দাবদাহে জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে রাজশাহী, বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়
প্রকাশিত : ১৫:৫৬, ১৯ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ১৬:০৭, ১৯ এপ্রিল ২০২৩
টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহে পুড়ে যাচ্ছে রাজশাহী। ঠাঠা রোদে ধানক্ষেতসহ জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে যেন সবই। বৃষ্টির না হওয়ার ফলে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ সংকট পৌঁছেছে চরমে।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান,আজ বুধবার রাজশাহীতে বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে দুপুর ২টায় ৪২ দশমিক ৪ এবং দুপুর ১টায় ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেল ৩টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১৬ ভাগ।
গতকাল মঙ্গলবার নয় বছরের মধ্যে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। গত সোমবার ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কামাল উদ্দিন বলেন, আরও দুই থেকে তিন দিন এ অঞ্চলে চলবে এমন তাপপ্রবাহ। চলতি মাসের ২২ তারিখের আগে বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, গেল ১৫ দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে চরম বিপদে পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। তাপপ্রবাহ ছাড়াও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না তারা। এতে বিঘার পর বিঘা ধান গাছ নষ্টের শঙ্কায় মাথায় হাত চাষিদের। তাপমাত্রার হঠাৎ ওঠানামায় নানা রোগ-বালাইয়ের সংক্রমণের শঙ্কা ছড়িয়েছে তাদের মনে।
কৃষকরা বলছেন, এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেড় থেকে দুগুণ পর্যন্ত বেশি সেচ প্রয়োজন। কিন্তু বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ দিনের বেলায় থাকছে বন্ধ। কারণ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে না। আবার রাতে-দিনে ৬ ঘণ্টার লোডশেডিংও সেচে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
অপরদিকে, গেল ১০ দিন ধরে চেষ্টা করেও বোরো ধানে সেচের পানি দিতে পারেননি রাজশাহীর পবার মদনহাটি গ্রামের চাষি সাদিকুল ইসলাম। তার ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কেবল সাদিকুলেরই নয়, জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে এ অঞ্চলের হাজারও কৃষকের।
টানা তাপপ্রবাহের কারণে উৎপাদনে সামান্য প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে ঘাটতির শঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল লতিফ।
তিনি বলেন, ‘আমরা শক্তভাবে মনিটরিং করছি। আমরা সবাই মাঠে আছি, কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে এই সময় ধানের গোড়ায় দুই ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে পারে। এছাড়াও আম ও লিচু চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে গোড়ায় পানি দেয়াসহ গাছে পানি স্প্রে করার।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, এ বছর জেলায় ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। আর জেলায় এবার ১৯ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে আম এবং প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আছে লিচু চাষ হয়েছে।
এদিকে, গরম থেকে রেহায় পেতে রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী তেরখাদিয়া বিভাগীয় স্টেডিয়ামে এই নামাজের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি রাজশাহী জেলা শাখা। এতে ইমামতি করেন ইমাম সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সাধারাণ সম্পাদক আফজাল হোসেন হামিদী।
নামাজ শেষে আফজাল হোসেন হামিদী বলেন, এ নামাজ আমাদের কোন ব্যাক্তিগত কারণে নয়। বৃষ্টির জন্য এ নামাজ আদায় করা হয়েছে। আল্লাহর কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে এই সালাদ আদায় করেছি। পাশাপাশি নামাজ শেষে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছি।
এএইচ
আরও পড়ুন