তারুণ্যের ভাবনায় অমর একুশ
প্রকাশিত : ১১:৩২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
একুশ মানে চেতনা, একুশ আমাদের আত্ম ত্যাগের সর্বোচ্চ পর্যায়। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি যখন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলার আপমর জনতা তখন তাদের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য। এতে শহীদ হয় রফিক, সালাম, বরকতসহ আরেও অনেকে।
বর্তমান প্রজন্মের তারুণ্য একুশ নিয়ে কেমন চিন্তা করছে তা তুলে ধরা যাক। ঢাকা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী মু. নাইম হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীতে বাংলাই একমাত্র ভাষা, যে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, দিয়েছে রক্ত। জাতি হিসেবে আমাদের ভাষার প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য ইউনেস্কো ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নাম এবং জাতির এ ভাষার প্রতি প্রবল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আমাদের মাতৃভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের চতুর্থ ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। জ্ঞান অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকে রপ্ত করতে হবে ঠিকই, কিন্তু আমাদের এ মাতৃভাষা বাংলাকে ভুলে গেলে চলবে না। বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগ ও ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। তবে আমাদের মনের ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হবে অবশ্যই বাংলা।
ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম অমর একুশ সম্পর্কে বলেন, বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। এ দিনটি বাঙালির জীবনের সকল চেতনার মূল উৎস। মাতৃভাষার মান রক্ষা করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১১ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দে। পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব রাখেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধীতা করেন। দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার হীন চক্রান্ত চলতে থাকে।
এ হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে দ্রুত পৌঁছে যায় এবং আন্দোলন আরও ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হতে থাকে। পরবর্তীতে তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। একুশের চেতনায় ভাস্বর আজ বিশ্ববাসী। একুশের চেতনার ফলে, এ দেশবাসী বুঝেছিল মিষ্টি কথায় অধিকার আদায় হয় না। এর জন্য প্রয়োজন রক্তক্ষরণ।
লেখক- শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।