ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দ. কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হ্যান ডাক সু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির জেরে অবশেষে আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে অভিশংসিত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। এরপর ইউন ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর এখন দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ৩০০ জন আইনপ্রণেতার মধ্যে ২০৪ জন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দেন। ৮৫ জন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন। তিনজন ভোটদানে বিরত থাকেন। আটটি ভোট বাতিল হয়ে যায়।

অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ায় ইউন এখন সাময়িকভাবে বরখাস্ত অবস্থায় থাকবেন। এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত পার্লামেন্টের ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। ইউনের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য আদালতের হাতে ১৮০ দিন সময় আছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক সু অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করবেন।

টেকনোক্র্যাট হিসেবে রাজনীতিতে পদার্পন করা প্রধানমন্ত্রী হ্যানের বেশ সুনাম রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। তার দক্ষতা আর ব্যাপক অভিজ্ঞতা নতুন দায়িত্ব পালনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে ব্যাপক বিভক্তি আর বাগাড়ম্বরের মাঝে দেশটিতে হ্যানকে একজন বিরল কর্মকর্তা হিসেবে মনে করা হয়; যার বৈচিত্র্যময় কর্মজীবন দলীয় সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির গত চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে সরকারি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার হুমকি ও দেশের ধীরগতির অর্থনৈতিক সংকটও মোকাবিলা করতে হবে তাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনসহ দেশের অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টের নীতি সমন্বয়বিষয়ক সচিব, প্রধানমন্ত্রী, ওসিইডির রাষ্ট্রদূত এবং বিভিন্ন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি নেওয়া হ্যানের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং কূটনীতিতে ব্যাপক দক্ষতা রয়েছে। এর পাশাপাশি অত্যন্ত যৌক্তিক ও মধ্যপন্থী আচরণ ও কঠোর পরিশ্রমের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে খ্যাতি রয়েছে। যা তাকে দেশটির রাজনীতিতে অনিবার্য করে তুলেছে।

এর আগে, ২০২২ সালে ইউনের মেয়াদ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন হ্যান। ২০০৭-২০০৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ মু-হিউনের অধীনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

২০২২ সালে হ্যানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে হ্যানের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। হ্যান ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি এমন সময়ে ওয়াশিংটনে কাজ করেছিলেন; যখন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার বহুল আলোচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদনে ক্ষেত্রে কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সৌদি আরবের জায়ান্ট তেল কোম্পানি আরামকোর দক্ষিণ কোরিয়ার পরিশোধন শাখা এস-অয়েলের বোর্ড সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

গত ৩ ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং উদার সাংবিধানিক সুরক্ষার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।

যদিও বিরোধীদের তীব্র আপত্তি ও সংসদে ভোটাভুটির পর মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে সেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্টের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান আছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইউনের নিযুক্ত করা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হ্যান ডাক-সু এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদে অভিশংসিত হলেও জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন ইউন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে না তার।


এমবি


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি