ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

দখল হয়ে যাচ্ছে আড়িয়াল বিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪১, ৩ আগস্ট ২০২৩ | আপডেট: ১৩:১১, ৩ আগস্ট ২০২৩

এক শ্রেণির অসাধু ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট সদস্যরা কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু ভরাটের মাধ্যমে গিলে খাচ্ছে আড়িয়াল বিলসহ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কৃষি জমি। ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে কৃষি ও সরকারি খাসজমিসহ খাল, জলাশয়, পুকুর ভরাটের ফলে আড়িয়াল বিলের পানি আসতে না পারায় বিলের মৎস্য ও শস্য ভাণ্ডার পুরোপুরি হুমকিতে পড়েছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আড়িয়াল বিল প্রমত্তা পদ্মা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার অর্ন্তগত অবস্থিত একটি অবভূমি। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। 

আড়িয়াল বিলের বেশিরভাগ এলাকাই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র থাকে ও বিলে যথেষ্ট পরিমাণ পানি সঞ্চিত থাকতো। বর্ষায় পানিতে টইটুম্বুর থাকলেও শীতকালে এটি বিস্তীর্ণ শস্য ক্ষেতে পরিণত হয়। এখানে শীতকালে নানা ধরনের সবজির চাষ করা হয়, এ বিলের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, বর্ষাকালে পানি থৈ থৈ পালতোলা নৌকা চলাচল, শীতকালে মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের অবাক সৌন্দর্য ও বিশাল আকৃতির মিষ্টি কুমড়া। এই বিলের আয়তন ১শত ৩৬ বর্গকিলোমিটার। 

এখানে ২৮ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিই খাস ও ভেস্টেড প্রপারটি। এতে যে পরিমাণ কৃষি খাদ্য উৎপাদন হত তাতে পুরো দেশের প্রায় আড়াই থেকে তিন দিনের খাদ্য চাহিদার যোগান হত।

উপজেলাসহ আড়িয়াল বিল পাড়ের চুতুর্দিকে যে হাড়ে অবৈধ ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয় কৃষি ও খাস জমি ভরাট হচ্ছে। এতে অল্প সময়ের ব্যবধানে আড়িয়াল বিলসহ উপজেলার বেশিরভাগ অংশের কৃষি জমিই আর থাকবে না বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। অবৈধ ড্রেজারের পাশাপাশি বালু ভর্তি বড় বড় ড্রাম ট্রাক দিয়ে দিবারাত্রি কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে সমান তালে। এই ড্রাম ট্রাক চলাচলে গ্রামীণ কাঁচা পাকা সড়কসহ সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়ক, আন্তঃসড়কগুলোও পড়েছে হুমকির মুখে। নির্মাণ বা সংস্কারে বছর না পেরুতে সড়কগুলো এবড়ো থেবড়ো হয়ে সড়কের পার্শ্ব ভেঙ্গে জনচলাচলেন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও রেলওয়ে নির্মাণে এই অঞ্চলের জমির মূল্যে বেশ কয়েকগুন বেড়ে যাওয়া এখানে গড়ে উঠেছে ছোট বড় শতাধিক হাউজিং কোম্পানির অপরিকল্পিত নগরায়ন। আড়িয়াল বিলে গড়ে তুলেছে রয়েল প্রপারটিস, ধরিত্রী এবং এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ব পাশে ঠিকানা, প্রিমিয়াম ভ্যালি, কৃষ্ণচূড়া নামে পরিবেশের ছাড়পত্রহীন নামে-বে-নামে হাউজিং কোম্পানি।

পরিবেশের ছাড়পত্রহীন এসব হাউজিং প্রকল্পে ছাড়পত্রহীন বহুতল বিল্ডিং উত্তোলনে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

গত (৩১ জুলাই) রোববার আড়িয়ল বিলে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ আবাসন প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

সচেতনমহলের লোকজন মনে করেন, এভাবে যদি আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যেতে থাকে এবং কৃষি জমি অনাবাদি হয়, তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে-যা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বিভিন্ন কোম্পানি প্রায় সারা দেশেই শত শত বিঘা জমি কিনছে। এতে কৃষকরা ভূমিচ্যুত হচ্ছে। কোম্পানিগুলো প্রথম দিকে কৃষি কাজের নাম করে কেনা জমিতে গাছপালা রোপণ বা বপন করে। পরে জমিটিতে মাটি ভরাট করে অন্য কাজে লাগায়।

বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূ-খণ্ড, অথচ জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখনই মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অতি সামান্য। তারপরও যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে এই জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেওয়া একসময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভূ-গর্ভের পানির স্তর অত্যাধিক নিচে নেমে যাওয়ায় এখনই অনেক জায়গায় গভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। খাল-বিল-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে যেতেও পারছে না।

এ অবস্থায় ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সর্বসাধারণের সচেতনতা কৃষি জমি হারানোর সমস্যা সমাধানে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। দরকার সরকারের সঠিক পরিকল্পনা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহসিনা জাহান তোরণ গণমাধ্যমে বলেন, কৃষিজমি ভরাটের ব্যাপারে আমাদের সকলকেই উদ্যোগী হয়ে এটা বন্ধ করতে হবে। শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই আমাদের কৃষি জমিসহ আড়িয়াল বিলের জীববৈচিত্র রক্ষা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ড্রেজার গুলোর সংযোগ বিছিন্ন করেছি এবং কিছু কিছু ড্রেজার মালিকদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করছি। বাকী গুলোর খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ অধিদফতর, মুন্সীগঞ্জ উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আড়িয়াল বিলে এ পর্যন্ত কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমতি আমরা দেইনি। অন্যান্য গুলোর বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি