তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার সংস্কার দাবি
প্রকাশিত : ১৩:০৮, ৭ অক্টোবর ২০১৮ | আপডেট: ১৩:২৭, ৭ অক্টোবর ২০১৮
এবার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৪ থেকে ২০ তম গ্রেড) সরকারি চাকরিতেও কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোনো ধরণের বিশেষ নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পরিষদ।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় আজ রোববার এই দাবি করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেবির সামনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের আহবায়ক হাসান আল মামুন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোনো বিশেষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশেষ নিয়োগ ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে।
পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, সরকার কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে সব গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নাই। কোটা বাতিল করায় এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার পুরো দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। আমরা কোটা বাতিল চাইনি, আমরা চেয়েছিলাম এর যৌক্তিক সংস্কার। তবে কোটা বাতিলের এ পরিপত্রকে আমরা আমাদের আংশিক সফলতা হিসেবে দেখছি। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি নয়, আমরা চাই তৃতীয় ও চতুর্থসহ সব ধরনের চাকরিতে আমাদের পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কার করে পরিপত্র জারি করা হোক। এটাই হবে যৌক্তিক সমাধান।
এছাড়া আমাদের অন্য দু’টি দাবি মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচার করতে হবে। তা না হলে ছাত্র সমাজ আবারো রাস্তায় বের হয়ে আসবে।
যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটা রাখা যেতে পারে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অস্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হোক। তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদের আমরা সম্মান জানাই। তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
হাসান আল মামুন আরো বলেন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সব সরকারি চাকরিতে পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিল। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা সংস্কার না করে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ফলে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
এসময় তিনি কোটা আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া সব শিক্ষার্থীর মুক্তি দাবি করেন। এবং যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, ফারুক হোসেন, আতাউল্লাহ, জসিম উদ্দিন আকাশ, মশিউর রহমানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৪ থেকে ২০ গ্রেড পর্যন্ত) সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বহাল থাকছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বাতিল প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়ার পর গত বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
বুধবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে কোটা পদ্ধতি না রাখার প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ওই দিন থেকেই মুক্তিযোদ্ধা ও উপজাতি কোটা বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও আদিবাসী ফোরাম।
এতদিন সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাদের সেই আন্দোলন ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ‘কোটাই থাকবে না’। শতভাগ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল বা সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার।
এ সংক্রান্ত আরো খবর
কোটার সংস্কার চেয়েছি, বাতিল নয়
কোটা থাকছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে
/ এআর /
আরও পড়ুন