ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোরিত লালবাগ কেল্লা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৬, ২৪ আগস্ট ২০১৮ | আপডেট: ১৩:২৭, ২৪ আগস্ট ২০১৮

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে ব্যস্তমত নগরী ঢাকা এখন বেশ ফাঁকা। রাজধানী এখন পরিণত হয়েছে বিনোদনের নগরীতে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি ও একান্তভাবে সময় কাটাতে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ রয়েছেন গ্রামে। এ সুযোগে ঢাকার স্থানীয়রা পরিবার পরিজন সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে রাজধানীর দর্শনীয় স্থানগুলো। এরমধ্যে লালবাগ কেল্লা অন্যতম। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে মোগল আমলের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন লালবাগ কেল্লায়। ঈদ দিন থেকে শুরু করে প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে লালবাগের কেল্লা।

কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী, প্রতিবছর এখানে গড়ে প্রায় ৩০ লাখ দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। প্রতিদিন লালবাগ কেল্লা দেখতে আসে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী। এর মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ দর্শনার্থী রয়েছে। বিদেশি দর্শনার্থীরা এখানে কেল্লার ইতিহাস জানতে আসেন।

চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। শুরুতেই জানিয়ে রাখি দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড (বিটিসিএল) যৌথভাবে লালবাগ কেল্লায় ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালু করছে। এখানে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করতে দর্শনার্থীদের কোনো পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হবে না।

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে মোঘল আমলে স্থাপিত প্রাচীন দুর্গ হলো লালবাগের কেল্লা। লালবাগ কেল্লা মোগল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন। যেখানে একইসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথরসহ নানান রঙ-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন বৈচিত্র্যময় সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি।

স্থাপনা
লালবাগের কেল্লায় স্থাপনার মধ্যে পরী বিবির সমাধি উল্লেখযোগ্য। এটি মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন। প্রশস্ত এলাকা নিয়ে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-

কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরী বিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে।

সময়সূচি
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রোববার পূর্ণ দিবস, সোমবার অর্ধদিবস কেল্লা বন্ধ থাকে। এছাড়া সব সরকারি ছুটির দিন লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে।

প্রবেশ মূল্য
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০, সার্কভূক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ১০০, বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা। এছাড়া মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা।

লালবাগ কেল্লার ইতিহাস

এটি পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত। আর সে কারণেই এর নাম হয়েছে ‘লালবাগের কেল্লা’। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ। লালবাগের কেল্লার নকশা করেন শাহ আজম।

মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব-এর ৩য় পুত্র আজম শাহ ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সুবেদারের বাসস্থান হিসেবে এ দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। ফলে একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।

নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তবে শায়েস্তা খানের কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ দুর্গ অপয়া মনে করা হয় এবং শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। এই পরী বিবির সাথে শাহজাদা আজম শাহের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে রাজকাজ পরিচালনা করতেন।

১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যাবার সময় দুর্গের মালিকানা উত্তরাধিকারীদের দান করে যান। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে।

প্রথমে এর নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। পরে লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
টিআর/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি