিকাংশই মনে করেন মাত্রাতিরিক্ত মাদকাসক্তিই তার জীবন কেড়ে নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন গাদাখানেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

পরভিন ববি

পারভিন ববি হলো বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাওয়া একটি নাম। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিলেন ডাক্তাররা। পাকস্থলীতে মদ ছাড়া অন্যকিছু পাওয়া যায়নি। একলা ঘরে কয়েকদিন পড়েছিল পারভিন ববির লাশ। সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হওয়ায় ঘরে একটা কাজের লোকও রাখতেন না তিনি। মানসিক সমস্যাটা তাকে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে দেয়নি। জীবিত পারভিন ববিকে একটা সময়ের পর সবাই এড়িয়ে চলেছে। মৃত্যুর পরও কেউ আসেনি তার দেহের সৎকার করতে। ভালোবাসার টানে ছুটে এসেছিলেন শুধু একটা মানুষ, তিনি মহেশ ভাট। তিনিই উপস্থিত থেকে পারভিনের দাফনের ব্যবস্থা করেন। বলিউডের ‘ওহ লামহে’ নামের চলচ্চিত্রটি ছিল পারভিনের সেমি বায়োগ্রাফি ফিল্ম।

মার্ক স্যালিং

আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের তুজুঙ্গা নদীর পাশের একটি এলাকায় গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় সংগীতভিত্তিক কমেডি-ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ ‘গ্লি’র অভিনেতা মার্ক স্যালিংয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, এই অভিনেতা আত্মহত্যা করেছেন। স্যালিংয়ের আইনজীবী মাইকেল জে প্রেক্টর তার মৃত্যুর খবরটি গণমাধ্যমকে জানান। স্যালিংয়ের আইনজীবী জানান, জীবনের গুরুতর কিছু ভুলের জন্য তিনি অনুশোচনায় ভুগছিলেন এবং সম্ভবত তারই প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করেছেন আত্মহত্যা করে। এদিকে আত্মহত্যা নাকি খুন হয়েছেন স্যালিং সেটি তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি।

জিম মরিসন

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ছিলেন জিম মরিসন। তার পুরো নাম জেমস ডগলাম মরিসন। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪৩-এ জন্ম নেওয়া মরিসন কেবল একজন গায়কই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে একজন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং কবি। তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন আমেরিকান রক ব্যান্ড দ্য ডোরসের প্রধান গায়ক ও গীতিকার হিসেবে। তাকে রক সংগীতের অন্যতম অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বেশকিছু কবিতার বই রচনা করেন এবং একটি তথ্যচিত্র, একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তিনটি মিউজিক ভিডিওর নির্মাতা। মরিসন মাত্র ২৭ বছর বয়সে প্যারিসে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু পৃথিবীর মানুষকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

জিয়া খান

মাত্র ২৫ বছর বয়স্ক বলিউড অভিনেত্রী জিয়া খানের মৃত্যুর পর একটা প্রশ্ন বারবার উঠেছে, তার মৃত্যু কীভাবে হল এবং কেন হল? ‘নিঃশব্দ’, ‘গজনি’ এবং ‘হাউসফুল’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন জিয়া। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই নিজ বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে খবর প্রকাশ হলেও তার কথিত বন্ধু সুরজ পাঞ্চালীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ মৃত্যুর রহস্য আজও জানা যায়নি।

পল ওয়াকার

পল ওয়াকার একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান, দুর্ঘটনায় পলের গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।

হেথ লেজার

হেথ লেজারকে তার ম্যানহাটনের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অন্য খবর প্রকাশ্যে আসে।

সালমান শাহ

নব্বই দশকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৮৫ সালে টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হলেও পরে বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা নায়ক হয়ে ওঠেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ২৭টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছাড়াও বেশকিছু দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করেন। খ্যাতির চূড়ায় থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইস্কাটনের নিজ বাসভবনে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় সালমান শাহর। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি। সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী সামিরা দায়ী বলে অভিযোগ করেন মা তার। এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

সোহেল চৌধুরী

ঢাকাই চলচ্চিত্রের আকাশে সোহেল চৌধুরী ছিলেন দ্রুত নিভে যাওয়া তারা। এক মধ্যরাতে রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি ক্লাবে চলছে ডিজে পার্টি। উচ্চ শব্দের মিউজিকের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন প্রায় ২০০ তরুণ-তরুণী। এ সময় গাড়িতে করে এলেন সুদর্শন নায়ক সোহেল চৌধুরী। সঙ্গে কয়েক বন্ধু। ক্লাবের গেটের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে অস্ত্রধারীরা। নায়কসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী। কিন্তু দর্শক আজও জানতে পারেনি প্রিয় এ তারকার খুনের রহস্য।

মিতা নূর

স্বামীর পরকীয়াকে মেনে না নিতে পেরেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূর আত্মহত্যা করেছেন বলে কথিত আছে। জানা যায়, দীর্ঘ ২৪ বছরের সংসার করার পর যখন স্বামীর দিক থেকে এ ধরনের আচরণ পেয়েছেন, তখন তা মেনে নিতে না পারার কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অভিনেত্রী মিতা।

এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি