তিব্বতী বৌদ্ধদের শীর্ষ ধর্মগুরু দালাই লামার জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : ০৮:৫০, ৬ জুন ২০২০ | আপডেট: ০৮:৫২, ৬ জুন ২০২০
আজ ৬ জুলাই তিব্বতী বৌদ্ধদের শীর্ষ ধর্মগুরু দালাই লামার জন্মদিন। ১৯৫৯ সাল থেকে উত্তর ভারতের ধরমশালায় তাঁর নির্বাসন জীবনে তিনি তিব্বতীদের সব রকমের প্রতিকূলতার মুখেও প্রচার করে আসছেন অহিংসা আর সহিষ্ণুতার কথা। বিশ্বের যেখানেই তিনি যান, চীন দখলিত তিব্বতের মানুষদের অধিকার, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষার কথা বলেন দালাই লামা।
দালাই লামা প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রথমেই মানুষের মনে পড়বে তাঁর সদাহাস্য মুখটি। যেন শিশুর সারল্য ছড়িয়ে আছে তাঁর চেহারায়। সব সময় প্রাণবন্ত। চোখে বড় চশমা। তার আড়ালে চোখ থেকে যেন ঝরে পড়ছে এক ধরনের উজ্জ্বলতা।
১৯৮৯ সালে দালাই লামা পান নোবেল শান্তি পুরস্কার। জার্মানিতে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুমী। একবার একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। জার্মানদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, কাকে তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাজ্ঞ জীবিত মানুষ বলে মনে করেন। উত্তরদাতাদের এক-তৃতীয়াংশই দালাই লামার নাম করেন। প্রয়াত পোপ দ্বিতীয় জন পল, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা, জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আন্নান- এঁদের সবার অনেক ওপরে ছিল দালাই লামার নাম। তিব্বতি জনগণের সব আশা ভরসা এখনও তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত। তিব্বতীদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সমর্থনের অনুরোধ জানাতে ঘুরে বেড়ান তিনি পৃথিবীর নানা জায়গায়। তবে তাদের দু:খ কষ্টের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য অর্জন থেকে তিনি এখনও অনেক দূরে।
দালাই লামার জন্ম নাম লামো থনডুপ। ১৯৩৫ সালের ৬ জুলাই এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। তার দু বছর আগে প্রয়াত হন ত্রয়োদশ দালাই লামা। তিব্বতী বৌদ্ধদের ধর্মবিশ্বাস বলে, কোন শিশুর মাঝে পুনর্জন্ম ঘটবে তাঁর। এক অনুসন্ধানী দল খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যান তাঁদের কাংখিত দালাই লামাকে। লামো থনডুপ-এর বয়স যখন মাত্র চার বছর, চতুর্দশ দালাই লামা হিসেবে শনাক্ত করা হয় তাঁকে। তাঁর নতুন নাম হয় তেনজ়িন গিয়েতসো। চতুর্দশ দালাই লামা হিসেবে তাঁর স্থান হয় লাসা-র পোতালা প্রাসাদে। ১৯৫০ সালে তিব্বতে ঘটল চীনের সামরিক অভিযান। দখলিত হল তিব্বত। সেই ১৫ বছর বয়সেও দালাই লামা চেষ্টা করেছেন দখলকারীদের মুখোমুখী তিব্বতী মানুষদের সুরক্ষা দিতে। ১৯৫৯ সালে চীন ভেঙে দেয় এক বিদ্রোহ। সৈনিকের ছদ্মবেশে ২৪ বছর বয়স্ক দালাই লামা হিমলয়ের দুর্গম পথ পেরিয়ে পালিয়ে আসেন ভারতে। আশ্রয় পান তিনি ও তাঁর অনুগামীরা। উত্তর ভারতের ধরমশালায় থিতু হয়েছে তাঁদের নির্বাসন জীবন।
ধরমশালায় দশ হাজারেরও বেশি তিব্বতী শরণার্থীদের বাস। তিব্বতী নির্বাসিত সরকারের দপ্তরও সেখানেই। বিশ্বের কোন দেশই অবশ্য স্বীকৃতি দেয় নি এই সরকারকে। তিব্বতের স্বাধিকার অর্জনে অহিংসাই দালাই লামার মন্ত্র। চীন তিব্বতকে প্রকৃত স্বায়ত্ত্বশাসন দিলে তিব্বতী সংস্কৃতির পূর্ণ বিনাশ ঠেকাতে দালাই লামা এমন কি চীনের প্রভুত্বও মেনে নিতে প্রস্তুত। এই প্রস্তুতির কারণে তিব্বতীদের একটি অংশ তাঁর সমালোচনা করতে ছাড়ে নি। তবে তাঁর অনুসৃত নীতির অনুরণন যে তিব্বতে অনুভূত হয় নি তা নয়। ২০০২ সালের পর থেকে তাঁর মনোনীত এক প্রতিনিধিদল তিনবার চীন আর তিব্বত সফর করেছে। নয় বছর পর এ ছিল দু পক্ষের মধ্যে প্রথম যোগাযোগ। তবে তিব্বতে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটার চিহ্ন এখনও স্পষ্ট নয়। তিব্বতী জনগণের পক্ষে তাঁর সব তত্ত্ব পরতার মাঝেও তিনি আশ্রয় খোঁজেন বৌদ্ধ ধর্মের মৌল বিশ্বাসে।
দালাই লামা বলেন- ‘প্রতি তিব্বতীই তার স্বভূমিতে ফিরে যাওয়ার জোরালো প্রয়োজন অনুভব করে। আমিও। তিব্বতী হিসেবে এই অনুভূতি আমাদের। একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু অবশ্য বহু প্রয়োজনে তাড়িত নয়। নিজের জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়াটাই হল বড় কথা। নিজের সৃষ্টিশীলতা ও আধ্যাত্মিকতার অর্থবহ প্রয়োগের একটি সম্ভাবনা হল জীবন। সবচেয়ে ওপরের লক্ষ্যটি আমি এরই মাঝে দেখতে পাই।
এসএ