‘দরবেশ’ একাই লুটেছেন ৫৭ হাজার কোটি টাকা
প্রকাশিত : ১৭:০০, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়ম হয়েছে দেশের বিভিন্ন খাতে। আওয়ামী লুটতরাজকারীদের কালো থাবা পড়েছে সবচেয়ে বেশি দেশের ব্যাংকিং খাতে। জানা গেছে, গত দেড় দশকে ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে একাই ৫৭ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সালমান এফ রহমান। তিনি নামে-বেনামে ব্যাংকসহ ১৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে এ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বৃহস্পতিববার (৯ জানুয়ারি) দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
পত্রিকাটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, কারসাজি এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তাকে ‘আর্থিক খাতের মাফিয়া’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডের কারণে ‘দরবেশ’ উপাধিটি অনেকের কাছে বিদ্রূপাত্মক।
প্রসঙ্গত, সালমান এফ রহমানকে ‘দরবেশ’ বলা হয় তার লম্বা দাড়ি ও সাদা পোশাকের কারণে।
পত্রিকাটি জানায় তাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, ‘দরবেশ’ সালমান এফ রহমান ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং পুঁজিবাজার থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণের নামে নেওয়া এসব অর্থের মধ্যে ২৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা বর্তমানে খেলাপি হয়ে পড়েছে। শুধু তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানই নয়, বেনামি কোম্পানি খুলে সালমান বিভিন্ন ব্যাংককে খালি করেছেন।
আর্থিক খাতের এই ‘দরবেশ’ আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। সালমানের ক্ষমতার প্রভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, যেখানে তিনি ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন। সোনালী, আইএফআইসি, রূপালী, ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংক থেকে তিনি আরও ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ঋণের নামে এসব ব্যাংক লুটে সালমান আর্থিক খাতে বড় ধরনের ক্ষতি করেছেন, তবে হাসিনা সরকারের সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাংক-বিমাসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান পারস্পরিক যোগসাজশে লুট করা হয়। সালমান শুধুমাত্র ব্যাংক লুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ব্যবহার করেছেন। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও সালমানের ব্যাপক প্রভাব ছিল। সালমান যাকে যেই পদে চেয়েছেন, সেখানেই বসিয়েছেন এবং নিজের স্বার্থে সরিয়েও দিয়েছেন।
মোস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লুটপাটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে এবং সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক খাতে গুণগত পরিবর্তন হয়নি।
সালমানের প্রভাবে ধসনামা জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মজিবর রহমান বলেন, ঋণ আদায়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রিসিভার আছেন, তিনিও টাইম টু টাইম সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইনিভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি ভালো কিছু হবে।’
বেক্সিমকোর ঋণের বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শওকত আলী খান বলেন, ‘বেক্সিমকোর কয়েকটি ইউনিটের ঋণ রয়েছে। বড় একটি অংশ খেলাপি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে বাকিগুলো ঋণ পায় না। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
সূত্র: আমার দেশ
এসএস//
আরও পড়ুন