থানায় গণধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
প্রকাশিত : ১৮:০৯, ৫ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৪৯, ৫ আগস্ট ২০১৯
থানায় ধরে নিয়ে এক নারীকে (৩০) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ তদন্ত কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের এসপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
জানা যায়, কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ ম কামাল হোসেইন এবং দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম।
এদিকে, গণধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দুপুরে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ছয় থেকে সাতজন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারধর করে- মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন ওই নারী। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী সাত দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনী চিকিৎসক দ্বারা ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, গত ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানায় উপস্থিত ছিলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আব্দুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন। তবে, ওসি ওসমান গনিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ ও মারধরের অভিযোগ করেছেন ওই নারী।
ভুক্তভোগীর বড় বোন জানান, তাদের বাবার বাড়ি খুলনার ফুলবাড়িগেট এলাকায় এবং তার বোনের শ্বশুর বাড়ি সিলেটে। তাদের মা খুমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাকে দেখতে খুলনায় আসে বোন। সে নিজেও অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) যশোরে ডাক্তার দেখাতে যান। পরদিন শুক্রবার (৩ আগস্ট) খুলনায় আসার সময় ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অপরাধে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনিসহ পাঁচজন পুলিশ সদস্য তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করে। পরে শনিবার (৪ আগস্ট) পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ তাকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
তিনি আরও জানান, আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়ার পর তার বোন জিআরপি থানায় তাকে গণধর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর আদালতের বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
এদিকে ওসি ওসমান গনি ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ওই নারীকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গত ২ আগস্ট আটক করা হয়। সেই মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে ওই নারী ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।
মাদক মামলা থেকে রক্ষা পেতেই ওই নারী এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করেছে বলে দাবি ওসি ওসমান গনির।
এনএস/আরকে
আরও পড়ুন