ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

তাহসান-মিথিলার বিচ্ছেদের নেপথ্যে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৭, ২৭ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১২:৪০, ২৯ জুলাই ২০১৭

জনপ্রিয় তারকা জুটি তাহসান-মিথিলা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ভালোবাসা দিবস এলেই মিথিলার বাসার দরজায় ফুল রেখে এসে তাকে ফোন করতেন তাহসান। মিথিলাও বেশ রোমাঞ্চিত হতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবছর চুটিয়ে প্রেম করেন দুজনে। পরে বিয়ে। এর ১১ বছরের মাথায় ভাঙন।

তাহসান-মিথিলার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে গত মে মাসে। এরও প্রায় দুই বছর আগ থেকেই আলাদা থাকছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দুজনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিচ্ছেদ ফলাও করে জানান দিলেও এর নেপথ্যে কী তা নিয়ে মুখ খুলছেন না দুজনের কেউ-ই। এ নিয়ে তাদের ভক্তদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই। তাহসান-মিথিলা তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেও ভক্তরা এটাকে সঠিক সমাধান বলে মানতে নারাজ। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, বিচ্ছেদ ছাড়া আর কোনো সমাধান কি ছিল না?

মান-অভিমান, অনুরাগ, ঝগড়া মানুষের জীবনেরই একটি অংশ। জীবনে ভালো কিংবা খারাপ সময় আসবে এটাই স্বাভাবিক। এমন মানসিকতায় বিশ্বাসী তাহসান। বিয়ের পর থেকে রিল ও রিয়েল লাইফের সফল জুটির উদাহরণ হয়েই কাজ করেন তাহসান-মিথিলা।

তারপরও এর মাঝেই লুকিয়ে ছিল দূরত্বের বীজ। ব্যাক্তিত্বের দ্বন্ধও প্রকট হয়ে উঠে। কয়েক মাস ধরে তেমনই ইঙ্গিত ভাসছিল মিডিয়ায়। তখন সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর না পাওয়া গেলেও অবশেষে দু’জনে একসঙ্গে জানালেন ডিভোর্সে যাচ্ছেন। কারণ হিসেবে ওঠে এসেছে মীমাংসার অযোগ্য দ্বন্দ্ব!

দীর্ঘ ১১ বছরের সংসারের ইতি টানেন তাহসান-মিথিলা। এ নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় নানা গুজব থাকলেও অবশ্য তারা কেউ কাউকে দোষারোপ করছেন না এখনও।



জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে তাহসান ও মিথিলার বিবাহ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। তারা চাইছিলেন আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেরাই সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের বিচ্ছেদের খবর জানাবেন।

কিন্তু এর আগেই সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ করা হলে গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের খবরটি স্বীকার করে নেন তারা।

তাহসানের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, এ জুটির রিয়েল লাইফ কিংবা পর্দায় আবার একসঙ্গে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ দুই বছর আলাদা থাকার সময়ে ঘনিষ্ঠরা মিলে অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন তাদের এক করার জন্য। সবার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিচ্ছেদের ঘোষণার পরদিন মিথিলাও জানিয়েছেন, শিগগিরই তাহসানের সঙ্গে তার কাজ করার কোনো প্ল্যান নেই। ভবিষ্যতের বিষয় নিয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে নারাজ।

কিন্তু এ বিচ্ছেদের নেপথ্যের কারণ কী? এমন প্রশ্ন কেন্দ্র করে নানা রকম গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকেই আবার এর পেছনে কারণ হিসেবে পারস্পরিক বোঝাপড়া কমে যাওয়া ও দু’জনের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আলাদা হওয়াকে দায়ী করেছেন।



তবে মিথিলার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, মূল ঘটনার সূত্রপাত বছর দুয়েক আগে। তখন তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় নারী ভক্তদের সঙ্গে তাহসানের অবাধ মেলামেশা নিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটির দাবি, তাহসান কোনো নারী ভক্তের সঙ্গে প্রেম বা অন্য কোনো সম্পর্কে না জড়ালেও কেউ দেখা করতে চাইলে একা গিয়ে দেখা করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে নাটকের সেট থেকে নায়িকাদের নিয়ে লং ড্রাইভে যেতেন।

এ নিয়ে মিথিলা আপত্তি তুললেও তাহসান গ্রাহ্য করেননি। এক সময় তা তাদের নিয়মিত ঝগড়ার বিষয়ে পরিণত হয়। সর্বশেষ দু’বছর আগে প্রচন্ড ঝগড়ার পর থেকে মিথিলা ও তাহসান আলাদা থাকতে শুরু করেন।



এদিকে, তাহসান এক মডেল ও অভিনেত্রীর প্রেমে পড়ার গুঞ্জনও রটেছে ইতিমধ্যে। ওই অভিনেত্রী কাম মডেলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপনে অভিনয় ও নাটকে কাজ করে সফলও হয়েছেন তাহসান। তাহসান ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে বেশি বেশি কাজ করতে আগ্রহী। যেটি মিথিলার পছন্দ নয়। মেনে নিতে পারছিলেন না।

এদিকে লাক্স তারকা বিদ্যা সিনহা মিমকে জড়িয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যম প্রেমের গুঞ্জন রটিয়েছে। যদিও এ ব্যপারে বেশ বিব্রত মীম। তার সঙ্গে তাহসানের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে মিম গণমাধ্যমকে বলেন, পেশাদারিত্বের সম্পর্ক দারুণ, কিন্তু আমার সঙ্গে প্রেমের কারণে তার সংসার ভেঙেছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেই আমি বিব্রতবোধ করছি।’দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাহসানের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে দুজনের মধ্যে ব্যাক্তিত্বের দ্বন্দ্বটা প্রকট হয়ে উঠেছিল। দুজনের ভাবনাগুলোও ভিন্ন ছিল। দূরত্ব দিন দিন বাড়ছিল। একটা সময় মিথিলার কাছে মনে হল, ১১ বছর আগের তাহসান আর এখনকার তাহসান এক নন।

এদিকে অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, মিথিলার জীবনযাপন নিয়েও অভিযোগ ছিল তাহসানের। তিনি চাইতেন বাইরে সময় কম দিয়ে পরিবারেই যেন সময় দেন মিথিলা। কিন্তু তা মেনে নিতে নারাজ এ অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারে বেশি মনোযোগী।

তাহসান-মিথিলার এমন রহস্যজনক নীরবতা এখন অনেকটাই কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে ভক্তমহলে। অনেকেই বলছেন যা রটে তা কিছু তো বটে! তবে কি সত্যি নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন তারা?

 

একসুতোয় পথচলার শুরুটা যেভাবে

আজ থেকে ১৩ বছর আগের কথা। তাহসান তখন ব্ল্যাক ব্যান্ডের শিল্পী ও কি-বোর্ডিস্ট। প্রকাশিত হয়েছে `আমার পৃথিবী` ও `উৎসবের পর` শিরোনামের দুটি অ্যালবাম। যার সুবাদে তাহসান হয়ে উঠেছেন সময়ের ক্রেজ। সেই তাহসানের গান শুনতে বন্ধুদের সঙ্গে এক আড্ডায় যোগ দেন মিথিলা। গান শোনেন তার; সমালোচনাও করেন। গান নিয়ে মিথিলার এই সোজাসাপ্টা মন্তব্যে অবাক হন তাহসান। ভালো লেগে যায় এই সহজ স্বীকারোক্তি। তার পরের সবকিছু ঘটে আরও দ্রুত।

পরিচয়ের পর একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাহসান দেখা করেন মিথিলার সঙ্গে। টুকরো কথার পর মিথিলার হাতে গুঁজে দেন চিঠি। মিথিলা কিছুটা অবাক হলেও চিঠি হাতে নেন। তাতে লেখা ছিল- `কেউ কেউ বলে প্রথম দেখা প্রেম, কেউ কেউ বলে মায়া। কিন্তু আমি কিছুই পরোয়া করি না।`

যদিও মনে মনে তাহসানকে পছন্দ করেছিলেন মিথিলাও; কিন্তু সে কথা লুকোনো ছিল তার মনের গহিনে। তাহসানের চিঠি পাওয়ার পর আর তাই মনে কথা মনের মাঝে চেপে রাখেননি। চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন ফোনে। তবে মনের কথা খুলে বলার আগে প্রথমেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, `এই, এটা কী লিখেছ?`

তাহসান বলেছিলেন, `কবিতার সঙ্গে প্রেম। তাই ভাবলাম, ফোন করার আগে একটা চিঠিই লিখি।` এরপর মিথিলার কথার পিঠে কথা জুড়ে দিয়ে শুরু হয় রাত পেরোনোর পর্ব। সেদিনের পর থেকে নিয়ম করে রাতভর চলত ফোনালাপ। এর পর ঘড়ি ধরে দেখা করা, রিকশায় ঠিকানাহীন ঘোরাঘুরি, গলা ছেড়ে গান গাওয়া। এই গান গাইতে গিয়েই তাহসান এক সময় আবিষ্কার করেন, মিথিলাও চমৎকার গান করেন। মিথিলার গায়কীও মুগ্ধ করে তাকে।

এক ফাঁকে তাই মিথিলার কথা ভেবে গান লিখে ফেলেন তাহসান। সুরও করেন নিজে। তার প্রথম একক অ্যালবাম `কথোপকথন`-এর জন্য `বৃত্তালপনা` গানটি রেকর্ড করা হয়। গান রেকর্ড ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে টানা আট ঘণ্টা সময় পার হয়ে যায়। এই গান গাওয়ার মধ্য দিয়েই তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হয়। এক সুতোয় গেঁথে দেয় সম্পর্কের বুনন।



প্রণয়ের দু`বছরের মাথায় তারা বাকি জীবন একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার করেন। ২০০৬ সালের ৭ আগস্ট বিয়েবন্ধনে আবন্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের দ্বিতীয় জীবন। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল এই তারকা জুটির ঘর আলো করে জন্ম নেয় একমাত্র কন্যা আইরা তাহরীম খান। সুখী পরিবার নিয়ে এর পর কাটতে থাকে সুখের সময়। কর্মজীবনের সাফল্য, গান, অভিনয় আর মডেলিং দিয়ে তারা জয় করতে থাকেন অগণিত মানুষের মন। তাহসান-মিথিলার যাপিত জীবনের গল্পটা এভাবে শেষ হলে মন্দ হতো না। কিন্তু হঠাৎ একটি ঘোষণা সবকিছু ওলোট-পালট করে দিল। সবকিছু শেষ গেছে- এমন ভাবছেন না অনেকে। কারণ তাহসান ও মিথিলা দু`জনেই জানিয়েছেন, সন্তানের জন্য তারা যথেষ্ট সময় দেবেন।

//এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি