তীব্র সেশন জটের কবলে জবি
প্রকাশিত : ১২:০৬, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১২:০৭, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভিন্ন অনুষদের বেশির ভাগ বিভাগে তীব্র সেশন জট সৃষ্টি হয়েছে। বিভাগগুলোর জটের কারণে শিক্ষার্থীদের ছয় মাস সময়ের এক সেমিস্টার শেষ করেতে লাগছে আট মাস। ফলে শিক্ষার্থীদের চার বছর মেয়াদী স্নাতক শেষ করতে পাঁচ বছর এবং স্নাতকোত্তরসহ শেষ করতে সাত বছরের বেশি সময় লাগছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ একাডেমিক রুটিন অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা নিতে শিক্ষকদের অনীহা ও স্বেচ্ছাচারিতা, সান্ধ্যকালীন কোর্সে বেশি সময় দেওয়া এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ব্যস্ত এবং ক্লাসরুম সংকটের কারণে সেশনজট আরো তীব্র হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন বিভাগ নাট্যকলায় সেশন জটের অবস্থা বেশি ভয়াবহ। এ নতুন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা সংকটের কারণে শিক্ষার্থী সেশন জটে ভুগছেন। বিভাগটিতে দীর্ঘদিন ধরে সেকশন অফিসার না থাকায় বিভাগের প্রশাসনিক কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। নবীন শিক্ষকরা পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলী ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষ না হওয়ায় বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। নাট্যকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়ে এখনও ৭ম সেমিস্টারে ক্লাস করছেন। ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ বছর পিছিয়ে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৫ম সেমিস্টারে ক্লাস করছেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও ইতোমধ্যে ৬ মাস পিছিয়ে পড়েছে। এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছয় মাস মেয়াদী সেমিস্টার শেষ করতে আট মাস সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সেমিস্টারের নির্ধারিত ক্রেডিট ক্লাস শেষ হলেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর কয়েকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। এছাড়া বিভাগটিতে ক্লাসরুম সংকটের কারণে এক ব্যাচের পরীক্ষা হলে অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এজন্যও শিক্ষার্থীরা বিভাগটির সেশনজটের ভোগান্তিতে পড়ছে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সেশন জট সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগের ক্লাস পরীক্ষায় কোনও ধরনের একাডেমিক রুটিন মানা হয় না। শিক্ষকরা ইচ্ছা মাপিক ক্লাস নেন। বিভাগের সেমিস্টারের এক মিডটার্ম পরীক্ষায় সময় দিয়ে তিন থেকে চারবার সময় পেছানোর অভিযোগ আছে। ফলে বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ বছর জটে এখনও মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের ফল দেয়নি, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সাত মাস জটে মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারে, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও এক বছর জটে এখন স্নাতক ৬ সেমিস্টারের ফল না দেওয়ায় ৭ম সেমিস্টার পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চলমান অন্যান্য ব্যাচগুলোর সঙ্গে পিছিয়ে পড়ছেন প্রায় সাত মাস। বিভাগটির প্রতি শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস মেয়াদী এক সেমিস্টার শেষ করতে গড়ে আট মাস করে সময় লাগছে। কিন্তু ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে চালু হওয়া ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সেও চিত্র উল্টো। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা না নিয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস পরীক্ষায় ব্যস্ত। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষকই রাজধানীর বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন চাকরি করেন।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালুকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন নামে নতুন বিভাগটির অবস্থাও নাজুক। বিভাগটির প্রথম ব্যাচ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর ও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭ মাস পিছিয়ে ক্লাস করছেন। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ১ম সেমিস্টার ১১ মাসে শেষ করে সবেমাত্র ২য় সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দেড় বছরের জটে রয়েছেন। তাদের এখনো মাস্টার্স ২য় সেমিস্টারের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়নি। বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীরা প্রায় ৮ মাস পিছিয়ে ক্লাস করছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এক বছরের জটের ফলে বিভাগটিতে মাস্টার্স পর্যায়ে একই সঙ্গে তিনটি ব্যাচের ক্লাস হচ্ছে।
এছাড়া রসায়ন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে দেড় বছর, ২০১৫-১৬ ছয় মাস, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীরা ৬ মাস, ২০১৫-১৬ সেশনে ৪ মাস পরিসংখ্যান ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ৬ মাস, আইন বিভাগ ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের যথাক্রমে ৬ ও ৮ মাস, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীরা ১ বছর জটে মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারে, ইতিহাসের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের জটে এখন মাস্টার্স ৭ম সেমিস্টারে এবং ফার্মেসি ও গণিত বিভাগের প্রায় সবকটি বিভাগেই ৬ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত পিছিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
জবি নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদেও সেশনজটের বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী মাসে সব ব্যাচের পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনা হবে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, সেশন জট দূর করতে সব বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষার সময় ঘোষণা করে তারা এ সমস্যার সমাধান করবেন।
আরও পড়ুন