ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

তোতলামি সমস্যা কাটানোর উপায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৬, ২২ অক্টোবর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

কথা বলতে গিয়ে আটকে যায়, এক কথা বার বার বলে অথবা একটা শব্দ টেনে অনেক লম্বা করে বলতে থাকে, এমন অনিচ্ছাকৃত ভাবকে বলা হয় তোতলামি। কথা বলার এই প্রতিবন্ধকতা এক ধরনের শারীরিক ব্যাধি। এরা মানুষজনের মধ্যে যেতে চান না৷ গুটিয়ে থাকেন৷ তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে তোতলামি ভাব বেশি দেখা যায়।

যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের মুখ থেকে শব্দ বের হতে সময় নেয়৷ একটা শব্দ বা কথা বার বার বেরুতে থাকে৷ তোতলারা সাধারণত ফোনে কিংবা অন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চান না, কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান না৷ তারা একলা পথ চলতে পছন্দ করেন। আবার এই সমস্যার ভূক্তভোগী কিছু কিছু শব্দ বা পরিস্থিতিও এড়িয়ে চলেন৷ 

এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় নিওরোলজিস্টরা বলেন, কথা বলতে গেলে যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রয়োজন যেমন জিব, তালু, গলার পেশি ইত্যাদি ঠিকমতো বশে থাকে না বলে  তোতলাতে হয়। আবার মস্তিষ্কের বেশ কয়েকটি অংশ থেকে মানুষের কথা বলা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এসব অংশে সমস্যা থাকলেও কথা বলা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।

তোতলামি জন্মগত সমস্যা নয়। তোতলামির একাধিক কারণ রয়েছে। জেনেটিক কারণে তোতলামি সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাবা-মায়ের যদি তোতলামি সমস্যা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে সন্তানেরও হতে পারে। তোতলামি নিউরোজেনিক কারণেও হতে পারে। 

ছোটবেলায় যদি কেউ মাথায় গুরুতর আঘাত পায়, তা থেকেও কথা বলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুকে ছোটবেলায় যদি কথা বলার জন্য বেশি চাপ সৃষ্টি করা হয়, সেক্ষেত্রে শিশুটির মধ্যে তোতলামো ভাব আসতে পারে। আবার বেশি বয়সেও তোতলামি সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে তোতলামি সম্পূর্ণ ভালো হয়। তবে চিকিৎসা দেরিতে শুরু হলেও তোতলামো কমানো সম্ভব। তোতলামির একমাত্র চিকিৎসা হলো থেরাপী। থেরাপির তিনটি ভাগ ইন্ডিভিজুয়াল থেরাপি, গ্রুপ থেরাপি এবং কাউন্সেলিং থেরাপি। প্রথম দুটি স্পিচ থেরাপির অংশ।

স্পিচ থেরাপি এমন একটা সিস্টেম যার দ্বারা রেট অব স্পিচ কমানো হয়। এর দ্বারা ব্রিদিং প্যাটার্ন ঠিক করা হয়, মাসুল টেনশন কমানো হয় এবং মনোবল বাড়ানো হয়। পুরো কাজটা মিডভ্যাস পদ্ধতিতে কাজ করে।

এছাড়া তোতলামি কাটানোর উপায়গুলো হলো-
* নিজের তোতলামিকে ভয় না পেয়ে সমস্যাটিকে কীভাবে সামলানো যায় তা শেখা৷ এর জন্য বেশি বেশি কথা বলার চেষ্টা করা, টেলিফোনে কথা বলা, সবার সামনে বক্তব্য রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা।

* দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধাগুলো কীভাবে কাটানো যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়৷ যেসব শব্দ বলতে গেলে আটকে যায়, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে অন্য শব্দ নেওয়া যেতে পারে৷

* কণ্ঠস্বর নরম করে কথা বলা৷ এইভাবে কথা বললে তোতলামিটা থাকে না৷ এ জন্যে ধীরে ধীরে চেপে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা।

* তোতলানোর সময় মস্তিষ্কের এক অংশ অন্য অংশের সমস্যা কাটাতে চেষ্টা করে৷ আর তাই গানের মাধ্যমেও তোতলামিকে আয়ত্তে আনা যায়৷ কেননা সংগীত ও গানের জগৎ থাকে মস্তিষ্কের ডান দিকে৷ আর বাঁ দিকে থাকে কথার এলাকা৷ এজন্য তোতলাদের গান গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না৷ এভাবে নিয়মিত গানের চর্চা করলেও এক সময় তোতলামো সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।

* সন্তানের তোতলামোর উপসর্গ দেখা দিলে আগে বাবা-মা বুঝতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তখনই নিজেদের দ্বারা কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকে যদি নজর না দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় কোন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যে কোন মানসিক চাপ তোতলামি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বাবা-মাকে সব সময় সতর্ক থাকা উচিত।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি