ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

‘তোমরা ভাগ্যবান, এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছো’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৯, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:১৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭২ তম জন্মদিনে আমি তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি। তিনি আরো অনেক দিন বাংলাদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দেবেন সেটাই প্রত্যাশা করি। আমরা জানি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন পরিবারসহ হত্যা করা হয় তখন শেখ হাসিনা (আজকের প্রধানমন্ত্রী) অনেকটা অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন। পরে তিনিই (শেখ হাসিনা) আলাপচারিতায় আমাদেরকে সে সম্পর্কে বলেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী তাঁকে ( শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, তোমার বাবা ১৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। তুমি ওই দিন অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে। ১৫ তারিখে বঙ্গবন্ধুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়।
ওই সময় বঙ্গবন্ধুর জামাতা অর্থাৎ শেখ হাসিনা`র স্বামী বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ছিলেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া তার স্ত্রীকে (শেখ হাসিনা) তাগিদ দিচ্ছিলেন বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য। চলে যাওয়ার সব আয়োজনও তিনি ( ড. ওয়াজেদ মিয়া) সম্পন্ন করে রেখেছিলেন।


তখন শেখ হাসিনা কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন। তিনি তাঁর বাবাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান) জিজ্ঞেস করলেন, `বাবা আমি কি করব? উপাচার্য স্যার আমাকে ওইদিন (সমাবর্তনে) থাকতে বলছেন। অন্যদিকে তোমাদের জামাই বলছে এর আগে চলে যেতে।’ বঙ্গবন্ধু`র একটা বড় গুণ ছিল তিনি আজীবন তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এখানেও বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিলেন। বললেন, `জামাই যা বলে তা কর`।
৩০ জুলাই শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাসহ বিদেশের উদ্দেশে বিমানে চড়লেন। ওইদিন তিনি যদি দেশত্যাগ না করতেন তবে আজকের ইতিহাস অন্যরকমও হতে পারত।


শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। জন্মের পর থেকে তিনি আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রে থাকা একটি পরিবারে বেড়ে উঠেছেন। ৬২, ৬৪, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১- এর ভেতর বাহিরের চিত্র তিনি ভেতরে বাইরে থেকে দেখেছেন। সেই দেখা তাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার বাবার চেতনা তাকে- তার চিন্তার জগতকে অন্য অনেকের চেয়ে প্রসারতা দিয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর লি। যেদিন তিনি দেশে ফিরে যাবেন সেদিন সকালে বললেন, যাওয়ার আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে যেতে পারলে তাঁর সফরটা পরিপূর্ণ হয়।


বিকালে প্রফেসর লির ফ্লাইট। অথচ তিনি তার এ মনোবাসনা জানালেন সকালে। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানালাম। কার্যালয় থেকে জানানো হলো, ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এরপরও তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করবেন। কিছুক্ষণ পরেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন এলো। বলা হলো, দুপুরের পর পর তিনি প্রফেসর লিকে সময় দিয়েছেন। আমিসহ প্রফেসর লি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী খুব আন্তরিকতার সঙ্গে অনেকক্ষণ প্রফেসর লির সঙ্গে কথা বললেন। তিনি অনেক্ষণ সময় দিলেন যা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। প্রফেসর লি তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আলাপ শুরু করলেন।


প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা নিয়ে তার বড় ধরনের পরিকল্পনার কথা জানালেন। আলাপ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা এটাও বললেন, দেশের শতভাগ মানুষকে তিনি স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করতে চান। কীভাবে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন করবেন সে সম্পর্কেও ধারনা দিলেন তিনি। প্রফেসর লির চোখেমুখে তখন আমি মুগ্ধতা দেখতে পাচ্ছিলাম। বৈঠক শেষ হলো। প্রধানমন্ত্রী এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেন। আমিও প্রফেসর লিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। প্রফেসর লি আমায় বললেন, `তোমরা ভাগ্যবান, এমন একজন প্রধানমন্ত্রী তোমরা পেয়েছ যিনি দেশের শিক্ষা নিয়ে অনেক কিছু ভাবেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখেন।` প্রফেসর লি আরো বললেন, ` আমি পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনেককে পেয়েছি যারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারনা রাখেন না`।  প্রফেসর লি চলে গেলেন। কিন্তু আমার কানে প্রায়ই বাজে, ` তোমরা ভাগ্যবান। এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছ...`


**লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শ্রুতি লিখন: আলী আদনান
/ আ আ / এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি